কবি পরিচিতি:
জন্মস্থান: কবি সি এম আবু তালেব,পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরের নিকটবর্তী মুকদুমি নামক গ্রামে,১৯৯৮ সালের ১৫ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সি এম ফজলে করিম পেশায় ব্যবসায়ী, মাতা পমিলা খাতুন এর চতুর্থ তম সন্তান।
শিক্ষাজীবন: প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় গ্রামের সরকারী স্কুল থেকে। মাটিকুন্ডা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কলা বিভাগ নিয়ে ২০১৫ সালে উচ্চমাধ্যমিক এ কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ২০২০ সালে নর্থবেঙ্গল ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজী বিভাগে স্নাতক ও ২০২৪ সালে রবীন্দ্র ভারতী ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। রামগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষণ সংস্থা থেকে ২০১৭ সালে তিনি ডি.এল.এড এবং মহিনীগঞ্জ আইডিয়াল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে ২০২০ সালে বি. এড ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন: প্রায় পাঁচ বছর ধরে দ্যা হেরিটেজ মডেল পাবলিক স্কুল নামক একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি বিভাগে শিক্ষকতা করেন। এর পাশাপাশি গৃহ শিক্ষকতাও করেন।
সাহিত্য জীবন: কবির লেখালেখি শুরু হয় ছাত্র জীবন থেকেই। এর পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তি করতেও ভালো বাসে। স্কুল জীবন থেকে লেখা লেখি শুরু করলেও, প্রথম লেখা “মায়ের আশীর্বাদ” কবিতাটি প্রকাশিত হয় 2021 সালে বিনোদন সাহিত্য পত্রিকায়। এরপর সত্তা সাহিত্য, প্রতিভা ম্যাগাজিন, ঘিসকথা বিভিন্ন পত্রিকায় বহু কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। কবি তাঁর লেখার মধ্যে দিয়ে সমাজের বাস্তব চিত্র কে তুলে ধরতে চেয়েছেন। কবিতার মধ্যে দিয়ে সমাজের যাতে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসে, এটাই কবির লেখালেখির আসল উদ্দেশ্য।এছাড়াও বাংলাদেশের “ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের” একজন সক্রিয় সদস্য। ইচ্ছাশক্তি আইডি নং- ০০২০২২০৮৭৬ নিজ দেশ ছাড়াও বিদেশ এ কবিতা প্রকাশিত হওয়াতে কবি খুবই আপ্লুত। বাংলাদেশের ‘ইচ্ছাশক্তি প্রকাশনীতে’ কবির লেখা ‘প্রিয়জনের টানে’ কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়।
০১
মা হারা যন্ত্রণা
ছোট্ট মেয়ে রিমা,
আট বছরে হয় যে মা হারা
তিন মাস যেতে না যেতেই,
পায়নি বাবার সাড়া।
রিমা যখন নয় বছরের
বাবা করলো আবার বিয়ে,
সুখে সংসার করতে লাগলো,
নতুন মাকে নিয়ে।।
নতুন মা, খুবই ভালো
অনেক আদর করে,
কিছু দিন যেতে না যেতেই
আসল মুখোশ,ধরা পরে।
শুরু হলো অত্যাচার,
ছাড়তে হলো ঘর
দু-বেলা খেতে পাবে বলে
আশ্রয় দিল নর।।
বয়স তখন কেবল বারো
পা দিয়েছে বয়ঃসন্ধিতে,
শুরু হলো নরের আনাগোনা
অন্ধকার রাত্রে,গণিকালয়ে।
এইভাবেই চলতে লাগলো
দেহ খেলা রাতে,
জুটলো এবার দু-মুঠো ভাত
গণিকার পাতে।।
০২
দূষণমুক্ত পরিবেশ চাই
স্নিগ্ধ সবুজ ধরিত্রী হয়েছে আজ ধূসর
যাদের জন্য বেঁচে আছি, তাঁদেরকেই করেছি পর।
বিষাক্ত ধোঁয়ার নির্গমনে,ভরাট হচ্ছে বিশ্ব
চোখ মেললেই দেখা যায় ইমারতের দৃশ্য।
জঙ্গল কেটে হচ্ছে নির্মাণ, শিল্প ও কলকারখানা
ক্রমাগত বেড়েই চলেছে বিষাক্ত গ্যাসের আনাগোনা।
পৃথিবীর সব প্রান্তে ছড়াচ্ছে বিষাক্ত গ্যাস
ইচ্ছামতো করছি অপরূপ প্রকৃতির লীলাভূমিকে শেষ।
যার ফলে ধ্বংস হচ্ছে বায়ুমন্ডলের স্তর
বেড়েই চলেছে তাপ, গরমে করছি হাসফাঁস
আমরা অর্থাৎ মানুষ নাকি শ্রেষ্ঠ জীব….
