মুফতি হারুনুর রশিদ হাবিবুল্লাহ্ মাহমুদী
'এসো, এসো এসো হে বৈশাখ তাপস/ নিঃশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে'।
আজ পহেলা বৈশাখ প্রভাত হতে আরম্ভ হয়ে গেলো কবিতা বন্দি ক্যাসেটের বিরতিহীন গান বাজনা।
'জীর্ণ, পুরাতন যাক ভেসে যাক' গানে গানে মেতে ওঠে, জেগে ওঠে, নিজকে নতুন সাজে সাজিয়ে তোলে রাজধানীর তরুণ-তরুণীরা।
রমনা বটমূলে ভোর থেকে অসংখ্য মানুষের ভীড় জমতে থাকে। সকলের না হলেও অধিকাংশের পরিধানে থাকে খদ্দরের পাঞ্জাবি-পাজামা বা ধুতি ও কপালে তিলক। আর তরুণীরা বাঙালি ইবলিশ সাজার সুতিব্র বাসনায় হলুদ লাল শাড়ি, কপালে সিঁদুর, হাতে শাঁখা পড়ে চারুকলা ইনস্টিটিউট, টিএসসি চত্বর বা অন্য কোন স্থান থেকে 'পহেলা বৈশাখ বরণ' মিছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে বের হয়। বিভিন্ন পার্কে, উন্মুক্ত স্থানে নাচ গানের আয়োজন করে। নানা পণ্যের মেলা বসে। দোকান খোলেন তরুণীরা পান্তা ভাত ও ইলিশ মাছের। আর তরুণরা হয় তার খদ্দের। আরো এক ধাপ অগ্রসর হয়ে পান্তা বিক্রেতা উগ্র চোখ ঝলসানো সাজে সজ্জিতা তরুণীর হাঁকতে থাকে, এক সানকি নিজের হাতে খেলে ২০০ টাকা। আর খাওয়াইয়া দিলে ১০০০ টাকা। কিছু পান সিগারেট ও চায়ের দোকানে থাকে প্রচণ্ড ভিড়। কারণ তার বিক্রেতা থাকে নব সাজে সজ্জিতা শর্ট পোশাকে অর্ধ-নগ্ন যুবতীরা। তাদের কোমল হাতের বানানো চা ৫০ টাকা। একটি সিগারেট ৫০ টাকা। একটি পান বানিয়ে দিলে নিম্নে তিন টাকা। আর খাওয়াইয়া দিলে কেউ কেউ ১০০,৫০০,১০০০ টাকাও নাকি দিয়ে দেয়। সুস্থ-সবল হাত পা বিশিষ্ট যুবকরা পঙ্গু ও বিকলাঙ্গ হয়ে অন্যের হাতে তোলা পান্তা ভাত খাওয়ার অভিনয় করে তারা কি বুঝাতে চায় যে, আমরা সত্যিই তাদের সামনে গেলে পঙ্গু এবং অবশ হয়ে যাই। এরচেয়ে পথঘাটের ভিক্ষুক ভিখারিনীর আহারে দৃশ্যটি নৈতিকতার দিক দিয়ে অনেক উন্নত নয় কি? পান্তা ভাত মুখে তুলে দেয়, যারা হা করে গলধঃ করণ করে থাকে তারা কোন স্বামী স্ত্রী নয়, মা-ছেলেও নয়, ভাই বোনও নয়। ফুটপাতে দূর্বা ঘাসে বসে অপরিচিতা কিশোরী যুবতীর হাতে পান্তা খেতে যারা যায় তারা পতিতা মানসিকতা সম্পন্ন, আর যারা খাওয়াইয়া দেয় তারা বাজারী পতিতাদের চেয়ে কি উৎকৃষ্ট? কি আছে তাদের হাতে? তাদের সামনে আসলেই যুবকরা পক্ষঘাত রোগীর মত হাত-পা অবশ করে হাঁস মোরগ আর জন্তু জানোয়ারের মতো শুধু গলা বাড়িয়ে দেয়। এসব কোন খ্রিস্টান হিন্দু সংস্কৃতিতেও তো নেই ।তবে এটা বাংলাদেশি অধঃপতিত মুসলিম তরুণ-তরুণীদের নব্য কোন সংস্কৃতি উদ্ভাবন হচ্ছে কি? বিচিত্র সংস্কৃতি ও বিচিত্র মানসিকতাই বটে। এরাই ইসলামের, ধর্মের, ফতোয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার। কারণ ফতুয়া থাকলে তারা রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের নামে নারীদেহের বস্ত্র হরণ করতে পারবে না। প্রকাশ্যে দিবালোকে রিকশা আরোহী যুবতীর গালে অতর্কিত চুমু দিতে পারে না।
অনেক তরুণ-তরুণীরা সেদিন বিভিন্ন প্রকারের জন্তু জানোয়ার হাতি, ঘোড়া, কুকুর, বিড়াল, পেঁচা, গরু-ছাগল, বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, কচ্ছপ,মাছ,সাপ, বানর ইত্যাদির মুখচ্ছবির মুখোশ পরিহিত অবস্থায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। তাদের ফটকা ও উলুধ্বনির আওয়াজে রাজধানীর রাত বারোটার নীরবতাও মুখ থুবরে পড়ে। কোথাও কোথাও উলুধ্বনি দেয়া হয়। বর্ণাঢ্য জংলী মিছিল শহরের যুবক-যুবতীরা মুখে মুখোশ পরে, মুখে ছাই মেখে, অদ্ভুত জংলী রূপ ধারণ করে, যা দেখলে আসল জংলীরাও হয়তো লজ্জায় মুখ লুকাবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে।
