তরুণ প্রজন্মের উদীয়মান কবি, লেখক ও সম্পাদক মুহাম্মদ শাফায়াত হুসাইন ১লা জানুয়ারি ২০০৪ সালে বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির রাজধানী কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার মহিষকুণ্ডি গ্রামে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাক নাম আলাল। পিতা মোঃ সানারুল ইসলাম ও মাতা মোছাঃ বুলুন খাতুনের তিন সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠ পুত্র। তিনি পাকুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা ও পাকুড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন এবং রাজশাহী কোর্ট কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। শায়েখ ড. মাওলানা মুফতি এ কে এম মাহবুবুর রহমান এর অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কবিতা রচনা শুরু করেন। তিনি ‘বাংলা সনেট’, ‘রুবাইয়াত’, ‘গীতি কবিতা’ ও ‘কাসিদা’ রচনায় বেশি আগ্রহি। তিনি “কুষ্টিয়া সাহিত্য সাংস্কৃতি সংসদ” এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক এবং ‘ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার’ এর এক জন সক্রিয় সদস্য। তাঁর প্রথম যৌথ কাব্য গ্রন্থ ”হৃদয়ের অক্সিজেন”, ”বিশ্ব বাংলায় শ্রেষ্ঠ কাব্য”।”কাব্যের পরশমণি” তাঁর প্রথম সম্পাদিত যৌথ কাব্য গ্রন্থ। তিনি ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের একজন সক্রিয় সদস্য। ইচ্ছাশক্তি আইডি নং- ০০২০২২০০৬৩
০১.
গীতি কবিতা-১
এ জীবনে দেখা পাবো কি পাবো না জানি না
পেয়েও কি হাঁরায় হাবিব এ ডর মম সহে না।
এ জগতে রাসুলুল্লার জিয়ারত না পাই যদি
ইহ পরকাল এ হাঁরাবো যে অমৃত ঐ নিধি
নিলে স্মরণ করো শঙ্কা হরণ দিয়ে করুনা।।
রহ-মত ক্ষমার প্রশংসিত তুমি সৃষ্টি জগৎ পতি
চিরভ্রান্ত আমি ত্রুটির যে মহাজন অধম অতি
মাফ করো পাপ চলাও সুপথ হে দয়াময় মোর প্রভু
বিচ্ছেদ ব্যথা সইতে নারি যদি ছেড়ে যাও কভু
দেখা দিয়ে আলাল উদ্দীন কে ভুলে থেকো না।
০২.
জীবন তরী
হয়েছে সূর্য উদয় যাবে অস্ত রবে না,
ও মন বুঝেও কেন বুঝলি না।।
জীবন রবি উদিত হয়েছে পুবে
ঐ দেখ আয়ু সূর্য যায় ডুবে
দেখেও দেখলি না মন এ ভবে
মরণ অন্ধকারে উপায় পাবে না।।
কত ঢেউ এল গেল সমুদ্রের তীরে
ঘুরে কেউ এলনা তরঙ্গের ভিরে
মোর জীবনের আবসান আসে ধিরে
অজানায যাব চলে ফিরে আসব না।।
পায় নায় কেউ ভববন্ধন থেকে মুক্তি
আজরাইল মানবে না তোর কোনো যুক্তি
মৃত্যু কে করবি বরণ এ যে মহা সত্য উক্তি
ভব মায়ায় ভবে কর না ভোগের বাসনা।।
অনিত্য পিতা মাতা দারা সূত পরিজনে
আপন পর স্বজন মৃত্যুর বশে সর্বজনে
অর্জিত সম্পদ ভোগ করবে কোন জনে
পার্থিব সম্পদ মর্তে রবে সাথে নিতে পারে না।।
আসিলে ক্রমানয়ে মেনে বিধাতার রীতি
পিতামহের পূর্বে পৌত্রের মরণ ভবের নীতি
প্রতি জীবে গাইবে মহা সত্য মৃত্যুর গীতি
যত ছলনায় করো শাফায়াত রেহাই পাবি না।।
জাগতিক মায়া ও গোলক ধাঁধাঁয় আছ পড়ে
কামেল ও মুক্কাম্মেল মুর্শদের ঐ কদম ধরে
এলেম কালাম শিখে আমল কর বাহ্য ভ্রম যাবে
দূরে গুপ্ত তত্ত্ব জেনে দিব্য চক্ষু পাবে মরণের ভয় রবে না।।
০৩.
সংগ্রাম
সংগ্রাম মানবের নেশা,
সংগ্রাম মানবের পেশা।
মানবের দেহ খানি,
একটি জীবন্ত রণ ক্ষেত্র জানি।
মায়ের উদর হতে আগমনের পরে,
চিৎকার সহিত কেঁদে সংগ্রাস আরম্ভ করে।
লড়াই করে গ্রহণ করি নিঃশ্বাস,
সমর করে ত্যাগ করি প্রশ্বাস।
রণ করে খুলি আঁখি,
যুদ্ধ করে সমস্ত অবনী দেখি।
লড়াই এর বলে পান করি মায়ের স্থন,
বেঁচে থাকার পাই সমর্থন।
মানব দেহে অনুচোক্রিয়া,
জীবাণুর সাথে যুদ্ধ করিয়া।
ধীরে ধীরে মানব দেহখানি বিকশিবে,
হাটিতে শিখি আমি যুদ্ধ করে অভিকর্ষের বিরুদ্ধে।
আসিবে সময় হাঁরাতে শক্তি প্রতিকুলের,
হৃৎপিণ্ডে করিবে না সংগ্রাম জয়ি হবে শক্তি অনুকূলের।
শাফায়াত বলে যায়, স্বার্থক হতে চাই রণ,
যুঝি বিনে বাঁচে না মানবের প্রাণ।
০৩-০৯-২০১৫
০৪.