করছি নিজেই নিজেদের সর্বনাশ।।
আমরা আজ কাঁধে তুলে নিয়েছি দূষণের ভার
বনজঙ্গল কেটে পৃথিবীকে করছি ছারখার ।
ছড়িয়ে পড়ছে রোগ-ব্যাধি দূষণের জন্য
এদিক ওদিক ছুটোছুটি করি প্রাণ বাঁচানোর জন্য ।
স্নিগ্ধ সবুজ পরিবেশ বাঁচায় আমাদের প্রাণ
এইভাবে ক্ষতি করলে, কী করে বাঁচতে চান?
এইভাবেই যদি চলতে থাকে পরিবেশের ক্ষতি
নানান অসুখে মরতে হবে, এটাই বিধাতার নীতি।
পরিবেশ দূষণ করা যদি করি বন্ধ
আবার ফিরে পাবো,সবুজাময় পৃথিবীর ছন্দ।
এসো সবাই করি বৃক্ষরোপণ,করি দূষণ রোধ
জাগ্রত হোক সবার চোখ, এই করি শপথ।
০৩
নারী নির্যাতন
নারী কথাটি শুনলে শরীর শিহরিত হই
আদৌ কী নারী জাত সুরক্ষিত রয়?
নারী মানে বুঝি মোরা, সবার প্রথমে সারি
সেই নারীকে একা পেলে করছে কাড়াকাড়ি।
নরেরা তো রাস্তায়, মস্তক উঁচু করে যায়
নারীরা পারেনা কেন, বলতে পারো ভাই?
নারী জাত না থাকলে, কেমনে হবে ঠাঁই
সেই নারীকে নির্যাতন? হায় রে সমাজ হায়!
ক্ষণিক তৃপ্তির জন্য, করছো যৌন খেলা
নয়তো বা অ্যাসিড ছুঁড়ে বসাও লোকের মেলা।
আমরা নাকি শিক্ষিত, গড়ছি নাকি দেশ
দিন-দিন নারী নির্যাতন হচ্ছেই তো বেশ।
যৌন হানী, নারী নির্যাতন যতসব কলঙ্ক
সমাজে কী প্রভাব পরে, কষেছ কী অঙ্ক?
কোথায় নারীরা সুরক্ষিত, বলতে পারো ভাই?
নারী ছাড়া বাঁচতে পারবে? হায় রে সমাজ হায়!
০৪
বীর যোদ্ধা
কোটা বলে সুযোগ পেত মুক্তি যোদ্ধার নাতি
মেধা হয়েও বঞ্ছিত আবু সাঈদের জাতি।
উচিত কথা বলতে গিয়ে, গেলো তাঁদের প্রাণ
সারা বিশ্বে রেকর্ড করলো,গেলো সরকারের সম্মান।
পরিস্থিতি দেখে সরকার করলো ইন্টারনেট বন্ধ
মেধারা আন্দোলনে নেমে করেনি তো মন্দ।
এক সন্তান গেলো মাগো, হাজার সন্তান আছে
এবার তো তোমার সন্তানেরা সঠিক বিচার পাচ্ছে।
ভুলবে না ইতিহাস, আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধ কে
সঠিক বিচারের জন্য প্রাণ দিলো, উনারা বীর যোদ্ধা যে।
থাকবে তাঁদের কাহিনী ইতিহাসের পাতায়
উনারাই মোদের দেশের সন্তান, উনারাই মোদের ভাই।
০৫
মানুষ আজ নিজের স্বার্থে
বহু যুগ ধরে বেঁচেছি নিজের ইচ্ছায়
নিজস্ব বলে তো আমার কোনো কিছুই নাই,
নিজ স্বার্থ ছাড়া, তোমাদের মতো হিংস্র মানুষদের জন্য
কতই না উপকার করেছি, দিয়েছি তুলে মুখে অন্ন।
নিজ স্বার্থে করলে তোমরা আমায় ছিন্নভিন্ন
বানিয়েছো আসবাবপত্র, বাড়ির শৌখিনের জন্য।
মুনাফা লাভের জন্য করেছো আমায় পণ্য
কে দিবে এবার, তোমাদের মুখে তুলে অন্ন?
