— মোঃ রবিউল ইসলাম খান রবিন (রাশশাদ)
আজ ২১ মে, ২০২৫। পঞ্চমবারের মতো পালিত হচ্ছে জাতীয় চা দিবস। সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। সেই ঐতিহাসিক যাত্রার ধারাবাহিকতায় আজ বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম চা উৎপাদনকারী দেশ। এ দিনটি শুধু এক কাপ চায়ের জন্য নয়, এটি আমাদের ইতিহাস, পরিশ্রম আর সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। এ দিনে চা শিল্পের প্রতিটি স্তরে জড়িত মানুষদের জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
একটি চা বাগানের জীবনযাত্রা খুব ভোরে শুরু হয়। যখন শহর তাকে ঘুমে, তখন টিলায়-টিলায় হাঁটতে শুরু করে সারি সারি মানুষ—চা শ্রমিকরা। তাদের হাতে ঝোলানো ঝুড়ি, পিঠে ভর ধরা রোদ, চোখে নতুন দিনের স্বপ্ন। চা পাতার কোমল চুলায় যে ঘ্রাণ আমরা পাই, তার পেছনে থাকে এ শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রম ও নীরব আত্মত্যাগ।
চা শ্রমিকদের পরিশ্রম যাতে সঠিকভাবে কাজে রূপ নেয়, তা নিশ্চিত করেন সাহেব, বাবু ও সর্দারেরা। টিলা সাহেব মাঠে থাকেন, ফেক্টরি ইনচার্জ ব্যস্ত থাকেন প্রক্রিয়াজাতকরণে, অফিস ক্লার্করা হিসাব রাখেন, যেন বাগান চলে শৃঙ্খলায়। ডেপুটি ম্যানেজার, এজিএম, ডিজিএম, জিএম—এঁরা সবাই চা বাগানের সার্বিক ব্যবস্থাপনার চালিকাশক্তি। আর সেই ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রবিন্দুতে যিনি থাকেন, তিনি চা বাগানের ম্যানেজার—যার নেতৃত্বে প্রতিদিন নতুনভাবে জেগে ওঠে একটি বাগান।
আজকের এই দিনে আমি গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছি চা শিল্পের প্রতিটি যোদ্ধাকে।
যে কিশোরটি শ্রমিক লাইনের পাশ দিয়ে কলসি বয়ে নিয়ে যায়,
যে মেয়ে ঝাঁকায় পাতা, রোদের মধ্যে ঘামে ভিজে যায়,
যে অফিস সহকারী হিসাবের খাতায় চোখ রাখে,
যে ম্যানেজার রাত্রি জেগে রিপোর্ট পাঠান,
সবার প্রতি রইল আমার হৃদয় থেকে শ্রদ্ধা।
চা শুধু পানীয় নয়, এটি আমাদের ইতিহাসের ধারক, অর্থনীতির চালিকাশক্তি এবং সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। চায়ের টেবিলে জন্ম নেয় আলোচনা, বিতর্ক, বন্ধুত্ব, প্রেম—আর সেইসব গল্পের পেছনে থাকে অগণিত মানুষের ঘাম, সময় আর ভালোবাসা।
পঞ্চম জাতীয় চা দিবসে আমি এই কামনা করি—চা বাগানের প্রতিটি মানুষ যেন সম্মান, ন্যায্য অধিকার ও ভালোবাসা পায়।
চা হোক শান্তির, শ্রমের আর সম্মিলনের প্রতীক।
শুভ জাতীয় চা দিবস ২০২৫।