1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:১২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

অপরাজিতা — মোঃ আসিফুর রহমান 

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১১৬ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

গ্রামের ছোট মেয়ে অপরাজিতা। ছোট বেলা থেকেই চাঞ্চল্যকর প্রকৃতির। বনে-বাঁধারে ঘুরে ঘুরে বড় হতে থাকে। সে ছিল মিশুক, গ্রামের সবার সাথে মিলেমিশে চলা তার স্বভাব। বন্ধু -বান্ধবী দের নিয়ে গ্রামের খালে- বিলে বনে প্রান্তরে ঘুরে বেরিয়ে পার হয়েছে ছেলেবেলা। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী। সে নদীতে সাঁতার কেটে এই পার থেকে ঐ পার যেতো। বিকাল বেলায় পাড়ার সাথীদের সাথে খেলাধুলা করে সময় কাটাতো। এক সাথে মিলেমিশে সাথীদের নিয়ে স্কুলে যেত। সবাই দামী পোশাক পরিধান করে স্কুলে আসে কিন্তু  অপরাজিতা সাধারণ বেশে স্কুলে আসে। সে ছিল মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাকে নিয়ে পরিবারের যত চিন্তা চেতনা। তার বাবা রফিক উদ্দীন সামান্য বেতনে নীলগঞ্জের একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার বাবার সামান্য অর্থ দিয়ে তাদের পরিবারে ভরনপোষণ চলতে থাকে। একদিকে তার পড়াশোনার খরচ অন্যদিকে তার দাদা-দাদির চিকিৎসা খরচ মেটাতে হিমশিম খেয়ে যায়। তাদের অভাব অনটনের সংসারে ঝগড়া- বিবাদ লেগেই থাকে। এসবের মধ্যে দিয়ে বড় হতে থাকে অপরাজিতা।

 

মেধাবী ছাত্রী অপরাজিতা। ক্লাসের প্রতি পরিক্ষায় প্রথম স্থান অধীকার করে। হঠাৎ একদিন ক্লাস পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে না। বাংলা সাবজেক্ট এ ফেল যায়। এতে তার বন্ধুরা হাসাহাসি করতে থাকে। পরিক্ষায় প্রথম হওয়া তার বন্ধু দীপ্ত উপহাস করতে থাকে। এতে অপরাজিতা ভেঙ্গে পড়ে না। তার মনে চাপে তীব্র জেদ। গভীর পড়াশোনা মনোযোগী হয়।ক্লাসে নিয়মিত আসে এবং রুটিন মাফিক পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকে। যে বিষয়টুকু বুঝতো না আমার ক্লাসে এসে সে সব বিষয়ে বুঝে নিতো। নিজের ভুলগুলো ঠিক করে নিতো। এভাবে আত্নবিশ্বাসী হয়ে উঠে অপরাজিতা।  ধীরে ধীরে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে।  অপরাজিতার বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল দিলে প্রথম স্থানে দেখা যায় অপরাজিতার নাম। তার বন্ধু দীপ্ত এক বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে পারে না। অপরাজিতার পরিশ্রমের ফসলে খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠে তার বাবা মা।

 

অপরাজিতা নগরের স্বনামধন্য একটি কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। নীরপুর গ্রামে প্রথম হিসেবে এত বড় কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় সে।  কিছু দিন তার বাবা কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। ভালোই দিন কাটছিলো তাদের। হঠাৎ তার বাবা রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যায়। এতে পরিবারে নেমে আসে দুঃখ – কষ্ট। পরিবারে রোজগারের মতো কেউ নাই। একদিকে নিজের পড়াশোনা অন্যদিকে ফ্যামিলির খরচ এসব ভেবে ভেবে তার মাথা নাড়াচাড়া দিয়ে উঠে। সে শহরে বিভিন্ন দেয়ালে লিফলেট টাঙ্গিয়ে টিউশনির জন্য বিজ্ঞাপন দিতে থাকে। অবশেষে দুইটা টিউশনি পায়। কিন্তু এ টাকায় তাদের চাহিদা পূরন করা সম্ভব না তাই সে একটা বাসায় কাজ করেন। এভাবে কষ্ট করে পরিবারের খরচ পূরন করতে থাকে। কখনো কোনোবেলা না খেয়ে দিন কেটে যায় অপরাজিতার।

 

