এস এম জাকারিয়া, মীরসরাই, চট্টগ্রাম ।
আল্লাহ তায়া’লা স্পষ্টত তাঁর হক্ব নষ্টকারী কাউকে কাউকে ক্ষমা করলেও বান্দা হয়ে বান্দার হক্ব নষ্টকারীকে ততক্ষণ ক্ষমা করবেন না, যদি মজলুম বান্দা তার উপর জুলুমকারীকে ক্ষমা না করে। তার উপর শর্ত হলো তাওবা। কেননা আল্লাহ তায়া’লা অত্যাচারী ব্যক্তিকে সাবধান করে পবিত্র কুরআনের সূরা বুরুজের ১০ নং আয়াতে বলেছেন –
” اِنَّ الَّذِیۡنَ فَتَنُوا الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ ثُمَّ لَمۡ یَتُوۡبُوۡا فَلَهُمۡ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَ لَهُمۡ عَذَابُ الۡحَرِیۡقِ “.
অর্থাৎ : ” নিশ্চয় যারা বিশ্বাসী নর-নারীকে বিপদাপন্ন করেছে (১) এবং পরে তাওবা করেনি (২), তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি ও দহন যন্ত্রণা ” (৩)।
ব্যাখ্যা :
(১) আয়াতে বর্ণিত ‘ فَتَنُوا ‘ শব্দের এক অর্থ হচ্ছে – ‘ أحرقوا ‘ বা জ্বালিয়েছিল, অপর অর্থ পরীক্ষা করা। বিপদে ফেলা। ( ফাতহুল কাদীর )।
(২) কাফেরদের জাহান্নামের আযাব ও দহন যন্ত্রণার খবর দেয়ার সাথে সাথে কুরআন বলছে যে, এই আযাব তাদের ওপর পতিত হবে, যারা এই দুষ্কর্মের কারণে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করেনি। এতে তাদেরকে তাওবার দাওয়াত দেয়া হয়েছে। হাসান বসরী বলেনঃ বাস্তবিকই আল্লাহর অনুগ্রহ ও কৃপার কোন তুলনা নেই। তারা তো আল্লাহর নেক বান্দাদেরকে জীবিত দগ্ধ করে তামাশা দেখছে, আল্লাহ তা’আলা এরপরও তাদেরকে তওবা ও মাগফিরাতের দাওয়াত দিচ্ছেন। ( ইবনুল কাইয়্যেম, বাদায়ে’উস তাফসীর; ইবন কাসীর )
(৩) এখানে অত্যাচারী কাফিরদের শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে, যারা মু’মিনদেরকে কেবল ঈমানের কারণে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিল। শাস্তি প্রসঙ্গে স্পষ্ট দুটো’ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন :
✪ এক : ‘ وَلَهُمْ عَذَاب جَهَنَّمَ ‘ অর্থাৎ তাদের জন্য রয়েছে পরকালে জাহান্নামের আযাব।
✪ দুই : ‘ وَلَهُمْ عَذَابُ الْحَرِيقِ ‘ অর্থাৎ তাদের জন্য রয়েছে দহন যন্ত্রণা।
এখানে দ্বিতীয়টি দ্বারা প্রথমটিকে তা’কীদ করা হয়েছে। অর্থাৎ জাহান্নামে যেয়ে তারা চিরকাল দহন যন্ত্রণা ভোগ করবে। এটাও সম্ভব হতে পারে যে, দ্বিতীয় বাক্যে দুনিয়ার শাস্তি বর্ণিত হয়েছে।
কোন কোন রেওয়ায়েতে আছে যে, মু’মিনদেরকে অগ্নিতে নিক্ষেপ করার পর অগ্নি স্পর্শ করার পূর্বেই আল্লাহ্ তা’আলা তাঁদের রূহ্ কবজ করে নেন। এভাবে তিনি তাদেরকে দহন যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করেন। ফলে তাদের মৃতদেহই কেবল অগ্নিতে দগ্ধ হয়। অতঃপর এই অগ্নি আরও বেশী প্রোজ্জলিত হয়ে তার লেলিহান শিখা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে যারা মুসলমানদের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার তামাশা দেখছিল, তারাও এই আগুনে পুড়ে ভস্ম হয়ে যায়। কেবল বদশাহ্ “ইউসুফ যুনাওয়াস’ পালিয়ে যায়। সে অগ্নি থেকে আত্মরক্ষার জন্য সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে “এবং সেখানেই সলিল সমাধি লাভ করে। (মাযহারী, ফাতহুল কাদীর )।
আল্লাহ তায়া’লা আমাদের সকলকে এই আয়াতের আলোকে পরিচিত জালিম হওয়া থেকে রক্ষা করুন এবং ও-ই স্তরের জালিমের জুলুম থেকে বাঁচিয়ে রাখুন।