রাইয়্যান ইসলাম রকিব
ভাংবাড়ী বগুড়া পাড়া গ্রামের একটি ছোট্ট মাঠ।বিকেল হলেই সেখানে জমে উঠত তরুণদের আড্ডা।প্রথমে কিছু গল্পগুজব দিয়ে শুরু,তারপর ধীরে ধীরে হট্টগোল,রাস্তায় দাঁড়িয়ে নারীদের দিকে অশালীন মন্তব্য ছোঁড়া,বা কোনো নির্দিষ্ট কাজ না থাকা-সব মিলিয়ে এলাকাবাসীর কাছে এই তরুণদের নামই হয়ে গিয়েছিল “সমস্যা”।তাদের কোনো লক্ষ ছিল না,স্বপ্ন ছিল না।প্রতিদিন বিকেলটা যেন হতো কেবল সময় নষ্টের উপলক্ষ।
ঠিক এমন এক সময়,হঠাৎ করেই পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করল।এলাকায় প্রবেশ করল ইএসডিও, এডুকো বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন।তারা বুঝতে পারলো,এই তরুণরাই একদিন হতে পারে সমাজের চালিকাশক্তি-যদি তারা সঠিক পথ দেখাতে পারে।
তাই এক সাহসী উদ্যোগ নেওয়া হলো-প্রতিষ্ঠা করা হলো “ভাংবাড়ী বগুড়া পাড়া কিশোর-কিশোরী ও যুব ক্লাব”। শুরুটা ছোট হলেও পরবর্তীতে সদস্য সংখ্যা হয় ৬১ জন। প্রথমদিকে অনেকেই হাসাহাসি করেছিল,বলেছিল “ওরা বদলাবে না”।কিন্তু সময় সবকিছু বদলে দেয়,যদি তাতে ভালো কিছু যুক্ত হয়।
ইএসডিও ক্লাবটিকে সক্রিয় করে তোলে খেলার সামগ্রী দিয়ে-ক্রিকেট ব্যাট-বল,ফুটবল,ভলিবল,লুডু,দাবা,রেকেট আরো অনেক কিছু।শুধু খেলা নয়,সঙ্গে পাঠানো হয় নানা শিক্ষামূলক বই।ক্লাবের ঘরটায় সাজানো হয় ছোট্ট একটা পাঠাগার।বিকেল হলেই এখন সেখানে ভিড় জমে-কেউ ব্যাট হাতে মাঠে,কেউ দাবার বোর্ডে চোখ আটকে রাখে, কেউ বা বইয়ের পাতায় ডুব দেয়।
এখন সেই আগের ছেলেরা আর রাস্তায় বসে নারীদের বিরক্ত করে না,তারা খেলার মাঠে ঘাম ঝরায়,গল্প করে বইয়ের পাতায়।যে সমাজ একসময় তাদের দেখে ভয় পেত,এখন সেই সমাজ তাদের দেখে গর্ব করে।
ক্লাবের সভাপতি বলে,
“আগে বিকেল মানেই সময় নষ্ট করা,এখন বিকেল মানেই কিছু শেখা,কিছু খেলা,কিছু গড়া।”
সবচেয়ে বড়ো কথা,এই ক্লাব এখন শুধু তরুণদের ঘর নয়, ভাংবাড়ী বগুড়া পাড়া গ্রামের গর্ব।অনেক মা-বাবা এখন নিজের সন্তানকে এই ক্লাবে পাঠাতে গর্ব বোধ করেন। গ্রামের নারীরাও এখন নির্বিঘ্নে হাঁটে,কারণ তারা জানে এই যুব ক্লাবের সদস্যরা এখন সমাজের রক্ষক,ভক্ষক নয়।
একদিন যে মাঠে ছিল অলসতা আর অপচয়ের ইতিহাস, আজ সেই মাঠ জেগে উঠেছে নতুন প্রাণে,নতুন আলোয়।
“ভাংবাড়ী বগুড়া পাড়া কিশোর-কিশোরী ও যুব ক্লাব” কেবল একটি ক্লাব নয়,এটি এক আলোকবর্তিকা-যা প্রমাণ করে,সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে যে কোনো তরুণ অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরে আসতে পারে।