1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৫৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

হেরে যাওয়া ভালোবাসার শেষ পরিণাম —– জাকির আলম

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৬৬ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

হেরে যাওয়া ভালোবাসার শেষ পরিণাম

জাকির আলম

চৌহালী, সিরাজগঞ্জ।

 

গ্রামের এক গরিব ঘরের সন্তান নাফিস। তিন ভাই-বোনের মধ্যে নাফিস সবার বড়। নাফিসের বাবা কৃষি কাজের সাথে যুক্ত। মা গৃহিণী। গ্রামের এক হাইস্কুল থেকেই নাফিস খুব কষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে এসএসসি পাস করেছে। তারপর কলেজে পড়ার মতো সামর্থ্য বা সৌভাগ্য তার হয়নি। তাই এসএসসি পাস করেই নাফিস একই গ্রামের এক বড় ভাইয়ের রেফারেন্সে শহরের এক বড় কোম্পানিতে চাকরি করার সুযোগ পায়। বেতন তেমন ভালো নয়। নিজের খরচ চালিয়ে পরিবারকে তেমন টাকা পয়সা দিতে পারবে না। তবুও চাকরিটা নাফিস কন্টিনিউ করতে থাকে। মাস শেষে যে বেতন পায় নিজের খরচ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট যা থাকে তাই পরিবারকে দিতে থাকে নাফিস। তাতেই খুশি তার বাবা-মা। এভাবেই কয়েক মাস চলতে থাকে নাফিসের।

 

গরিব ঘরের সন্তান হলেও নাফিস দেখতে অনেক স্মার্ট। যেমন লম্বা তেমন তার বডি ফিটনেস। বলতে গেলে একদম নায়কের মতো তার আকার আকৃতি। যে কোনো মেয়ের চোখেই সুপুরুষ সে। নাফিস যে কোম্পানিতে চাকরি করে সেই কোম্পানির মালিক হিন্দু ধর্মের অনুসারী। তাঁর একমাত্র মেয়ে সেঁজুতি। দেখতে ভীষণ সুন্দরী। আয়নার মতো ঝকঝকে তার দেহ সৌষ্ঠব। শহরের সবচেয়ে নামীদামি স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ে। যেহেতু বড়লোক বাবার একমাত্র সন্তান সেঁজুতি, তার চলাফেরা বড়লোক স্বভাবের হবে এটাই স্বাভাবিক। বাবার স্বপ্ন সেঁজুতিকে বড় ডাক্তার বানাবে। লেখাপড়ায় অত্যন্ত মেধাবী সে। তাই সবসময় লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে সেঁজুতি। কখনো বৃথা সময় নষ্ট করে না। এদিকে শুরু থেকেই নাফিস সেঁজুতিকে ফলো করতে থাকে। একটা সময় তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়। এভাবে যেতে থাকে কয়েক মাস। যতোই দিন গড়ায় ততোই গভীর হতে থাকে তাদের বন্ধুত্ব। কিন্তু তাদের সেই বন্ধুত্ব যে এক সময় ভালোবাসায় রূপ নিবে সেটা তারা কখনোই বুঝতে পারেনি। তখন তারা উভয় পরিবারকে ফাঁকি দিয়ে প্রেম করতে থাকে। কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারে না। ঘনঘন দেখা সাক্ষাৎ এবং ফোনে যোগাযোগ অনেক বেড়ে যায়। সেঁজুতির বাবা কোম্পানির কাজে সবসময় কাজে ব্যস্ত থাকে। দেশ-বিদেশে তাকে কোম্পানির কাজে ভ্রমণ করতে হয়৷ তাই তিনি সেঁজুতিকে তেমন সময় দিতে পারেননি। খোঁজ খবরও নিতে পারতেন না সবসময়। এই সুযোগে সেঁজুতি মুসলিম ছেলের সাথে প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ে।

 