সে দমে যাওয়ার পাত্রী নয়। স্রোতের প্রতিকূলে সাতার কাটতে শিখেছে।  বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মাঝে ও দুঃখ কষ্ট করে উচ্চ মাধ্যমিক এবং অর্নাস পাশ করে সে।  মাস্টার্সে অধ্যায়নরত অবস্থায় অপরাজিতার বিয়ে হয়ে যায়। মধ্যবিত্ত জীবনের কষ্ট লাঘব করতে  বিয়ে করতে রাজি হয়। বন্ধ হয়ে যায় ছাত্রী জীবনের অধ্যায়। শুরু করে নতুন জীবন, নতুন পরিচয়। নিজ পরিচয়, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই শুরু হয় সংসার জীবনের ঝামেলা। তার বন্ধু – বান্ধবীরা নিজ নিজ পরিচয় গঠন করে। তার মাঝে জাগে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার তীব্র বাসনা। তার স্বামী নীল। পেশায় একজন মাস্টার্স পাশ করা বেকার। তিনি নেশাগ্রস্ততে আসক্ত। বিয়ের পরে তাদের সংসারে দেখা যায় অভাব অনটন। এর মাঝে তিনি নেশা করে বাসায় আসে। এতে অপরাজিতা ভয় পেয়ে যায়। এসবের মাঝে  সংগ্রাম করতে করতে অপরাজিতার বুক হাহাকার করে উঠে। খোলা জানালার পাশে বসে ভাবতে থাকেন কলেজ জীবনের কথা। তার বাবা মারা যাওয়ার পর  সে কষ্ট করে পরিবারের হাল ধরছে। কখনো খেয়ে বা কখনো না খেয়ে দিন পার করতো। বার্ষিক পরিক্ষায় ফেল যাওয়া  তার স্কুল বন্ধু দীপ্ত আজ বড় সরকারি অফিসার।  অথচ তিনি প্রথম হয়ে ও পূর্বের ন্যায় কষ্টসাধ্য করে জীবন কাটাতে হচ্ছে।

 

অপরাজিতা ছাত্রীজীবনে টিউশনি এবং কাজ করে কিছু টাকা সংরক্ষণ করে রাখে। তিনি সিধান্ত নেয় এই টাকা দিয়ে অনলাইনে একটা ব্যাবসা করবে। অপরাজিতা তার স্বামী নীলের কাছে প্রস্তাব রাখে, আমি অনলাইনে ব্যাবসা করতে চাই। নীল জানতে চায়, এত টাকা কই পাবে? তখন অপরাজিতা নীলকে সংরক্ষিত টাকার কথা বলে। এতে অনলাইনে ব্যাবসা করার জন্য নীল সম্মতি জানায়। অনলাইনে ব্যবসা ভালোই চলছিলো। অপরাজিতা নীল দম্পতি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। নীল অপরাজিতাকে ব্যাবসার কাজে সাহায্য সহযোগিতা করে। তারা ভাবে ব্যাবসা করে ভালোই দিন কাটাতে পারবো, সাবলম্বী হতে পারবো। তাদের এই ভাবনা কিছু দিন পর নিরর্থক প্রমান হলো। অনলাইন এক প্রতারকের ফাঁদে পড়ে সব হারালো। সব টাকা নিঃশেষ হয়ে গেল। অপরাজিতার শূন্য হৃদয় হাহাকার করতে লাগলো। তাদের র্দুদশার দিনে ক্রানকর্তা হিসেবে আর্ভিভূত হয় স্কুল জীবনের বন্ধু দীপ্ত। দীপ্ত দেখতে পায় অপরাজিতার জীবন দর্শন। ছোট সময় থেকে পরিশ্রমি মেয়ে অপরাজিতা। জীবন নামক যুদ্ধে সংগ্রাম করে চলছে তার জীবন। তাই দীপ্ত অপরাজিতার স্বামীকে কর্মচারী পদে নিয়োগ দেন। নীল নতুন চাকরি পেয়ে তাদের সংসার নিয়ে আশার স্বপ্ন দেখে। গুছিয়ে নেয় তাদের জীবন। স্বাভাবিক নিয়মে তাদের সংসার চলতে থাকে। খুশিতে মেতে উঠে অপরাজিতা।

 