এখনও সময় আছে, ভেবে দেখো আরও একবার
আমি বেচেঁ থাকলে, পাবে অনেক উপকার।
ভুলে গেছো কি, তোমার শ্বাস প্রশ্বাসে কত প্রয়োজন আমার
বন্ধ করো এবার আমাকে নিয়ে করা ছারখার।
আমার দেহ নিয়ে খেলা করো বন্ধ
দেখবে তোমাদের জীবন হবে ভরপুরে আনন্দ।
০৬
মায়ের আতর্নাদ
হে জননী, হে বিশ্ববাসী মায়েরা
আমি এক সন্তান হারা মা জননী।
শিবু, সঞ্জু দুই সন্তান মোর
ছিলাম ভালোই খুশি,
হঠাৎ একদিন বিপদ আসলো
কোল হল আমার খালি।
সঞ্জু ছিল হোস্টেলে তে, শিবু আমার পাশে
সঞ্জুকে দেখতে গেলাম ঠিক জুলাই মাসে ।
শিবু আমার ধরলো বায়না, দাদার কাছে যাবে
দাদার কাছে গেলে নাকি অনেক ভালোবাসা পাবে।
বাবা বললো না শিবু , তুই পাহারা দিবি বাড়ি
এই বলে রওনা দিলাম, সাথে নিয়ে গাড়ি।
হঠাৎ যখন ফোন আসে অপর প্রান্ত থেকে
শিবু নাকি নদীতে যায় স্নান করতে,, ওই ফাঁকে।
স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে যায় জলে
সঞ্জু কে দেখতে গিয়ে, শিবু খালি করলো কোলে।
তাই বলি মা জননীরা, সন্তানকে রেখো যত্ন করে
আমার মতো করিও না ভূল, নয়তো পাবে কষ্ট পরে।।
০৭
প্রিয়জনের টানে
প্রিয়, আমি তোমার সেই বইয়ের পাতা
যেই বইকে তুমি সবসময় আগলে রাখতে,
যে বইয়ের পাতায়, তোমার সমস্ত স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে
যে বইয়ের পাতায়, তোমার সমস্ত রাগ-অভিমান গুলিয়ে ফেলতে
যে বইয়ের পাতায়,তোমার ভালোবাসাকে উজাড় করে দিতে
আমি তোমার সেই বইয়ের পাতা ।
আজ তোমার অভাবে,
সেই বইয়ের ওপর ধূলোর আস্তরণ পরে গেছে
জানিনা, সেই বই কবে ধুলোময় হবে ।
আদৌ হবে কিনা? তাও জানিনা
কিন্তু সেই ধুলোময় বইয়ের পাতায়,
তোমার স্মৃতি সারাজীবন জড়িয়ে থাকবে।
হয়ত বা ভুলে গেছো,কিংবা ভুলতে চাও
হয়তো বা ভাবছো,আদৌ কী সেইসব ভুলে যাওয়া সম্ভব?
যদি কোনোদিন মনে পরে, এসো আবার ফিরে
উন্মুক্ত করবো বইয়ের পাতা, লিখব নতুন করে
থাকবে তুমি কাব্য হয়ে, আমার হৃদয়ের অন্তরে।
তুমি আবার কাব্য হবে, আমি হব সেই বইয়ের পাতা
তোমার জন্য ভালোবাসার,থাকবে না আর কোনো মলিনতা
তুমি আবার আমার প্রেম হবে, প্রেমিক হব আমি
তুমি সবসময় থাকবে আমার কাছে,
নিজের চেয়েও দামি।