আসলে যাদের জীবনের আশেপাশে সঠিক গাইড নেই সামনে নেই কোন দিশারী এবং নেই যাদের জীবনের ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন মূল্যবোধ, তারাই মাথা থাকা সত্ত্বেও জন্তুর মাথার প্রতিকৃতি নিজের মাথায় চাপায়, সুন্দর অবয়ব রেখেও জানোয়ারের অবয়ব ভালবাসে, নিজের প্রভু আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কাছে মঙ্গল কামনা না করে মঙ্গলা দেবীর নামে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে মঙ্গল ভিক্ষা করে। নিজেদের জাতীয় ধ্বনি বাদ দিয়ে বিজাতীয় উলুধ্বনি দেয়।
যে বাংলা আরবী সন ভিত্তিক যা এক মুসলমান জ্যোতির্বিদ আমির ফতেউল্লাহ সিরাজীর মস্তিষ্কপ্রসূত,তা এভাবে উদযাপন করা কি উচিত? উৎসবের শুরু ও শেষে এভাবে কথা উপস্থাপন করা হয় যে, এই সাল তৈরিতে মুসলমানদের কোনো অবদান নেই। বরং হিন্দু রাজারাই এ সালের প্রবর্তন করেন। তাই এই সনের বরণ অনুষ্ঠানের সর্বপ্রকারের আয়োজন, আমোদ-প্রমোদ ভিন জাতিয় সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে। বাংলা সনের ইতিহাস যদি আপনার জানা না থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি মনে করবেন, অমুসলিমদের কোন অনুষ্ঠান চলছে।
বাংলা বর্ষের ইতিহাস
বাংলা সন যা এখন প্রচলিত, তার জন্ম হয় হিজরি সনের গর্ভ থেকে। যা প্রবর্তন হয় মোগল সম্রাট আকবরের সময়। ফসলী সন' হিসেবে এর প্রবর্তন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের পর হযরত ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হিজরত কে উপলক্ষ করে মহরম মাস থেকে ইসলামি বর্ষপঞ্জি হিজরী সন প্রবর্তন করেন।
৫৯৮ হিজরী সন ১২০১ খ্রিস্টাব্দ ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজীর বঙ্গ বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের হিজরী সন রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচলিত হয়। মোগল সম্রাট আকবরের রাজ্য অনেক বিস্তৃত ছিল। ফসল তোলা ও রাজস্ব আদায়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়, কারণ হিজরী সন চাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় সনটি ঋতুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনা। আকবরের কাছে সমস্যাটি তুলে ধরা হলে তিনি তার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে নতুন বর্ষপঞ্জি তৈরির দায়িত্ব অর্পণ করেন আমির ফতেউল্লাহ সিরাজীর উপর। তিনি ভেবেচিন্তে দেখলেন হিজরী সন চাঁদের সাথে সম্পর্ক থাকায় তা ঋতুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনা। সৌর সনের সম্পর্ক সূর্যের সঙ্গে থাকায় ঋতুর তাল অক্ষুন্ন থাকে। চন্দ্র সন একটি ঋতু অতিক্রম করে সেই ঋতুতে আবার ফিরে আসতে সময় লাগে ৩৩ বছর। আর সৌর সনের লাগে এক বছর। এই সময়ের ব্যবধান মাথায় রেখে আমির ফতেউল্লাহ সিরাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্রাট আকবর যে বছর পিতার স্থলাভিষিক্ত