নীলের অফিসের ছুটিতে অপরাজিতা তাদের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসে। গ্রামের বাড়িতে থাকে তার মা এবং ছোট ভাই আলভি। আলভি দশম শ্রেণির ছাত্র। তার বোনের মতো আলভি মেধাবী ছাত্র। পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী। স্কুলের সকল শিক্ষক আলভির কাছে অপরাজিতার প্রশংসা করতে থাকে। অপরাজিতার থেকে আলভি অনুপ্রানীত হয়। ছোট সময় থেকে আলভিকে কোলে পিঠে করে মানুষ করছে। আলভির পড়াশোনার খরচ অপরাজিতা বহন করে। তার বোনের মতো তার অর্থকষ্টে পড়তে হয়নি। অপরাজিতা সেই পুরানো দিনের মতো গ্রাম ঘুরে বেড়ায়। সেই শৈশবকাল ঝরেরদিনে মন্টু মিয়ার আমবাগান থেকে আম কুড়াতো। আমবাগান এখন নেই, ঘরবাড়ি তৈরি করে বসতি স্থাপন করছে। নদী- নালা, খাল-বিলে তেমন পানি নেই। অনেকে জমি ভরাট করে বসতি গড়ে তুলছে। নদীর সেই যৌবন আর দেখা যায় না, পলি জমে ভরাট হয়েছে। শৈশবকালে বিল থেকে শাপলা তুলে আনতো। সেই বিল আগের মতো আর নেই। অপরাজিতা নিজ চোখে গ্রামের প্রাকৃতিক অবয়বগুলোর বৈচিত্র্য  দেখতে পাচ্ছে। ছুটি শেষ হলে অপরাজিতা আবার তার স্বামীর সাথে নগরে যায়। অপরাজিতা বাড়ি গিয়ে লক্ষ করলো তাদের পুরাতন বাড়িটা আর ভালো নেই। বাড়িতে কোথাও ফাটল ধরেছে,আবার কোথাও ভেঙ্গে পড়ছে। তাই অপরাজিতার মনে ভাবনা জাগে কীভাবে বাড়িটি নতুনভাবে গঠন করা যায়। নীলের সাথে পরামর্শ করে বাড়িটি নিয়ে। পরে অপরাজিতা সিদ্ধান্ত নেয় পুনরায় টিউশনি করবে। সাথে তিনি  দর্জির কাজ শিখে নেয়।

 

জীবনের কত ইচ্ছে কত ত্যাগ, স্বপ্ন ছিল বিয়ের পরে বিয়ের পর সখ, ইচ্ছে পূরন হবে। সুখ,দুঃখ ক্লান্তি দুর হয়ে যাবে তা আর হলো কই! কতই না স্বপ্ন বুনতো অপরাজিতা, স্বামী নীলের ঘরে এসেও সেই স্বপ্ন আর পূর্ণতা দিতে পারে নি। বিয়ের আগের মতো সংগ্রাম করে বাঁচতে হচ্ছে। পরিবারে খরচ বাঁচিয়ে নীল এবং অপরাজিতার অর্থ সংরক্ষন করে রাখে। এভাবে কয়েকবছর টাকা সংরক্ষণ করে সাথে কিছু টাকা লোন নিয়ে অপরাজিতার বাড়িতে নতুন একটা পাঁকা বাড়ি নির্মান করে। নতুন বাড়ি পেয়ে আনন্দে মেতে উঠে সবাই।  তাদের সকলের মনে ভরে উঠে প্রশান্তির জোয়ার। কিন্তু এই জোয়ার বেশি দিন টেকেনি। তাদের এলাকায় প্রবল বন্যা দেখা দেয়। পানির স্রোত মহা বেগে বইতে শুরু করে। এতে নীরপুর গ্রাম নদীভাঙ্গনের শিকার হয়। কতশত স্বপ্ন বিলীন হয়ে যায় নদীগর্ভে। একের পর এক কৃষিজমি হারিয়ে যায় রাক্ষসী নদীতে। কত মানুষের আহাজারিতে কম্পিত হয় গ্রাম। গ্রামের বসতবাড়ি গুলো একের পর এক রাক্ষসী নদী খেয়ে নেয়। তিলে তিলে পরিশ্রমে গড়ে উঠা অপরাজিতার বাড়িটি ও রক্ষা পায় নি। অপরাজিতা, আলভি চেয়ে চেয়ে দেখে এর চেয়ে তাদের আর কিছু করার নাই। মাথাগোঁজার মতো বসতবাড়িটা ছাড়া কিছু নাই তাদের। এভাবে নিভে গেলো অপরাজিতার স্বপ্ন।

 

অপরাজিতা

মোঃ আসিফুর রহমান
ঠিকানাঃ উপজেলাঃ ভাঙ্গা, জেলাঃ ফরিদপুর।

 

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park