ভ্রমণ কাহিনি :
হঠাৎই কানে এসে বাজলো উচ্চস্বরে, ‘ অথই ও অথই নটা বেজে গেল যে, আরও কত পরে ঘুম ভাঙবে তোমার?’ ঘুম ঘুম চোখে উত্তর দিলাম কেন এত তাড়া কিসের আর একটু ঘুমতে দেও তো ‘ এবার সে কাছে এসে বিছানায় আমার পাশে বসে মিষ্টি সুরে বলল, ‘ আচ্ছা তুমি কি ভুলে গেছ না-কি, আজ না আমাদের কাঠের ব্রিজ দেখতে যাওয়া কথা ‘ আমি ধীরে করে মাথাটা তার দিকে ঘুড়িয়ে চোখ খুলে মুচকি হাসি দিয়ে বললাম, ‘ হুম, আমার মনে আছে ‘ ‘ তাহলে তুমি দেরি করছ কেন? উঠো গোসল সেরে প্রস্তুত হও দশটার মধ্যেই আমরা বেরহব।’ কি আর করার নিরুপায় হয়ে আমি উঠে বাতরুমে গেলাম।
ওহ্ হ্যাঁ, আমি অথই আর আমাকে যে ডেকে ডেকে বিরক্ত করতেছে সে আমার সখের স্বামী আদল নাহ্ শুধু আদল নয় সাইয়ান আদল শাহ্। আমাদের সদ্য বিয়ে হয়েছে এই তো প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন মাস হচ্ছে আর-কি। আমি ঘুরতে ভালোবাসি আর সে আমার এই বিষয়টাকে প্রাধান্য দেয় যা আমার ভিষণ ভালো লাগে। যাই হোক আজ আমার দিনাজপুরের কাঠের ব্রিজ দেখতে যাব তাই সে এতো তাড়াহুড়া করতেছে।
গোসল সেরে দুজনে হালকা নাস্তা করে নিয়ে সাড়ে দশ-টার দিক বেরলাম বদরগঞ্জ উপজেলা থেকে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ কাঠের ব্রিজের উদ্দেশ্যে। আবেগে আপ্লুত হয়ে প্রায় দুই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে পৌছে গেলাম দিনাজপুর। ধাপে ধাপে একাধিক মানুষকে জিজ্ঞাসা করা শুরু করলাম কাঠের ব্রিজের ঠিকানা সময়ের সাপেক্ষে পৌঁছে গেলাম নবাবগঞ্জে যেখানে ঘন কালো শালবন নিস্তব্ধ নিরিবিলিতে মুখরিত পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। ছোট ছোট বড় বড় শালগাছে পরিপূর্ণ এই বন। এই বনে গেলে উত্তরবঙ্গে অবস্থান করেও দক্ষিণবঙ্গের সুন্দরবনের মতো উপভোগ করা সম্ভব। এ বনের ভিতর দিয়ে চলে গেছে একাধিক রাস্তা যা পায়ে হেঁটে চলাচল উপযোগী। আর এ বন পার হলেই কাঙ্ক্ষিত সে কাঠের ব্রিজ।
আমরা দুজনে যখন এই শালবনের রাস্তা ধরে যেতে আরম্ভ করলাম কোন এক অজানা ভয় বুকের ভিতর জায়গা করে নেয়া শুরু করলো কেননা শালবন ছিল একদম নির্জন ও জনশূন্য আর ঘন জঙ্গলের কারণে চারদিকে প্রায় অন্ধকার ছিল দিনের উজ্জ্বল আলোতেও কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। ভয়ে ভয়ে দুজনে পা বাড়ানো শুরু করলাম আর প্রতি পায়ে পায়ে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাওয়া শুরু করল কেননা এই বনকে নিয়ে একাধিক মত উক্তি প্রচলিত রয়েছে। সাড়া- শব্দহীন এ জঙ্গলের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে প্রায় ৩০ মিনিট পর এক সময় পৌছে গেলাম শালবনের একদম শেষ প্রান্তে। এই কাঙ্ক্ষিত শেষ মুহূর্তে এসে বড় বড় চোখ করে অবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে রইলাম দুজনে। কেননা চোখের সামনে ছিল ধ্বংসপ্রায় দীর্ঘতম ধান খেত…