হন, সেই বছর থেকে হিজরী সন ৩৫৪ দিন গণনার স্থলে ৩৬৫ দিন গণনা করে যে সনটি উদ্ভাবন করেন, সেই সনটিই সুবেঃ বাংলায় এসে বাংলা সনে পরিণত হয়। ৯৬৩ হিজরী ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবর পিতার স্থলাভিষিক্ত হন। ১৫৫৬ থেকে হিসাব করে ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দ আমির ফতেউল্লাহ সিরাজী নতুন প্রস্তাব সম্রাটের দরবারে পেশ করেন। সম্রাট এক ফরমান এর মাধ্যমে এই নতুন সনটি প্রবর্তনের ঘোষণা জারি করেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, এ সময় সুবেঃ বাংলায় বারো ভূঁইয়া শ্রেষ্ঠ ঈসা খাঁ স্বাধীনভাবে বিশাল এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। ঈসা খাঁ কে দমন করার জন্যে সম্রাট আকবর সুবেঃ বাংলায় শাহবাজ খান কে প্রেরণ করেন। নতুন সনের প্রবর্তন এর বছরেই তাদের মধ্যে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে সাময়িকভাবে ইসা খাঁ পিছু হটে গেলেন, অচিরেই তিনি শাহবাজ খান কে পরাস্ত করতে সমর্থ হন। ১৫৮৬ খ্রিস্টাব্দে ইসা খাঁ সোনারগাঁওয়ে তার নতুন রাজধানী স্থাপন করেন। এতে ধারণা করা যেতে পারে যে, বাংলা সন ঈসা খাঁর সময়েই বাংলাদেশে এসে যায়। পরবর্তীতে ঈশা খাঁকে সম্রাট আকবর আগ্রাতে বিপুল সংবর্ধনা জানান এবং মসনদে আলী মার্জুবানে বাংলা খেতাবে ভূষিত করেন এবং ৩৬০০ টাকা আয়ের লাখেরাজ ভূসম্পত্তির জায়গীর ও বাইশটি পরগনার শাসনভার প্রদান করেন। সম্ভবত ইসা খাঁ নতুন সনের ব্যাপক প্রচারে অবদান রাখেন। এক তথ্যে জানা যায় ৯৬৩ হিজরী মুহাররম মাস ও পারসিক সুরমানি সনের ফেরীদুন মাস ধরে নতুন সন গণনা শুরু হয়। সেই সনে হিজরী মহররম মাস ছিল। বাংলাদেশে ছিল বৈশাখ মাস। পরবর্তীতে বৈশাখ তার স্থানে স্থির থাকলেও ক্রমান্বয়ে মহাররম ১০/১৫ দিন করে দূরে যেতে থাকে আবার তাকে বৈশাখে আসছে ৩৩ বছর লাগে। বর্তমান হিজরী ও বাংলা এর মধ্যে যে ব্যবধান তা ঐ ১০/১৫ দিনের কারণেই। অংক করে দেখলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
বাংলা সনের প্রবর্তক
সম্রাট আকবরের নির্দেশে আমির ফতেউল্লাহ সিরাজী প্রচলিত সন গুলোর উপর গভীর গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চন্দ্রবর্ষ গণনাকে সৌরবর্ষ গণনায় এনে নতুন সনের উদ্ভব ঘটান।
আমির সিরাজী পারস্যের সিরাজ নগরীর বাসিন্দা ছিলেন। জ্যোতির্বিজ্ঞান ও হিসাব বিজ্ঞানের উপর তাঁর অপরিসীম দখল ছিল। হিন্দুস্থানে তিনি জীবিকার সন্ধানে বিজাপুরের সুলতান আদিল শাহের দরবারে কর্ম জীবনের সূত্রপাত ঘটান। সুলতানের ইন্তেকালের পর চলে আসেন সম্রাট আকবরের দরবারে। রাজা তোরমলের অধীনে সরকারি অর্থ সচিব হিসেবে যোগ দেন। রাজস্ব ও ভূমি সংক্রান্ত সংস্কার কাজে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি শুধু সুপণ্ডিতই নয় বরং উঁচু স্তরের একজন সুফিও ছিলেন। কর্মদক্ষতার স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে আমিনুল হক বা রাজ্যের বিশ্বস্ত জন খেতাব দেওয়া হয়। সম্রাট আকবরের নবরত্ন সভার সদস্য না হয়েও দরবারে তার বিশেষ মর্যাদা ছিল। তিন হাজারী মন সবদার পদ লাভ করে আমীরদের অন্তর্ভুক্ত হন। আবুল ফজল আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে লিখেনঃ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যদি হয়ে যায়, তবুও আমির সিরাজীর মস্তিষ্ক ইতিহাসের উপাদান সমূহ আবার উদ্ধার করতে পারবে, এ যোগ্যতা তার আছে।