সেঁজুতি আগে থেকেই জানতো নাফিসের পরিবার অনেক গরিব। তাই প্রায় সময় নাফিসকে টাকা পয়সা দিয়ে হেল্প করে সেঁজুতি। নাফিসকে সে অত্যধিক পরিমাণ ভালোবেসে ফেলেছে। তাই কোনো ভাবেই নাফিসকে সে হারাতে পারবে না। কিন্তু ধর্মীয় বিভেদ তাদের মিলনের ক্ষেত্রে চরম বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তখন সেঁজুতি স্বেচ্ছায় হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাফিসকে বিয়ে করতে উদ্যত হয়। সেঁজুতি আগে থেকেই জানতো মুসলিম ছেলের সাথে তার বিয়ে কোনোদিন তার পরিবার মেনে নিবে না৷ তাই তারা পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিয়ে বাবদ যতো টাকা খরচ হবে সব টাকা সেঁজুতি বহন করবে। তাই কয়েক লক্ষ টাকা সাথে নিয়ে সেঁজুতি তার ভালোবাসার মানুষ নাফিসের হাত ধরে অজানা গন্তব্যে বেরিয়ে পড়ে। মা-বাবার সব স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে সেঁজুতি পাড়ি জমায় অনেকটা দূরে। তারপর তারা কোর্টে গিয়ে উকিলের সাথে সব ধরণের শলাপরামর্শ সেরে সেঁজুতি ইসলাম ধর্মে পদার্পণ করে স্বেচ্ছায় নাফিসকে বিয়ে করে। এরমধ্যে তাদের উভয় পরিবারে সবকিছু জানাজানি হতে থাকে। তখন সেঁজুতির বাবা থানায় গিয়ে নাফিসের নামে নারী অপহরণের মামলা করেন। এদিকে নাফিসের বাবা-মা ছেলের চিন্তায় অস্থির অবস্থা। তারপর থানা থেকে ডিবি পুলিশ নাফিসের বাড়ি পর্যন্ত আসে৷

 

পুলিশের দাবি নাফিস এবং সেঁজুতি কোথায় আছে তার খরব জানাতে হবে নাফিসের বাবা-মাকে। অন্যথায় খুব খারাপ অবস্থা হবে তারা জানিয়ে দেয়। কিন্তু নাফিস এবং সেঁজুতি কোথায় আছে তারা কেউ জানেনা। নাফিস কখনো বলেওনি কোথায় আছে সে। সেঁজুতির বাবা অনেক জেদি মানুষ। মুসলিম ছেলের সাথে কখনোই তাঁর মেয়ের বিয়ে তিনি মেনে নিবেন না। সেজন্য যেকোনো ভাবে তিনি নাফিস এবং সেঁজুতিকে বের করে ছাড়বেন। যতোদিন তিনি তাঁর মেয়ে সেঁজুতিকে ফেরত না পাবেন ততোদিন তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। তাতে যতো টাকা খরচ হয় তিনি তাই করবেন। সেজন্য কয়েকটি থানায় তিনি নাফিস এবং সেঁজুতির ছবি দিয়ে রেখেছেন। ডিবি পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে থাকে তাদের দু’জনকে খুঁজে বের করতে। নাফিসের যারা গার্ডিয়ান ছিলো সবার নামেই নামলা দিয়েছেন সেঁজুতির বাবা। তাই সবাই অনেক বিপাক অবস্থায় পড়েন। নাফিসের কেউ সেঁজুতির বাবার শক্তির কাছে পেরে উঠে না। বস্তা বস্তা টাকা তিনি খরচ করতে থাকেন তাঁর মেয়েকে খুঁজে পেতে। তবুও কোনো ভাবেই নাফিস এবং সেঁজুতির কোনো সন্ধান ডিবি পুলিশ বের করতে পারেন না। এভাবে চলতে থাকে কয়েক মাস। মাঝেমাঝেই নাফিসের বাড়িতে ডিবি পুলিশ হানা দিতে থাকেন। তখন নাফিসের বাবা-মা পালিয়ে বেড়াতে থাকে।

 

