প্রবন্ধ: সাহিত্যের বর্ণনামূলক গদ্যকে প্রবন্ধ বলা হয়। প্রবন্ধ সাহিত্যের অন্যতম একটি শাখা। প্রবন্ধ শব্দের প্রকৃত অর্থ প্রকৃষ্ঠ রূপে বন্ধন। প্রকৃষ্ঠ বন্ধন বিষয়বস্তু ও চিন্তার ধারাবাহিক বন্ধনকে বোঝায়।
গল্প: গল্প বলতে বোঝানো হয় কোনো একটি ঘটনার বা সম্পর্কযুক্ত একাধিক ঘটনার সমন্বিত বর্ণনা। গল্প গদ্যসাহিত্যের একটি সমৃদ্ধ শাখা।
উপন্যাস: উপন্যাস হলো গদ্যে লেখা দীর্ঘ বর্ণনাত্মক কথাসাহিত্যে। উপন্যাস লেখার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম বা কাঠামো নেই। তবে উপন্যাস ছোট গল্পের তুলনায় বৃহদাকার হয়ে থাকে।উপন্যাস হল গদ্যে লিখিত এমন এক বিবরণ বা কাহিনী যার ভেতর দিয়ে মানব-মানবীয় জীবনযাপনের বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়ে থাকে।
গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ এগুলো সাহিত্যের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা । এটি উপন্যাসের মধ্যে কিছুটা মিল রয়েছে। কিন্তু সে হিসেবে প্রবন্ধ সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।গল্পের পরিসর হবে উপন্যাসের চেয়ে ছোট।
একজন লেখক তার গল্পে পরিকল্পিত যেকোনো একটা বিষয় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন কিন্তু উপন্যাসে বহুমুখী প্রসঙ্গ ফুটিয়ে তুলেন বৃহৎ পরিসরে।উদাহরণস্বরূপ বাংলা নাটক ও সিনেমা কথা বলাই যায় । বাংলা নাটক এর কাহিনী ও পরিসর সিনেমার তুলনায় অনেক ছোট হয় ।
নাটকের পরিসর সর্বোচ্চ ১ ঘন্টা, সাধারণত ৪০ মিনিট এর হয়ে থাকে। আর সিনেমার গল্প ও পরিসর এতো বড় হয় যে ২.৩০ ঘন্টা বা ৩.০০ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায় ।গল্প লিখতে অনেক অল্প সময় লাগে আর উপন্যাস লিখতে অনেক বেশি সময় লাগে ।
গল্প লেখা অনেক সহজ কিন্তু উপন্যাস লেখা গল্পের তুলনায় যথেষ্ট কঠিন। উপন্যাসের অনেকগুলো উপাদান আছে যেমন: প্লট বা আখ্যান, চরিত্র, সংলাপ, পরিবেশ বর্ণনা, লিখনশৈলী বা স্টাইল, লেখকের সামগ্রিক জীবন – দর্শন।
উপন্যাস বিভিন্ন রকমের হতে পারে,যেমন: সামাজিক উপন্যাস, ঐতিহাসিক উপন্যাস , মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস, রাজনৈতিক উপন্যাস, আঞ্চলিক উপন্যাস, রহস্যোপন্যাস , চেতনাপ্রবাহ রীতির উপন্যাস, আত্মজৈবনিক উপন্যাস , রূপক উপন্যাস।
আর গল্প একটি নির্দিষ্ট ঘটনা বা কাহিনীর উপর ভিত্তি করে সল্প পরিসরে বানানো হয় ।অনেক বৈশিষ্ট্য এক থাকলেও উপন্যাস এবং গল্পের মধ্যে কিছু বড়ো ধরনের পার্থক্যও রয়েছে। গল্প ও উপন্যাসের মধ্যে কিছু মিল থাকলেও প্রবন্ধ এই দুটো থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি জিনিস।
প্রবন্ধের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Essay। প্রবন্ধের অপর নাম হলো রচনা। প্রবন্ধ প্রধানত তিনটি অংশে বিভক্ত । যথা :
১. ভূমিকা
২. মূল অংশ
৩. উপসংহার।
ভূমিকা : প্রবন্ধ বা রচনার প্রারম্ভিক অংশ হলো ভূমিকা। এটি রচনার প্রবেশদ্বার। একে সূচনা, উপক্রমনিকা, প্রস্তাবনা, আরম্ভ, উপস্থাপন, মুখবন্ধ, সূত্রপাত বা প্রাক – কথনও বলা চলে।
এতে যে বিষয় সন্বন্ধে রচনা লেখা হয় তার অভ্যাস এবং সংক্ষিপ্ত ধারণা প্রদানের চেষ্টা করা হয়। ভূমিকা হৃদয়গ্রাহী হলে পাঠক পুরো প্রবন্ধ পাঠে আকর্ষিত হয়।
মূল অংশ: ভূমিকার পরে প্রবন্ধের মূল বিষয়ের আলোচনা আরম্ভ হয়। বিষয়বস্তু বা মূল বক্তব্য রচনার প্রধান অংশ । মূল বক্তব্য পরিবেশনের পূর্বে বিষয়টিকে প্রয়োজনীয় অনুচ্ছেদে ভাগ করে নিতে হয়।
অনুচ্ছেদগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সংগতিপূর্ণ উদাহরণ, উপমা, উদ্বৃতি মূল অংশে প্রয়োগ করা যায়। এভাবে আলোচনার বিস্তার ঘটিয়ে মূলভাবটি সিদ্ধান্তমূলক সমাপ্তির দিকে এগিয়ে নিতে হয়।
উপসংহারঃ সিদ্ধান্তমূলক সমাপ্তির অংশ উপন্যাস। একে পরিশেষ, পরিণাম, নিষ্পত্তি, নির্বাহ, অবসান বা সারসংক্ষেপও বলা চলে।