কবি পরিচিতিঃ
কবি আকাশ দাশ সৈকত একজন কবি, লেখক, তথ্যদাতা এবং সংগঠক। তিনি ২০০২ সালের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার মহানগর নামক এক ছোট গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন। বাবা রনজিত দাশ পেশায় ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আর মা ছিলেন গৃহিণী । দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। ২০০৭ সালে গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণী শেষ করে তিনি ভর্তি হন মহানগর মীর সিরাজুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে তিনি মাধ্যমিক শেষ করেন । এরপর নিজামপুর সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে পরিবারের তাড়নায় নিজের পড়ালেখা আর বেশিদূর নিয়ে যেতে পারেননি।
ছোট বেলা থেকে তার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও ক্রিকেটের ব্যাট আর বলের সাথে লেখালেখিটাও করতেন দারুণ। তাই তো যখন সময় পেতেন তখন বসতেন লিখে যেতেন । মাত্র ১৬ বছর বয়সে উপজেলার সাপ্তাহিক সীতাকুণ্ড পত্রিকায় প্রকাশ পায় তার প্রথম অনুগল্প “জীবনের গল্প”। এরপর আর লেখালেখিতে পিছু চাইতে হয়নি তাকে “অসমাপ্ত ভালোবাসা” “পড়ে পাওয়া” “মধ্যবিত্তের জীবন” “গল্পের ন্যায় জীবন” “সফলতা কতো দূর” “দুশ্চিতা” “বাবা এবং বটবৃক্ষ” “না বলা গল্প” “মানুষ এবং মুখোশ” “স্মৃতির পাতায়” বন্ধুত্বের ভালোবাসা” “বন্ধুত্ব” উল্লেযোগ্য অনুগল্প। এর মধ্যে “পড়ে পাওয়া” এবং “দুশ্চিতা” দুইটি অনুগল্প প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম স্থান লাভ করেন । এছাড়া তার প্রথম কবিতা বাবা বেশ সুনাম কড়িয়েছে। “করোনার দিনগুলোর” জন্য তিনি কবি বন্ধু সাহিত্য পাতার সেরা কবি নির্বাচিত হন।
বর্তমানে তিনি একজন তথ্যদাতা এবং সামাজিক সংগঠক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন । এরমধ্যে তিনি টানা দুই বার জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ভয়েসবিডির বর্ষ সেরা তথ্যদাতা নির্বাচিত হন। এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য অনেক পুরস্কার অর্জন করেন । তিনি ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের একজন সক্রিয় সদস্য। ইচ্ছাশক্তি আইডি নং- ০০২০২২০৪১৩
গল্পগুলো আজ বদ্ধ জানালায় বন্ধি
স্মৃতিগুলো আজ অতীত হয়েছে
স্বপ্ন হয়ে গেলো ভেড়াজালে বিলিন
তবুও এই ব্যস্ততায় খোঁজে বেড়ায়
আমার পেলে আসা রঙিণ শৈশবের গল্প।
কতো তারা জ্বলেছিলো আকাশে
কতো রোদ হেসেছিলো গল্পের ভীড়ে
স্বপ্নগুলো বাঁচিয়ে রাখতে গল্পগুলো করেছি ক্ষত
তবু আজ হয় না দেখা কোন কারণে।
বারবার মনে পড়ে যায়, তবু মনে করাতে নাই
গল্পগুলো হাসতো বেশ স্মৃতি হয়ে আসতো খুব
এইদিন আমার অজান্তে চলে গেলো সবাই,
একা রেখে এই কঠিণ বাস্তবতায় দুনিয়ায়!
ট্র্যাজডি শব্দটা!
চোখের সামনে ভেসে উঠলে
বুকটা যেন কেমন করে উঠে
সেই নিমতলা থেকে সীতাকুণ্ড
কতো যে ট্র্যাজেডির স্বাক্ষী এই দেশবাহী।
কি ভয়ানক! কি নির্মম! কি নিষ্ঠুর
হে ধরিত্রী তোমার মহিমা!
আমি দেখেছি, আমি শুনেছি ট্র্যাজেডি
কি ভয়ানক! কি নির্মম! কি নিষ্ঠুর।
বাতাসে ভেসে আসা লাশেদের গন্ধ
লাশের সামনে স্বজনদের আর্তনাদ
ছেলের জন্য মায়ের আহাজারি কান্না
বাবার স্নেহ বঞ্চিত অবুঝ শিশুর নীরবতা।
কারা দোষী? কার ছিলো বেশী অপরাধ
তা নিয়ে হবে তদন্ত একদিন…
তবে তারপর… তারপর আর কিছু নেই
ভুলে যাবো সীতাকুণ্ডের ট্র্যাজেডি
যেমন ভুলে গিয়েছি বিগত ট্র্যাজেডিগুলো
এইভাবে ঠিক একদিন ভয়ে ভয়ে থাকবো
কবে হবে আবার এক ট্র্যাজেডি
উঠবে পত্রিকার প্রথম পাতায়
কিন্তু ভুক্তভোগীরা?
