লেখিকাঃ মোছাঃ সাথী খাতুন
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। একটি তারিখ যা বাঙালির হৃদয়ে গর্ব, আত্মত্যাগ এবং বিজয়ের স্মারক হয়ে রয়েছে। ৫২ বছরের এই পথচলায়, বিজয় দিবস শুধু একটি দিন নয়, এটি আমাদের জাতির অহংকার, আত্মপরিচয়ের প্রতীক।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নির্মম হামলার বিরুদ্ধে বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম শুরু হয়েছিল। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, লাখ লাখ শহীদের আত্মদান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহসিকতার মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল এই বিজয়। ১৬ ডিসেম্বর সেই গৌরবময় দিনের উদযাপন, যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করেছিল এবং বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি পেয়েছিল।
বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ। এদিন আমরা স্মরণ করি সেই বীরদের, যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নে। শহীদদের রক্তে ভেজা এই মাটি আমাদের জাতীয়তাবাদী চেতনার মূলে গেঁথে আছে। এ কারণে, বিজয় দিবস শুধুমাত্র অতীতের গৌরবের স্মৃতি নয়, এটি আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের পথচলার দিশারি।
আজকের দিনে আমাদের দেশের অর্জনগুলোকে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। আমাদের রপ্তানি শিল্প, বিশেষত তৈরি পোশাক খাত, বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনেও বাংলাদেশ একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। দুর্নীতি, বৈষম্য এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের মতো সমস্যা আমাদের সামনে বিরাট বাধা সৃষ্টি করছে। আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে এগিয়ে যাই, তাহলে এই চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করা সম্ভব। আমাদের উচিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়া।
১৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতির জন্য একটি প্রেরণার দিন। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে ঐক্য, সাহস এবং আত্মত্যাগের মাধ্যমে যেকোনো অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। আসুন, আমরা সকলে মিলে এদিনে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠি এবং প্রতিজ্ঞা করি, বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ এবং ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলব।
বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।