ছেলের চিন্তায় ঘুম নেই তাদের চোখে। তারাও জানে সেঁজুতিকে তার পরিবার খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত তাদের কোনো রক্ষা নেই। টাকা পয়সা যা ছিলো সব মামলার পিছনে খরচ হয়েছে। নাফিসের পরিবারের তখন দিশেহারা অবস্থা। কি করবে নাফিসের বাবা-মা বুঝে উঠতে পারে না। ডিবি পুলিশ আরো ঘনঘন তাঁদের অভিযান চালাতে থাকে। ততোদিনে সেজুঁতি গর্ভবতী হয়েছে। বিয়ের সময় কোর্টে উকিল সাহেব বলে দিয়েছিলেন যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সেজুঁতির গর্ভে সন্তান জন্ম দিতে হবে। সেই মোতাবেক তারা খুব দ্রুত সন্তান নিতে উদ্যত হয়। তারা ভেবেছিলো সন্তান হলে তাদের বিয়ে মেনে নিবে সেঁজুতির পরিবার। কিন্তু সেঁজুতির গর্ভ থেকে দশ সন্তান জন্ম নিলেও সেঁজুতির বাবা তাঁর মেয়েকে ফেরত নিবেন। কিছুতেই তিনি মুসলিম ছেলের সাথে তাঁর মেয়ের বিয়ে মেনে নিতে পারবেন না। নাফিস হিন্দু ধর্মের অনুসারী হলে তাও মেনে নেওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। এরমধ্যে নাফিসের কাছ থেকে সেঁজুতি নামাজের সব নিয়ম কানন শিখে নিয়েছে। তারপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে থাকে সেঁজুতি। সেঁজুতি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেও নাম পরিবর্তন করেনি। আগের নাম-ই বহাল রেখে দিয়েছে। নাফিস তাকে সেঁজুতি নামেই ডাকে। তারা যেখানে আত্মগোপনে থাকে সেখানেও অনেক ভয়ে আছে তারা।

 

ডিবি পুলিশ প্রতিনিয়ত তাদের খুঁজে চলেছে। খুঁজে পেলে তাদের কোনো রক্ষা নেই। বিশেষ করে নাফিসের বেশি সমস্যা হবে। খুঁজে পেলে অপহরণ মামলায় নিশ্চিত জেল হবে নাফিসের। সেই ভয়ে নাফিস তেমন বাহিরে বের হয় না। এতে করে আশেপাশের বাসার লোকজন তাদের সন্দেহ করতে থাকে। এরমধ্যে রোজার ঈদ চলে আসে। তবুও তারা বাড়ি বেড়াতে আসে না দেখে আশেপাশের লোকজন আরো বেশি করে সন্দেহ করতে থাকে। সেটা সেঁজুতি এবং নাফিসও বুঝতে পারে। কিন্তু বাসাও পরিবর্তন করতে পারে না তারা। সেঁজুতি যে টাকা নিয়েছিলো তা প্রায় শেষের দিকে। বাহির থেকে নাফিস টাকা ইনকাম করেও আনতে পারে না। তখন তারা আরো টেনশনে পড়ে যায়। সেঁজুতির পেটের সন্তান বড় হতে থাকে। দেখতে দেখতে কয়েক মাস হতে চললো। এমতাবস্থায় নাফিস তার এক মামার সাথে যোগাযোগ করে। এর আগে আর কারো সাথেই কোনো যোগাযোগ করেনি নাফিস। সেঁজুতিও কোনো যোগাযোগ করেনি তার পরিবারের কারো সাথে। তখন নাফিসের মামা পরিস্থিতি বুঝে সবকিছু সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু গোপন সূত্রে ডিবি পুলিশ কেমন করে যেন নাফিসের সেই মামার খোঁজ পান।

 