গুটি গুটি পায়ে প্রথম চলতে শিখেছি,
তোমার হাতটি ধরে……
ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে শিখেছি,
তোমার নৈতিক আদর্শে…….
অন্যায়ের বিরুদ্ধের প্রতিবাদ করতে শিখেছি,
তোমার সেচ্ছায় আচরণে……
ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় সদা যুদ্ধ করেছি,,,
তোমার সম্মানের লক্ষ্যে !
অতী বৃষ্টিতে তুমি যখন ছিলে
মাথার উপর ছাতা হয়ে….. আর,
সদা শত্রুর মোকাবেলায়
দিয়েছো তুমি শক্তি…..
ভালো-মন্দের তফাৎ চিনিয়েছো যেইদিন
সেইদিন থেকে তুমি হয়েছিলে আমার সেরা বন্ধু!
কিছু না পাওয়ার দুঃখ যখন এসেছিলো মোর মনে
সব দুঃখ ভুলিয়া দিয়েছিলে তুমি অবিলম্বে!
মাথার উপর হাতটি রেখো সদা,
আশির্বাদ করিও প্রাণভরে…..
এই মোর চাওয়া… করি তোমার জন্য প্রার্থনা…
সদা যেন থাকতে পারি মোরা….
আনন্দে আর আত্মহারা!
সেই পুরনো স্মৃতিগুলো
আজো মনে পড়ে বারেবার,
ঘড়ির কাঁটায় সময় যদি হতো ভাই,
প্যান্ট শার্ট আর একজোড়া জুতো পরে
ব্যাগে থাকা একগাদা মেলা বই নিয়ে
ছুটতাম মোদের ইস্কুলের দিকে।
শিমুল-পলাশ আর রনি
দাঁড়িয়ে থাকতো যে রাস্তার ধারে
অপু-দীপু আর নিপুরা মাঝ রাস্তাতে।
এই নিয়ে ইস্কুলের পথে দল বাঁধতাম
মোরা সাত-আট জনে।
ইস্কুলের পথে পথে মোরা
করতাম কত আনন্দ আর কত খেলা
কেউ এই গাছের পাতা ছিঁড়তো
তো কেউ অন্য গাছের দিকে নজর দিতো
এই করতে করতে ক্লাস যখন হতো শুরু
টিচার্সের ভয়ে মোরা পড়া শিখতাম রীতিমতো
কেউ পারতো আবার কেউবা টিচার্সের খেতো বকা
এই দেখে মোরা আনন্দে হতাম আত্মহারা।
বিকেল বেলায় দপ্তরি কাকু যখন দিতো
ছুটির ঘন্টার সেই আনন্দের বাজনা
কার আগে কে যাবে বাড়ি এই নিয়ে
চলতো ভীষণ দৌড়াদৌড়ি।
এই সেই করতে করতে যখন মোরা
একটু বড় হই,
নিজের বিবেক ডাক দিয়া যে কয়
ছেড়ে যেতে হবে এই চারদেয়াল ঘর।
বাঁধতে হবে নতুন কোনো নীড়।
সুখে-দুঃখে কাটানো ইস্কুলটাকে আজো
বড্ড মিস করি খুব
ইস্কুলটা আজো ঠিক একই আছে
আছে মোদের রেখে আসা স্মৃতিগুলো।
শুধু আজ পরিবর্তন হয়েছে একটাই
মোদের জায়গায় এসেছে কোনো নতুন কুঁড়ি
তারাও থাকবে, স্মৃতির আলপনা আঁকবে
আবার দিনশেষে ভিনদেশির মতো
নতুন কোনো ঠিকানা খুঁজবে।
আজো মনে পড়ে যায়
পুরনো দিনের সেই অতীতের কথাগুলো,
সেইদিন পথগুলো ঠিক এমনি ছিলো
ছিলো না কোন পথিকের খোঁজ।
তখন হাঁটছিলাম ঠিক ভর দুপুরে
তারপরও যেন মনে হতো হাঁটছি মাঝরাতে।
সরাক্ষণ মনে শুধু ভয় কখন যে কি হয়
নাকি কখন ওই অচেনা আগন্তুক করে বসে কাবু।
খাওয়ার টেবিল থেকে বসার টেবিল
শুধু মনে ভয় এবার মৃত্যু নিশ্চয়।
ঘরের চার দেয়ালে আর মেঝেতে যখন
আড্ডা আর হাসিখুশি সবাই,
মনে হতো এই বুঝি শেষ না হয় আবার।
তবে সব জয় করে আবার এসেছে নতুন সূর্য
ফুটেছে কতো হাসি রাশি রাশি চারপাশ
আবার জিতেছে মানবজাতি হারলো অসুর সমাজ।