1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

অপেক্ষার শেষ নিঃশ্বাস  

  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ৩ মে, ২০২৫
  • ৫৮ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে
লেখক :  আয়াত আজাদ 
সেপ্টেম্বরের দুপুর, কলেজের মাঠের ওপর ছায়া আর রোদের নকশা। গাছের পাতায় সূর্যের ছায়া পড়ে জ্বলজ্বল করছে, বাতাসে ভাসছে শিউলির ঘ্রাণ। সেই সবুজ ছায়ার নিচে দাঁড়িয়ে সাব্বির, তার হাতের মধ্যে ধরা একটি ছেঁড়া খাতা, যেখানে সে প্রায় প্রতিদিনই ওরুকে নিয়ে কবিতা লিখে। দূরে সিঁড়ি দিয়ে নামছে ওরু—চুলে সানগ্লাস, হাতে ফোন, হেসে হেসে বান্ধবীদের সঙ্গে গল্প করছে। সাব্বিরের চোখ আটকে আছে, সে মনে মনে ভাবছে, “তুই জানিস না, ওরু, তুই আমার সমস্ত সকাল-সন্ধ্যা, তুই আমার প্রতিটি নিশ্বাসে লুকিয়ে থাকা নাম।”
একদিন লাইব্রেরিতে বসে সাব্বির যখন বইয়ে মুখ গুঁজে আছে, হঠাৎ পাশে বসে ওরু। সাব্বিরের বুকের ধকধক বেড়ে যায়, হাত থেকে বই পড়ে যায়। ‘তুই না ভীতু ছেলে একদম!’ হেসে বলে ওরু। সেই হাসির মধ্যে এক অদ্ভুত উষ্ণতা, যেন শীতের সকালে মিঠে রোদ। সেই মুহূর্তে, সাব্বির প্রথমবার ভাবে, সাহস পেলে বলবে—তুই আমার জীবনের গল্পের প্রথম আর শেষ পাতা।
দিনে দিনে বন্ধুত্ব বাড়ে। কিন্তু ওরু স্পষ্ট করে দেয়—‘আমার ব্রেকআপ হয়েছে, আর রিলেশন করব না।’ একদিন, সাহস করে, নরম কণ্ঠে সাব্বির বলে, ‘আমি তোকে ভালোবাসি, ওরু।’
ওরু হেসে বলে, ‘তুই পাগল! আচ্ছা শোন, যদি আমার ফ্যামিলিকে রাজি করতে পারিস, আর চার বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকিস, তখন দেখা যাবে।’ সেই কথায় সাব্বিরের চোখে আগুনের মতো জ্বলতে থাকে আশার আলো। চার বছর—হ্যাঁ, সে পারবে। ভালোবাসা তো সহজ জিনিস নয়, তা পেতে যুদ্ধ করতে হয়।
সাব্বির প্রতিদিন ওর জন্য কিছু না কিছু করে। ক্লাসের ফাঁকে ওর জন্য চা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, রাতে ওর ছবির দিকে তাকিয়ে কবিতা লেখে, মেসেঞ্জারে শুভ সকাল পাঠায়, যদিও জানে উত্তর আসবে না। বন্ধুরা হাসাহাসি করে, বলে, ‘তুই বোকার মতো কাজ করছিস।’ কিন্তু সাব্বিরের মনে হয়, “ভালোবাসা কি বোকার কাজ নয়? যদি হিসাব-নিকাশ করি, তাহলে আর ভালোবাসা থাকে কোথায়?”
ওরুর জীবনে আসে আদনান। রঙিন, আত্মবিশ্বাসী, আধিপত্যশীল ছেলে। ওরু ধীরে ধীরে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়, আর আদনান বুঝতে পারে, তার পথে বাধা একটাই—সাব্বির। ‘তুই ওর কাছ থেকে দূরে থাকবি,’ আদনান হুমকি দেয় ওরুকে। প্রথমে দ্বিধায় থাকে ওরু, কিন্তু প্রেমের মোহে মাথা নোয়ায়। আর সেই সিদ্ধান্তেই শুরু হয় সবকিছুর শেষের শুরু।
শীতের রাতে সাব্বির কলেজ থেকে ফিরছে, হাতে তার সেই পুরনো খাতা, তাতে লেখা একগুচ্ছ কবিতা। হঠাৎ অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসে দুজন লোক, মুখ ঢাকা, হাতে ছুরি।
‘তোর দরকার নেই এখানে,’ ফিসফিস করে এক জন। সাব্বির কিছু বোঝার আগেই ছুরির ফলা বুকের ভেতর। ধীরে ধীরে মাটিতে পড়ে যায় সে, দূরে ঝাপসা চোখে দেখতে পায় এক ছায়া, ওরু…?