তখন ডিবি পুলিশ নাফিসের মামাকে খুঁজে বের করতে তল্লাশি অভিযান চালান। অনেক চেষ্টার পর নাফিসের মামাকে ডিবি পুলিশ খুঁজে বের করতে সক্ষম হন। নাফিসের মামা তখন পালানোর কোনো অবকাশ পাননি। ডিবি পুলিশ নাফিসের মামাকে খুঁজে পেয়েই অনেক মারধর করেন। তখন মারধরের মুখে নাফিস এবং সেঁজুতি কোথায় আত্মগোপনে আছে তার সব তথ্য তিনি ডিবি পুলিশকে দেন। তখন ডিবি পুলিশ নাফিসের মামাকে রশি দিয়ে হাত বেঁধে নাফিস এবং সেঁজুতি যেখানে পালিয়ে আছে সেখানে নিয়ে যায়। ডিবি পুলিশ যে নাফিস এবং সেঁজুতিকে খুঁজে পেতে যাচ্ছে সেটা তারা বুঝতে পারেনি। নাফিসের মামাও ফোন দিয়ে নাফিসকে কিছু বলার অবকাশ পাননি। তাই খুব সহজেই নাফিস এবং সেঁজুতি ডিবি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ততোদিনে সেজুঁতি পাঁচ মাসের গর্ভবতী। এরমধ্যে সেঁজুতি এবং নাফিস এক টিভি চ্যানেলে তাদের বিয়ের সব প্রমাণ পত্র দেশবাসীকে দেখায়।

 

সেজুঁতি যে স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে সেটারও কাগজ দেখায় দেশবাসীকে। ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক তাদের বিয়ে হয়েছে। তাই সেঁজুতি টিভি চ্যানেলে তার পরিবারের কাছে বিনীত আহ্বান জানায় তাদের বিয়ে মেনে নিতে। এমনকি থানা পুলিশ দিয়ে তাদেরকে যেন কোনো প্রকার হয়রানি না করা হয়। টিভি চ্যানেলে সেই ভিডিও সেঁজুতির পরিবার দেখলেও কোনো কাজে আসেনি। তারপর ডিবি পুলিশ নাফিস এবং সেঁজুতিকে থানায় ধরে নিয়ে যায়। খবর পেয়েই সেঁজুতির বাবা থানায় ছুটে যান। থানায় টাকা পয়সা দিয়ে সেঁজুতিকে নিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য হসপিটালে নিয়ে যান। সেঁজুতিকে হসপিটালে নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য সেঁজুতির গর্ভের সন্তান নষ্ট করা। কিন্তু সেঁজুতি সেটা কিছুতেই করতে চাচ্ছিল না। এর জন্য সেঁজুতি তার বাবার পা পর্যন্ত ধরেছে। কিন্তু তবুও কোনো কাজ হয়নি। অনেক জোরাজোরির পর নষ্ট করা হয় সেঁজুতির গর্ভের সন্তান। তারপর সেঁজুতিকে বাসায় নিয়ে আসে তার বাবা। ওদিকে সেঁজুতির বাবার অপহরণ মামলায় জেল হয়ে যায় নাফিসের। এরমধ্যে নাফিস এবং সেঁজুতি যে ডিবি পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে এই খবর নাফিসের বাবা-মা জেনে যায়। তা সত্ত্বেও তারা থানায় যেতে পারেনা নাফিসকে এক নজর দেখতে। কারণ তাদের নামেও মামলা হয়েছে। থানায় গেলেই তাদের আটক করবে পুলিশ। সেই ভয়ে তারা আর যেতে পারেনি থানা পর্যন্ত। তখন নাফিসের জীবন এলোমেলো হয়ে গেলো। সবকিছুই হারালো সে। যাকে নিয়ে সারাজীবন থাকতে চেয়েছিলো সেই মানুষটি আর তার নেই।

 