মাস সমূহের নাম
হিজরী সনের মাস গুলোর পাশাপাশি সম্রাট আকবর প্রবর্তিত ইলাহি সন ও বাংলা সনের মাসগুলো হচ্ছেঃ
১) মহররম/ফেরীদুন/বৈশাখ,
২) সফর/আদিবেহেস্ত/জ্যৈষ্ঠ,
৩) রবিউল আউয়াল/খুরদাদ/আষাঢ়,
৪) রবিউল আখির/তীর/শ্রাবণ,
৫) জুমাদাল উলা/মরদাদ/ভাদ্র,
6 জুমাদাল উখরা/শাহরিয়ার/আশ্বিন,
৭) রজব/মিহির/কার্তিক,
৮) শাবান/আবান/অগ্রহায়ণ,
৯) রমজান/আজর/পৌষ,
১০) শাওয়াল/দে/মাঘ,
১১) জিলক্বদ/বহমান/ফাল্গুন,
১২) জিলহজ্জ/ইস্কান্দর/চৈত্র।
বাংলা সনের সংস্কারক
পাকিস্তান আমলে বাংলা সনটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সংস্কারের দায়িত্বভার প্রদান করা হয় ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর উপর। তিনি অত্যন্ত খোদাভীরু এবং উচ্চ পর্যায়ের সুফি সাধক ছিলেন।
ডঃ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে সভাপতি করে বাংলা একাডেমী বাংলা পঞ্জিকা সংস্কার উপসঙ্গ গঠন করে। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা সন সংস্কার করেন। তাতে বাংলা সনের বৈশাখ মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রতি মাস ৩১ দিনে এবং আশ্বিন মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ৩০ দিনে গণনার সিদ্ধান্ত স্থির করা হয়। এই সিদ্ধান্তে এটাও স্থির করা হয় যে, অধিবর্ষ (লিপইয়ার) বলে পরিগণিত হবে। চৈত্র মাস ৩১ দিনে হবে। ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সংস্কারকৃত বাংলা সন গণনার এই নতুন রীতি বাংলাদেশে সরকারিভাবে প্রচলিত হয় ইংরেজি বিংশ শতাব্দীর আশি দশকের দ্বিতীয়ার্ধে।(অপসাংস্কৃতির বিভীষিকা)
উল্লেখিত ইতিহাস থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, এই ফসলী সন' বা আকবরী সন যা আমাদের দেশে এসে হয় বাংলা সন তা শুরু হয় ১৫৮৬ খ্রিস্টাব্দে। আরো জানা গেল যে, আমির ফতেউল্লাহ সিরাজী পারস্যের অধিবাসী আর সম্রাট আকবর ছিলেন দিল্লির বাসিন্দা। তাঁদের ভাষা ছিল ফার্সি। এখানে বাঙালিত্ব আনা হয় ইতিহাসের কোন তত্ত্বের ভিত্তিতে? 'বাঙালির কৃষ্টি-সংস্কৃতির সঙ্গে আবহমানকাল থেকেই জড়িয়ে আছে পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ রীতি' যারা একথা বলেছেন, তাদের তথ্য সম্পূর্ণরূপে ভুল। "আবহমানকাল" অর্থ তারা বুঝেন কিনা জানি না। যার অর্থ অনাদিকাল, আদিহীন। যে সনের সৃষ্টি ষোল শতকের শেষ প্রান্তে আবহমানকাল থেকেই কি করে জড়িয়ে থাকতে পারে তা আমাদের বোধগম্য নয়। সম্রাট আকবরের এই নতুন সন বাংলাদেশে প্রবর্তনের আগে বর্ষবরণ উৎসব কিভাবে কারা করত? স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, হিন্দু সংস্কৃতি এবং বাঙালি সংস্কৃতি এক নয়। যে সনের নির্মাতা, প্রবর্তনকারী মুসলমান, সে সনের উদযাপন অনুষ্ঠানে মুসলিম কৃষ্টির কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। এর সাথে যেন মুসলমানদের কোনো সম্পৃক্ততাই নেই। সম্পূর্ণ ভিন জাতীয় সংস্কৃতি তা উদযাপন করা হয়। এর চেয়ে পরিতাপের বিষয় আর কি হতে পারে। মুসলিম মনীষীদের চিন্তাভাবনা করা এখন সময়ের দাবি নয় কি?
Website: www.ichchashakti.com E-mail: ichchashaktipublication@gmail.com