তার শেষ নিঃশ্বাসে কেবল এক শব্দ, ‘পাগলি…’ তারপর সব অন্ধকার।
ওরু বিয়ে করে আদনানকে। প্রথমে সবকিছু ঠিক থাকে, কিন্তু ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে সন্দেহ, রাগ, গালাগালি, নির্যাতন। রাতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখ দেখে ওরু কাঁদে, মনে পড়ে যায় সেই এক ছেলেকে, যে নিজের থেকে বেশি ভালোবেসেছিল, যে কখনো কিছু চায়নি, কেবল পাশে থাকতে চেয়েছিল।
‘আমি কী করেছি?’ ফিসফিস করে আয়নার সামনে, একরাশ অশ্রু নিয়ে।
এক বিকেলে, সূর্য অস্ত যাচ্ছে, চারপাশে বাতাসে শোঁ শোঁ শব্দ, ওরু একা কবরখানায় আসে। সাব্বিরের কবরে হাত রাখে, কাঁপা কণ্ঠে ফিসফিস করে, ‘সাব্বির, আমি তোকে শেষ করে ফেলেছি… আমি তোকে পাইনি, আমি তোকে নিজের হাতেই মেরে ফেলেছি।’
তার চোখের জল মাটির ভেতর ঢুকে যায়, আর সে অনুভব করে—মাটির নিচ থেকে যেন একটা নিঃশ্বাস ভেসে আসছে।
হাওয়ার ফিসফাসে ওরু শুনতে পায়, ‘ভালোবাসা কি মরে, ওরু? আমি তো তোর ভেতরেই আছি… তোর প্রতিটি নিশ্বাসে, তোর প্রতিটি কান্নায়।’ সে কেঁপে ওঠে না, বরং মাথা নিচু করে কাঁদে। সে জানে, তার পাপের বোঝা সে কোনোদিন নামাতে পারবে না।
রাতে বিছানায় শুয়ে, পাশে শূন্যতা। ওরু হাত বাড়ায়, কিন্তু সেখানে কোনো উষ্ণতা নেই, কেবল ঠান্ডা বাতাস। চোখ বুজলে মনে হয়, সাব্বির তার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, ফিসফিস করে বলছে, ‘পাগলি…’ সাব্বির যেন হয়ে যায় ওর প্রতিদিনের ভাবনার খোরাক। খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে আনমনে বসে থাকে ওরু। মাস দুয়েক পর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ যেন মহা অসুখ, দুরারোগ্য ব্যাধি।
হাসপাতালের কক্ষে নীরবতা। কেবল মনিটরের টিকটিক শব্দ, আর জানালার পর্দায় হালকা বাতাসের দোলা। ওরু নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট পাচ্ছে, তার গায়ে লেগে আছে ক্লান্তির ছায়া। বুকে এক অদৃশ্য ব্যথা, যা ডাক্তাররা মাপতে পারে না—এটা শরীরের নয়, আত্মার।
চোখ বন্ধ করলে ও দেখতে পায় সেই পরিচিত ছায়া। সাব্বির… সাব্বির… চুলে হালকা বাতাস, পরনে সাদামাটা শার্ট, চোখে সেই একরাশ শান্তি আর অভিমান মেশানো হাসি। সে এগিয়ে আসছে, হাত বাড়িয়ে বলছে, ‘পাগলি… আর কত কাঁদাবি আমাকে?’
ওরুর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে এক ফোঁটা অশ্রু। ‘তুই… এখানে?’ কণ্ঠ ফাটছে, কিন্তু অন্তর শূন্য নয়, ভরে উঠছে এক অপার্থিব উষ্ণতায়।
‘তুই জানিস, প্রতিটি রাতে আমি তোর কাছে বসে থাকি, তোর স্বপ্নের ভেতর। তুই তো ভাবিস আমি মরে গেছি… অথচ আমি মরি নি, ওরু। তুইই ছিলি আমার শেষ কবিতা, আর আমি তোর শেষ আশ্রয়।’
ওরু হাত বাড়ায় বাতাসে, ফিসফিস করে, ‘আমি ক্লান্ত, সাব্বির… এবার তুই নে আমায়…’
কোনো উত্তর নেই, কেবল মনে হয়, বাতাসে এক জোড়া হাত তার কাঁধে রাখছে, আর কানে ফিসফিস—‘এবার আসিস, ওরু… আর দেরি নয়।’
মনিটরের শব্দ ক্ষীণ হয়, চারপাশে নিঃশব্দ। হাসপাতালের বাইরে রাতের আকাশে হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে, প্রতিটি ফোঁটায় যেন এক-একটি না বলা কথা। ওরু শেষ নিঃশ্বাসে একবার মৃদু হাসে, যেন অনেক দূরের এক ভালোবাসার ছায়ায় হারিয়ে যাচ্ছে।
হাসপাতালের জানালার কাচে এক মুহূর্তের জন্য দেখা যায়, ভিজে কুয়াশায় দুটো ছায়া পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছে—একটা ছেলে, আরেকটা মেয়ে… আর তাদের মাঝখানে কোনো দূরত্ব নেই, কোনো অভিমান নেই, কেবল অনন্ত শান্তি।
Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park