1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

ভালোবাসার সমীকরণ — জাকির আলম

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৫৮ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

ভালোবাসার সমীকরণ (৩য় পর্ব)

জাকির আলম

চৌহালী, সিরাজগঞ্জ।

 

ধীরে ধীরে শ্রাবণ মোনার প্রেমে হাবু-ডুবু খেতে থাকে। আর মোনাকে নিয়ে লিখতে থাকে একের পর এক ভালোবাসার কবিতা। বোধ করি মন থেকে কাউকে ভালো না বাসলে কখনোই ভালো কোনো কবিতা লেখা আদৌ সম্ভব নয়। কিন্তু মোনার সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। মোনা তার স্বপ্নের মানুষকে খুঁজে পেতে সদা তৎপর। সেদিক থেকে শ্রাবণের ভালোবাসা তার কাছে গৌণ ব্যাপার। কিন্তু শ্রাবণ তবুও আশাবাদী একদিন সে মোনাকে জয় করতে পারবে। সেই বিশ্বাসে শ্রাবণ পথ চলতে থাকে। শ্রাবণও হেরে যাওয়ার পাত্র নয়।

 

দেখা যাক শেষ পর্যন্ত শ্রাবণ মোনাকে জয় করতে পারে কিনা। শ্রাবণও সদা তৎপর মোনার মনে প্রেমিকের আসন পেতে। রাত তখন বারোটা। চারদিকে নীরবতার হাতছানি। মোনাকে নিয়ে শ্রাবণ একের পর এক কবিতা লিখে চলেছে। মোনার মন জয় করার অন্যতম হাতিয়ার শ্রাবণের কবিতা। এই বিশ্বাসে শ্রাবণ লিখতে থাকে হাজারো কবিতার পঙক্তিমালা। শেষ পর্যন্ত মোনা শ্রাবণের ভালোবাসায় সাড়া দিবে কিনা প্রিয় পাঠক সাথে থাকুন আর মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন ধারাবাহিক পর্বগুলো। এমতাবস্থায় শ্রাবণের ফোনে মোনার ফোন আসে।

মোনা : কি গো কবি সাহেব এতো রাতে এখনো জেগে কেন ? ঘুমাতে হবে না !

শ্রাবণ : তোমার প্রেমে পড়ার পর থেকে দু’চোখে আর ঘুম আসেনা। সারাক্ষণ তোমার ভাবনায় বিভোর থেকে সময় কাটিয়ে দেই। ভাবতে ভালো লাগে তোমাকে। তাইতো কবিতার পঙক্তিতে তোমাকে সাজাই ভীষণ যত্ন সহকারে।

মোনা : এখনো কি তুমি কবিতা লিখতেছো নাকি ?

শ্রাবণ : হুমমম। শুনবে কবিতা…?

মোনা : ( শ্রাবণের কোনো কবিতাকে মোনা এড়িয়ে যেতে পারে না। তাই শ্রাবণের কবিতা শুনতে ভীষণ আগ্রহ তার। তারপর যদি হয় তাকে নিয়ে লেখা কোনো কবিতা তাহলে তো কথাই নাই।) হুমমম অবশ্যই, শুনাও তাহলে তোমার কবিতা…

শ্রাবণ : ওকে তাহলে শোনো…

 

মোল্লাবাড়ির মেয়ে তুমি বেহেস্তি বাগের ফুল

বিভোর মনে ছুঁয়ে দেখি তোমার মাথার চুল।

পরীর চেয়েও সুন্দর তুমি যেন স্বর্গ হুর

আঁধার রাতে তোমার নামে জ্বলে ঈশের নূর।

 

মায়াবতী আঁখি যুগল সোহাগ প্রবণ হাত

তোমার কোলে গর্দান রেখে কাটিয়ে দেই রাত।

জাজ্বল্যমান বদন তোমার মধু মাখা হাসি

অমিয় রসের কথামালা যেন কৃষ্ণের বাঁশি।

 

কাঁচা সোনা দেহের গড়ন শিশির ভেজা ঠোঁট

অনাদিকাল তোমার সাথে হৃদয় বাঁধা জোট।

ফুলশয্যা মধুবনে হারিয়ে যাওয়ার সাধ

বুকের মাঝে রেখে তোমায় কাঁধে রাখবো কাঁধ।

 

তীক্ষ্ণ শিফা নদীর মতো প্রখর তোমার নাক

গোঁফের নিচে ভেজা ঠোঁটে হাজার ফুলের বাগ।

বুকের মাঝে ডালিম ফল পেটে নির্ঝর নাভি

তার অতলে বয়ে গেছে ত্রিবেণীর মহানদী।

 

