এইচ,এম শাহেদুল ইসলাম তানভীর,
(কাসেমী রহ: এর মানস সন্তান)
_দুই হাজার তেইশের মাঝামাঝি সময়ে ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ কুমিল্লা জেলার কাউন্সিল উপলক্ষে থানা-উপজেলায় দাওয়াতি কর্মসূচীর অংশ হিসেবে চৌদ্দগ্রামের বেশ ক’টা মাদ্রাসায় সফরের সুযোগ হয়। আলহামদুলিল্লাহ।
চৌদ্দগ্রাম পৌর ভবনের অপজিটে অবস্থিত মাদ্রাসা-ই হুসাইনিয়া ও ঐতিহ্য বাহী জামিয়া ইসলামিয়া নারানকরা সহ বহু জায়গায় জমিয়ত ও হেফাজতের সাবেক মহাসচিব, বাংলার মাদানী, শায়খুল হাদীস মাওলানা নুর হুসাইন কাসেমী রহ: এর সাথে জড়িত সৃতি সমূহের আলাপচারিতা যারপরনাই অবাক ও মুগ্ধ করেছে!
_তন্মধ্য হতে হুসাইনিয়ার মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেব এবং নারানকরার মাওলানা আবুল কাসেম সাহেবের শেয়ারিং ছিল বেশ ইন্টারেস্টিং। কাসেমী রহ: এর নাম শ্রবণে ও বলনে তাঁদের আঁখি জোড়া ছলছল করে উঠেছিল, তন্ময় হয়ে বিমুগ্ধ নয়নে ক্ষনজন্মা আলোকিত মনীষার বর্নাঢ়্যময়- গৌরবগাঁথা কথা থেকে আলো নিয়েছিলাম। প্রতিটি কথা কর্ণকুহর ভায়া হৃদয়ের ডায়েরিতে নোট করে রেখেছিলাম। অদ্যবদি সেই সুখানুভূতির আবেশে অভিভূত হই।
_সফর বৃত্তান্ত অতি দীর্ঘ, তদুপরি আমাদের প্রিয় রাহবার সংশ্লিষ্ট কিছু মধুময়ী সৃতির চুম্বকাংশ পাঠক সমীপে রোমন্থন করা হলো-
মাওলানা আবুল কাসেম সাহেবকে স্বীয় পরিচয় প্রদান করলাম এভাবে যে – “আসসালামু আলাইকুম, আমরা বারিধারা থেকে এসেছি, ছাত্র জমিয়ত কুমিল্লা জেলা কাউন্সিলের দাওয়াত নিয়ে, এতদশ্রবণে তিনি সৃতি বিধুরতা তথা অতীতের সুখ সৃতির বয়ানে আপ্লূত হয়ে পড়েন, হাত ধরে হোটেল অভিমূখী হয়ে পথচলা শুরু করতেই বলে উঠলাম হযরত, আমরা নাস্তা করে এসেছি, কিন্তু স্নেহময় আপ্যায়ন থেকে বাঁচতে পারলাম না, সিঙ্গারা ও চায়ের অর্ডার দিলেন, ফাঁকে বলা শুরু করলেন- কাসেমী রহ: এর সাথে আমার বহুবার মোলাকাতের তৌফিক হয়েছিলো, তৎকালীন সময়ে আমি ঢাকা মহানগরে জমিয়তের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছিলাম,একসময় অনেক কাজ আঞ্জাম দিয়েছি,অনেক বুজুর্গ এবং ভালো একজন মানুষ ছিলেন,ইত্যাদি ইত্যাদি বললেন। আল জমিয়ত পত্রিকারও আলোচনা করলেন। নামাযের পর সকল ছাত্রদের মাঝে বয়ানের এলান করলেন, এবং নতুন প্রজন্মের মাঝে কাসেমী রহ: এর চিন্তা-চেতনা ও জমিয়তের পরিচিতি তুলে ধরলেন, আমরাও আমাদের মতো দাওয়াত দিলাম। মুনাজাতের মাধ্যমে মজলিস শেষে বিদায় নিলাম।
_মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেবের সম্মানিত পিতা মুহতারাম সাইয়েদ জাকারিয়া দা:বা:এর সাথে মোলাকাতে পরিচয় দিলাম, ভাব আদান-প্রদান শেষে তিনি বললেন – মাওলানা নুর হুসাইন কাসেমী রহ: ছিলেন সকল গুনের আঁধার, জামে শাখসিয়্যাত, সমকালীন শ্রেষ্ঠ আলেম ও আপোষহীন মুরুব্বি। উনার মতো বুজুর্গ এবং মুখলিস আলেম বর্তমানে খুবই অপ্রতুল, কারো সমালোচনা করতেন না, আরো অনেক কিছু বললেন, দোয়া চেয়ে বিদায় নিলাম। পরবর্তী সময়ে মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেব উনার বাসায় নিয়ে গেলেন, সুন্দর- পরিচ্ছন্ন, সাজানো-গোছানো বাসা, মাশা-আল্লাহ! তিনি বললেন এ বাসাটা হুজুরের নির্দেশেই করা হয়েছিল, নিয়ে গেলেন মসজিদের অভ্যন্তরের অসাধারণ সুন্দর একটি কামরায়, বললেন এটি কাসেমী রহ: এর জন্যই তৈরি করা হয়েছিল,হুজুর যখন আসতেন এখানেই বিশ্রাম নিতেন, এই যে এত দালান দেখছো মাদ্রাসার সব হুজুরের দোয়া-পরামর্শ সাপেক্ষে করা হয়েছে। হুজুর ছিলেন বড় দিলওয়ালা মানুষ, হিম্মতের পাহাড়, আমি হুজুরের নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র না, তারপরও আমাকে ঈর্ষনীয় মহব্বত করতেন…………….।
এভাবে প্রায় জায়গায় হুজুরের গুণাবলি আর বর্নাঢ়্যময় জীবন গাঁথা শুনে হুজুরের শানে কাঁচা হাতের কাঁচা কলমে কিছু পঙতি লিখেছিলাম–
ডাগর ডাগর চোখ যে তাঁহার মুক্তো ঝরা হাসি,
হে ক্ষনজন্মা মহা-মনীষী তোমায় বড্ড ভালোবাসি।
হে ক্ষনজন্মা কাসেমী,জাতি কে তুমি করেছিলে উজ্জীবিত,
বাতিল,অপশক্তি,রা আজও তোমার চেতনার ভয়ে ভীত।
হে ক্ষনজন্মা,তুমি ছিলে সিয়াসতের সিপাহসালার,
তুমি ছিলে ইলমের অন্য – অনন্য এক শাহসাওয়ার।
হে ক্ষনজন্মা রাহবার,তুমি ছিলে এপার বাংলার মাদানী,
শায়খুল হিন্দ,ও শায়খুল ইসলামের সুযোগ্য উত্তরসূরী।
হে ক্ষনজন্মা আকাবির,তুমি ছিলে জমিয়ত-হেফাজতের প্রাণ,
তোমায় হারিয়ে ভালো নেই মোরা,দুর্দিনে তুমিই ছিলে মোদের ত্রান।হে ক্ষনজন্মা,আজও কাটিয়ে উঠিনি তোমায় হারানোর শোক, তাইতো বিরহের যাতনায় তোমায় নিয়ে লিখলাম কিছু শ্লোক।
হে ক্ষনজন্মা,তুমি ছিলে মানুষ গড়ার কারিগর,অপার প্রতিভার দিকপাল,তুমি ছিলে সবার আশা,ভরসা তোমার অন্তর টা ছিল আকাশসম বিশাল।
রহিমাহুল্লাহু রহমাতান ওয়াসিয়াতান।
উনত্রিশ-নয়-চব্বিশ।
নিউমার্কেট থেকে নতুন বাজার যাওয়ার বাসে বসে।