1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০২:০৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

ক্ষমতার দোলাচল: আসলে আমরা কতটুকু স্থায়ী?

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৫২ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

ইয়াকুব আলী তুহিন

 

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ক্ষমতার অর্থ ও তাৎপর্য নতুন করে বুঝতে শেখা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এই ক্ষমতা কোনো স্থায়ী বা নির্দিষ্ট বিষয় নয়। এটি পরিবর্তনশীল এবং ঘুর্ণায়মান। এক সময় যিনি ক্ষমতার আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন, তিনি হয়তো অল্প সময় পরেই সেই আসন হারিয়েছেন। এটি এক ধরণের চক্র, যা কালের গতি অনুসারে ফিরে আসে আবার চলে যায়। কিন্তু এই ক্ষমতার দোলাচলে আমরা আসলে কতটুকু স্থায়ী? আমাদের হাতে ক্ষমতা চিরস্থায়ী কি না, সেটিই ভাবার বিষয়।

 

আমরা যখন কোনো বড় জায়গা বা অবস্থানে পৌঁছাই, তখন নিজের ক্ষমতার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়ি। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এই শক্তির হাতবদল ঘটে। যারা ক্ষমতার আসনে বসেন, তারা হয়তো মনে করেন, সবকিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অথচ বাস্তবে, ক্ষমতা কোনো স্থায়ী বিষয় নয়। এটি এক মুহূর্তে একটি হাত থেকে অন্য হাতে চলে যেতে পারে।

 

ক্ষমতার প্রকৃতি ও তার চক্রীয় ধারা

ক্ষমতা সবসময়ই মানুষকে আকর্ষণ করেছে। রাজা-মহারাজা থেকে শুরু করে বর্তমানের আধুনিক বিশ্বের ক্ষমতাবান ব্যক্তিরাও নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছেন। এর মূল কারণ হচ্ছে, ক্ষমতার মধ্য দিয়ে তারা সমাজ, রাষ্ট্র বা জনগণকে প্রভাবিত করতে পারেন। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, ক্ষমতা কারও কাছে চিরকাল থাকেনি। যেমন ধরা যাক, এক সময় সম্রাট অশোক ভারতের বিশাল অঞ্চলের শাসনকর্তা ছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সেই সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। একইভাবে মুঘল সম্রাট, বৃটিশ সাম্রাজ্য বা আরও অনেক শক্তিশালী ক্ষমতারও শেষ হয়েছে।

 

ক্ষমতা এমন এক বিষয়, যা এক সময়ে একজনের হাতে থাকলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বদল হয়ে যায়। এই চক্রীয় ধারা পৃথিবীর নিয়মের অংশ। কোনো একজন ব্যক্তির সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সাময়িক হতে পারে, কিন্তু তা স্থায়ী হতে পারে না। আর এই পরিবর্তনশীলতার পেছনে যে কারণটি সবচেয়ে বেশি কাজ করে, তা হচ্ছে মানুষের কর্ম ও তাদের আচরণ।

 

ক্ষমতার মোহ ও মানবজীবনের মানসিকতা

মানুষ স্বভাবতই ক্ষমতা পেতে ও ধরে রাখতে চায়। এটি এক ধরণের মোহ, যা কখনও কখনও অন্ধতার দিকে ঠেলে দেয়। আমরা অনেক সময় বুঝে উঠতে পারি না যে, ক্ষমতা আমাদের অধিকার নয়, বরং দায়িত্ব। যখন একজন ব্যক্তি ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছায়, তখন তার মনে হতে পারে, তিনি অপরাজেয়। তার কথা সকলকে মেনে চলতে হবে। কিন্তু এই ভাবনার মাধ্যমে আমরা নিজেদেরই ক্ষতির দিকে ঠেলে দিই। আমরা ভুলে যাই, ক্ষমতা এক সময় হারিয়ে যাবে, যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ক্ষমতার এই অস্থায়ী প্রকৃতি আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয়, এটি আমাদের কাছে চিরস্থায়ী নয়।

 

আমাদের আচরণ, মানসিকতা ও মূল্যবোধ অনেক ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষমতার স্থায়ীত্ব নির্ধারণ করে। কেউ যদি ক্ষমতা পেয়েই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন, নিজের দায়-দায়িত্ব ভুলে যান এবং নিজের স্বার্থে ক্ষমতা ব্যবহার করেন, তবে তার পতন অবধারিত। কিন্তু যারা ক্ষমতাকে দায়িত্ব মনে করে সঠিক পথে ব্যবহার করেন, তাদের প্রভাব ও স্মৃতি মানুষের মনে দীর্ঘস্থায়ী হয়।