মোনা : তোমার কোনো কবিতা শোনার পর আর কিছু বলার থাকে না। এতো সুন্দর করে তুমি লিখো ! কিভাবে সম্ভব এতো সুন্দর কবিতা লেখা !  আমাকেও কবিতা লিখতে শিখিও তো…

শ্রাবণ : কবিতা শেখানোর বিষয় নয়। মন থেকে যা আসে তাই ছন্দে রূপ দেওয়ার নামই কবিতা।

মোনা : হুমমম… তোমার কবিতার প্রেমে পড়ে গেছি গো। (একথা শোনার পর শ্রাবণ মনে মনে খুব খুশি হলো। হয়তো এক সময় তার প্রেমেও পড়ে যাবে মোনা। এটা তার অটল বিশ্বাস। অধীর ধৈর্য নিয়ে সে মোনাকে ভালোবাসতে থাকে। মোনাকে সে কিছুতেই হারাতে  পারবে না। বরং বুকে আগলে রেখে মোনাকে ভালোবাসতে থাকে শ্রাবণ।) আমাকে নিয়ে এতো সুন্দর কবিতা লেখার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ কবি সাহেব… তবে শেষের দিকে ভাষা একটু খোলামেলা। বাকি সব ঠিক আছে। সত্যি অনেক সুন্দর।

শ্রাবণ : হুমমম তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ। তা তুমিও এতো রাতে জেগে কেন ?

মোনা : কেন যেন মনটা আজ ভালো নেই। কিছুতেই চোখে ঘুম আসছে না। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। কিছুই ভালো লাগছে না গো।

শ্রাবণ : আহারে… হঠাৎ এমন হলো কেন ?  আগে তাে কখনো হয়নি এমন !

মোনা : জানিনা…বাকি রাতটুকু তোমার সাথে ফোনে কথা বলে কাটিয়ে দিবো। তোমার সমস্যা হবে না তো ?

শ্রাবণ : আরে কী বলো !  মোটেও না। বরং তোমার সাথে কথা বলতে পারলে আমার ভীষণ  ভালো লাগে। মনটা সবসময় তোমার সাথে গল্প করতে চায়। তোমার পাশে বসে মন ভরে তোমাকে দেখতে চায়।

মোনা : (কিন্তু এবার একটু লজ্জা পেলো মোনা। কিছু সময় নীরব থেকে শ্রাবণের কথার জবাব দিলো।) একটা কষ্টের কবিতা শোনাও কবি সাহেব…খুব শুনতে মন চাচ্ছে কষ্টের কোনো কবিতা…

শ্রাবণ : ওকে ঠিক আছে… শোনো তাহলে…

চরম বিশ্বাসে একদা যার হাত ধরেছিলাম,

সময়ের ব্যবধানে সেও চলে গেছে।

হদয়ের সবটুকু ভালোবাসা সঁপে দিয়েও

তাকে আমি ধরে রাখতে পারিনি।

পারিনি তার উপচানো বুকে মাথা রেখে

প্রমত্ততার মাঝে মিলিয়ে যেতে।

এক বুক স্বপ্ন নিয়ে যাকে আকড়ে ধরেছিলাম,

আমি হেরে গেছি তার অবহেলার কাছে।

নিদারুণ কষ্ট সয়ে তার কাছাকাছি থেকেও

কখনো আমি তার প্রিয়জন হতে পারিনি।

পারিনি পূর্ণ ভালোবাসার মায়াজালে তাকে জড়িয়ে

ব্যাকুল চিত্তে উষ্ণতার সোহাগ বুলাতে।

মন খারাপের রাতগুলো যার সাথে থাকতে চেয়েছিলাম,

তার কাছে আমি ভীষণ ভাবে উপেক্ষিত।

গভীর প্রণয়ের মাঝে অহর্নিশ ডুবে থেকেও

আচ্ছন্নতার জলে তাকে ভাসাতে পারিনি।

পারিনি হাতে হাত রেখে নিরুদ্দেশের যাত্রাপথে

নির্ভয়ে তার সাথে হারিয়ে যেতে।

মোনা : খুব ভালো লাগলো। তোমার সব কবিতাই আমার ভীষণ ভালো লাগে। তো এটাও কি আমাকে নিয়েই লিখেছো নাকি… হা হা হা…

শ্রাবণ : হুমমম। তা নয় তো কি ! তুমি ছাড়া আমার ভাবনায় আর কিচ্ছু নেই। আমার সব কবিতা শুধু তোমাকে ঘিরে।

মোনা : কী সাংঘাতিক কথারে বাবা ! আমাকে এতো ভালোবাসতে গেলে কেন ?

