কৃষিবিদরা কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাঁদের গবেষণা ও উদ্ভাবন কৃষির বিভিন্ন দিক যেমন ফসলের জাত, মাটি, জলবায়ু, এবং পুষ্টি ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে। ঠিক তেমনি এদের প্রচেষ্টা থাকে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো, কৃষির স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা এবং কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত করা কাজ।
কৃষিবিদদের কাজের একটি মূল দিক হলো নতুন ফসলের জাত উদ্ভাবন। তাঁরা বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে ফসলের রোগ প্রতিরোধী জাত তৈরি করেন, যা কৃষকদের জন্য অধিক ফলন এবং টেকসই কৃষি নিশ্চিত করে। উদাহরণস্বরূপ, উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান ও গমের উদ্ভাবন খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এর ফলে দেশে খাদ্যের অভাব কমে এসেছে এবং কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করার জন্য কৃষিবিদরা নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেন। মাটির পুষ্টির মাত্রা বৃদ্ধি, অর্গানিক সার ব্যবহার এবং সঠিক আবহাওয়া পরামর্শের মাধ্যমে তাঁরা কৃষকদের সাহায্য করেন। সঠিক পুষ্টি ব্যবস্থাপনা মাটির উর্বরতা বাড়িয়ে দেয় এবং ফসলের উৎপাদন বাড়ায়। এছাড়াও, মাটির ক্ষয় রোধে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি অনুসরণ করে তাঁর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কৃষিবিদরা গবেষণা করে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেন। তাঁরা জল সংরক্ষণ পদ্ধতি, ড্রিপ সেচ ব্যবস্থা, এবং বৃষ্টির পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষকদের সহায়তা করেন। এই সব পদ্ধতি কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে এবং জলবায়ুর পরিবর্তন সত্ত্বেও কৃষকদের সাফল্য অর্জন করতে সহায়তা করে।
কৃষিবিদরা কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেন, যেখানে আধুনিক কৃষি পদ্ধতি, প্রযুক্তি এবং বাজারের সুযোগ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা হয়। এভাবে, কৃষকদের দক্ষতা বাড়ানো হয় এবং তাঁরা বাজারে নিজেদের পণ্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করতে সক্ষম হন। কৃষিবিদদের সহায়তা ছাড়া কৃষকরা অনেক সময় নতুন প্রযুক্তির দিকে অগ্রসর হতে দ্বিধা করেন, যা কৃষির অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে।
কৃষিবিদদের কাজ শুধুমাত্র ফসল উৎপাদনের সাথে সীমাবদ্ধ নয়, তাঁরা সমাজের সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কৃষির উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিবিদরা রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণেও অংশ নেন। তাঁদের পরামর্শে সরকারী ও বেসরকারি পর্যায়ে কৃষির উন্নয়নমূলক প্রকল্প গৃহীত হয়। এতে করে কৃষি খাতের অন্তর্ভুক্তি বাড়ে এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
আন্তর্জাতিক স্তরে কৃষিবিদদের গবেষণাও উল্লেখযোগ্য। তাঁরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করে নতুন প্রযুক্তির আদান-প্রদান করেন এবং বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার উন্নয়নে কাজ করেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে কৃষিবিদরা কৃষকদের জন্য উপকারি তথ্য ও প্রযুক্তি সরবরাহ করেন, যা বৈশ্বিক কৃষির উন্নয়নে সহায়ক।
অবশেষে, কৃষিবিদরা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাঁদের নিরলস প্রচেষ্টা কৃষিকে আধুনিকীকরণ এবং উন্নয়নশীল দেশের কৃষকদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। কৃষির ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি, গবেষণা ও উন্নয়ন না হলে খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষকদের উন্নতি সম্ভব নয়। কৃষিবিদদের অবদান আমাদের সমাজে অপরিসীম এবং তাঁদের কাজের ফলস্বরূপ আমরা একটি খাদ্য নিরাপদ এবং স্বনির্ভর সমাজ গড়ে তুলতে পারবো।
লেখক:
মোঃ রবিউল ইসলাম খান রবিন (রাশশাদ),
শিক্ষার্থী, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট – খাদিম নগর, সিলেট।