শাসনতন্ত্র
বাংলাদেশর সরকার নিয়ে কত শব্দ,
সরকারের শাসনে জনগণ হয় জব্দ।
প্রজাদের নেই মনে শান্তি,
দেশের নাম দেয় গণপ্রজাতন্ত্রী।
দেশে নেই সমাজ তন্ত্র,
হাঁরিয়েছে তারা গণতন্ত্র।
নেতৃত্বকারীরা স্বার্থের লোভি,
তারা শাসনতন্ত্র গিয়েছে ভুলি।
দেশদ্রহীরা দেশের করে ষড়যন্ত্র,
কীভাবে ধ্বংস করা যায় শাসনতন্ত্র?
অর্থ পাচার হয়ে যায় অন্য দেশে,
খাদ্য বিনা মরি মোরা সর্ব শেষে ।
ভেঙ্গে দেয় অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড,
মোদের শিক্ষা গ্রহণের শ্রম হয় পণ্ড।
অর্থ দিয়ে অযোগ্য হয় ডাক্তার,
ভুল চিকিৎসায় মারা যায় কত আক্তার!
শিক্ষা, চিকিৎসা মোরা না পায়,
ভালো টা নিতে তারা বিদেশে যায়।
নেই কোন বাক স্বাধীনতা,
মৌলিক অধিকারে রয়েছি পরাধীনতা।
দেশের কিছু উচ্চ কর্মকর্তা গণে,
বিদেশি দালান জানে সর্ব জনে।
কত ছলে বলে ক্ষমতা দখলের তরে
মানবের জীবন নিয়ে খেলে,অনেক মরে।
দেশে শক্তি আছে যাদের,
নির্মম নির্যাতন করে দুঃখীদের।
কত মায়ের সন্তান দেয় প্রাণ!
হে! মানবগণ কর পণ,
আর বোমা বাজি নয়,
আর মানব হত্যা নয়।
আপনি বাঁচুন অন্য কে বাঁচতে দিন,
শোধ করুন সত্য, স্বাধীনতা ও মানবতার রিন।
হে মানবগণ! জ্ঞানের বিচার করুন,
সত্য ইসলামের ঝাণ্ডা তলে আসুন।
আর ঐক্যের বলে হও বলিয়ান,
তবেই অন্তরীক্ষে উড়িবে বিজয় নিশান।
এক বাদশা হয়ে আছে সুযশ শাসকের কান্তি,
তাঁর শাসন আমলে এই মর্তে ছিল শান্তি।
তিঁনি ছিলেন মানব মায়াবী,
বিনা রক্তপাতে জয় করেন পৃথিবী।
মদিনার জনগন ছিল একত্ব,
অধিপতির মানবের প্রতি ছিল কত মমত্ব!
তাঁরা গঠন করে মদিনার সনদ,
ফলে সকলে ভোগ করে প্রমোদ।
এই নৃপতি হচ্ছেন মুহাম্মদ রাসুল,(সাঃ)
তাঁকে অনুসরণ করতে করনা ভুল।
হে সরকার, কর বরণ,
সেই রাসুলের (সাঃ) অনুসরণ।
ফিরে পাবে সুখ,
দেশে থাকবে না দুঃখ ।
০৭-১০-২০১৫
০৫.
কর্ষক
ঊষায় শকুন্তের ডাক কান্তিমান,
তা শুনে অসাড় থেকে ওঠে কৃষাণ।
চাষি কে পত্নি দেয় থলে,
বোঁচকা নিয়ে চাষা চলে।
কর্ষকের পানির বোঁচকায়,
আছে কাঞ্জিকা ও তোয়।
ভানু উদয়ের আগে পৌছায়,
কৃষক, পদ্মার বালুকাবেলায়।
পদ্মার ঐ কিনারায়,
শ্রমিক হয় ক্রয়।
গেরস্ত নিনাদে দুই’শ টাকা দেব বলে,
কিছু চাষি তার পিছু চলে।
পদ্মা তটিনীর কলকলিয়ে জলে,
পার হয় কর্ষকের দলে।
তেপান্তরের মাঠের সমাপ্তে,
তারা পৌছায় মালিকের ক্ষেতে।
আমোদে সকলে কাজ করে,
কিছুক্ষণ পরে সকলে ভোজন করে।
দ্বিপ্রহে হয় তাদের ছুটি,
বেঁধে মাথায় লয় ঘাসের আটি।
এই মাঠে আছে কিছু পর্ণশালা,
সেখানে গিয়ে মিটায় তেষ্টার ও বিশ্রামের জ্বালা।
পদ্মার তীর ভূমিতে বালু রাশি রাশি,
প্রভাকরের কিরণে তা মনে হয় বালুর হাসি।
পাদুকা নাই যাদের পদে,
উত্তপ্ত বালুতে সে কাঁদে।
তারা মেহেনত করে এসে
ভাগজোতের বড় বট বৃক্ষের নিচে বসে।
গেরস্ত দেয় তাদের পারিশ্রম,
ভুলে যায় সেই পরিশ্রম।
মোহনা ভরা উল্লাসে,
রওনা দেয় বাড়ির উদ্দেশ্যে।