 

ক্ষমতার পরিবর্তনের দৃষ্টান্ত

ক্ষমতার এই পরিবর্তনশীলতা বর্তমান বিশ্বেও দেখা যায়। বিশ্ব রাজনীতির দিকে তাকালে দেখা যায়, অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা নেতা কিছু সময় পরেই ক্ষমতা হারিয়েছেন। হয় জনগণের প্রত্যাখ্যান, নয়তো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কারণে তাদের ক্ষমতা হাতছাড়া হয়েছে। এই ঘটনা প্রমাণ করে, ক্ষমতা কখনও কাউকে স্থায়ীভাবে দেওয়া হয় না। যেমন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন, যিনি এক সময়ে ক্ষমতার শীর্ষে ছিলেন, কিন্তু ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির কারণে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তার পতন আমাদের শিক্ষা দেয়, কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত আচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহার ক্ষমতা হারানোর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 

ক্ষমতার মূল্যায়ন: আমরা কি শিখছি কিছু?

ক্ষমতার এই দোলাচল থেকে আমাদের শিখতে হবে যে, এটি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের জন্য একটি সুযোগ মাত্র, যা চিরস্থায়ী নয়। যদি কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে, তবে তার পতন হবেই। আর এই পতন একটি অনিবার্য সত্য। জীবনে স্থায়ীভাবে কিছু পাওয়ার জন্য যে ক্ষমতা আসলে কখনও প্রয়োজনীয় নয়, বরং আমাদের কর্ম ও সৎ মানসিকতা মানুষকে আমাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলে।

 

আমরা যদি মানুষের সেবায়, দায়িত্ব পালনে এবং সামাজিক কল্যাণে ক্ষমতার ব্যবহার করি, তবে আমাদের উপস্থিতি মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী হয়ে যাবে। এমনকি ক্ষমতা চলে গেলেও, মানুষ আমাদের স্মরণ করবে। কিন্তু যদি আমরা ক্ষমতাকে ব্যক্তিগত লাভের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করি, তাহলে তার ফলও ততটাই তিক্ত হবে। ক্ষমতার এই চক্রীয় প্রকৃতি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মানুষ এবং তার কর্মই স্থায়ী। ক্ষমতা আমাদের মধ্যে এক ধরনের মায়া সৃষ্টি করলেও, তা আমাদের হাতছাড়া হতেই পারে।

 

অতীত থেকে শিক্ষাগ্রহণ

ক্ষমতার এই পরিবর্তনশীলতাকে যদি আমরা সঠিকভাবে বুঝতে পারি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত জীবন ও মানসিকতাকে সুস্থ ও সুন্দর করে তুলতে পারে। আমাদের পূর্বপুরুষের উদাহরণ আমাদের শেখায়, ক্ষমতা আসবে আবার চলে যাবে। কিন্তু আমরা কীভাবে ক্ষমতার সময় আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি, সেটিই আমাদেরকে প্রকৃতভাবে মূল্যায়িত করবে।

 

যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের পতন ঘটে। আবার যারা নিজেদের ক্ষমতাকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করেন, তাদের প্রভাব মানুষের মনে দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। অতএব, ক্ষমতার পরিবর্তনশীলতা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। ক্ষমতার আসল মূল্য নির্ভর করে কেবল আমাদের দায়িত্ব ও সৎ আচরণের ওপর।

 

ক্ষমতা হলো পৃথিবীর একটি চক্রীয় ধারা। এটি একসময় আপনার হাতে থাকবে, আবার অন্য সময় অন্যের হাতে চলে যাবে। আমাদের মূল দায়িত্ব হলো, এই ক্ষমতাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা এবং অন্যকে সম্মান করা। কারণ সময় একদিন সবকিছু ফিরিয়ে দেয়। তাই আমাদের আচরণ ও কর্মফল আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে। ক্ষমতার আসন সাময়িক, কিন্তু সৎ কাজ ও মানবিক মূল্যবোধ মানুষকে দীর্ঘস্থায়ী করে তোলে।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park