শ্রাবণ : ভালোবাসতে কোনো কারণ লাগে না। সবটাই মনের ব্যাপার। আর তোমাকে তো আমি অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি। কিন্তু কষ্টের বিষয় হলো আমার ভালোবাসায় তোমার কোনো ভ্রক্ষেপ নেই।

মোনা : আহারে…এতো প্রেম কোথা থেকে আসে শুনি ?

শ্রাবণ : ভালোবাসা খোদা প্রদত্ত। যা সবাইকে বাসা যায় না। কেন জানিনা তোমাকে এতো ভালোবাসি ! শুধু জানি তোমাকে ছাড়া আমি অসহায়। আমার পৃথিবী তুমি !

মোনা : থাক থাক আর বলো না। সুন্দর একটা মেয়ে দেখে তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নাও। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।

শ্রাবণ : সেটা পারলে তো কবেই বিয়ে করতাম। পারিনা বলেই তো তোমার প্রেমে হাবু-ডুবু খাচ্ছি।

মোনা : হায় রে তোমার মাথা গেছে ! তুমি আমাকেও পাগল বানিয়ে ছাড়বে দেখছি। তো আমার মাঝে এমন কী আছে যে আমাকে তোমার জীবনে এতো প্রয়োজন ? এতো ভালোবাসতে হবে !

শ্রাবণ : বলতেই যদি হয় তাহলে শোনো… প্রথমত তুমি অনেক বেশি সুন্দর। সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলতে পারো। তোমার হাসিটা ভীষণ মায়াবী। তোমার মন মানসিকতা অনেক ভালো। চোখের চাহনিতে কেমন যেন একটা মোহনীয় জাদু আছে। নাকটা পাখির ঠোঁটের মতো তীক্ষ্ণ। সুবাসিত চুলের গন্ধে দিশেহারা আমি। মন চায় তোমার সাথে হাজার জনম কাটিয়ে দিতে। এমন ইত্যাকার বিষয় আমাকে তোমার প্রেমে পড়তে বাধ্য করছে। তোমার কথা না ভেবে আর থাকতে পারিনা গো। আমার কলিজার টুকরা তুমি। তোমাকে ছাড়া আমার নিঃশ্বাস নিতেও ভীষণ কষ্ট হয়।

মোনা : (মোনা নীরবে শ্রাবণের কথা মনোযোগ সহকারে শুনে চলেছে…)  এতো ভালোবাসো আমাকে তুমি ? তোমার এই ভালোবাসা এড়িয়ে যাওয়া অনেক কঠিন। তবুও ভাগ্যের উপর সব ছেড়ে দিলাম। ভাগ্য ভালো হলে আমাকে তুমি পেতেও পারো।

শ্রাবণ : কোনোদিন আমাকে ছেড়ে চলে যেওনা। তুমি দূরে চলে গেলে সত্যি বাঁচবো না আমি।

মোনা : তোমার জীবন সাথী হতে পারবো কিনা জানিনা। তবে তোমার বন্ধু হয়ে আজীবন তোমার পাশে থাকবো তোমার সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়ে, কথা দিলাম। এই দেখো ফোনে কথা বলতে বলতে মসজিদে ফজরের আজান হচ্ছে। এবার তাহলে ফোন রাখি। নামাজ পড়বো। তুমিও নামাজ পড়। পরে কথা হবে আবার। এখনকার মতো তাহলে ফোন রাখি। ভালো থাকো। বাই…

শ্রাবণ : ওকে তুমিও ভালো থাকো সুন্দরী প্রিয়তমা । বাই…

এমতাবস্থায় দু’জনেই ফজরের নামাজের জন্য ফোন কেটে দিলো। কিন্তু তাদের প্রেম কাহিনি আরো ঘনীভূত হতে থাকলো। শেষ পর্যন্ত কি ঘটে সেটাই দেখার বিষয়। আসুন পাঠক আমরাও তাদের এই গল্পের শেষ পর্যন্ত থেকে অপেক্ষা করি আসলে কী ঘটে…আদৌ মোনাকে শ্রাবণ জয় করতে পারে কিনা…

 

( চলবে…)

 

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park