তাকে থাকতে হবে জেল বন্দি হয়ে। ওদিকে নাফিসকে পাওয়ার জন্য সেঁজুতি নিজের ধর্ম পর্যন্ত ত্যাগ করেছিলো। তবুও সে তার ভালোবাসার মানুষের কাছে থাকতে পারলো না। ধর্মীয় বিভেদ তাদের চিরতরে আলাদা করে দিলো। অথচ তারা একসাথে সারাজীবন বাঁচতে চেয়েছিলো। কিন্তু ধর্ম তাদর একসাথে থাকতে দিলো না। ভালোবাসার থেকে বড় ধর্ম পৃথিবীতে নেই। কিন্তু ধর্মের কাছে হেরে যায় এমন কতো শত ভালোবাসা। যা শেষ পর্যন্ত গড়ায় না। মাঝ পথেই থেমে যায় এমন কতো না ভালোবাসা। তবুও বলবো ভালোবাসার জয় হোক। মানুষের মধ্যে জন্ম নিক সুবোধের বোধগম্যতা। ধর্মীয় কোনো বিভেদ যেন ভালোবাসার পথে কোনো বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায়। যে যাকে নিয়ে সুখী হতে চায় তার সাথেই যেন তার মিলন ঘটিয়ে দেওয়া হয়। এটা কোনো পাপ না। বরং ঈশ্বর প্রদত্ত ভালোবাসাকে যেন যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়। হালাল সম্পর্কের ভালোবাসাকে যেন পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ করে দেওয়া হয়। নাফিস এবং সেঁজুতির ভালোবাসার মতো আর কোনো ভালোবাসাকে যেন গলা টিপে হত্যা করে না দেওয়া হয়। দু’জন দু’জনের প্রতি এতোটা আত্মবিশ্বাস রেখেও তারা একসাথে থাকতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত হেরে গেছে তারা। ধর্ম এবং আভিজাত্য কখনো কখনো মানুষ বিপথগামী করে। তখন সুচিন্তার কোনো অপশন থাকে না।

 

প্রকারন্তরে বলি হতে থাকে অনেক সাধনায় পাওয়া ভালোবাসা। যা সারাজীবন তুমুল কষ্ট এবং যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কখনো কখনো অকালেই ঝরে যায় এমনতর জীবন। তখন এর দায় ভার কেউ নিতে চায় না। সবাই তখন সাধু সাজে। এই সমাজে মুখোশপরা লোকের কোনো অভাব নেই। কাউকে চোখ বুঁজে বিশ্বাস করাটা খুব সহজ কাজ নয়। এমতাবস্থায় পৃথিবীর কিছু দাম্ভিক মানুষকে বলবো- ভালোবাসাকে যেন ভালো থাকতে দেওয়া হয়। কেউ যেন ভালোবাসার প্রতি বিরূপ আচরণ না করে। আদতে ভালোবাসার থেকে বড় ধর্ম পৃথিবীতে আছে বলে জানা নেই। ভালোবাসা আছে বলেই ঈশ্বরের প্রতি মানুষের এতো আকর্ষণ। ভালোবাসা আছে বলেই সূর্য আলোকিত করে পুরো পৃথিবী। ভালোবাসা আছে বলেই মানুষের প্রতি মানুষের এতো দায়বদ্ধতা। ভালোবাসাহীন পৃথিবী কখনো প্রাণীকুলের বসবাস কেন্দ্র হতে পারে না৷ তাই যেখানে ভালোবাসা নেই, সেখানে আমার কলম থেমে যায় অস্থির দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। সতত আমি ভালোবাসার পক্ষে। কেউ সেটা মানুক আর না মানুক। তাই একমাত্র ভালোবাসাকে আমি পরম ধর্ম বলে জ্ঞাত হই। নাফিস এবং সেঁজুতির ত্যাগী ভালোবাসার বিচ্ছেদ শেষ পর্যন্ত আমাকে বিষাদ আবেগে আপ্লুত করেছে। কেউ তাদের পক্ষে রুখে দাঁড়ায়নি। বরং সমাজ এবং আইন তাদের মাঝপথেই থামিয়ে দিয়েছে৷ তারা এগোতে পারেনি খুব দূর। ভালোবাসার অপরাধে জেল খাতটে যাওয়া প্রেমিক জানে কতোটা কষ্ট হয় প্রিয় মানুষের শূন্যতা। অথচ এই শূন্যতা কোনোদিন পূরণ হবার নয়। একসময় নাফিস ঠিকই জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাহিরে বেরিয়ে আসবে। ততোদিনে সেজুঁতির বিয়ে হয়ে যাবে তার স্বগোত্রের কোনো ছেলের সাথে।

 

ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নিলেও সেঁজুতি তখন হিন্দু ধর্মই পালন করতে বাধ্য হবে পরিবারের চাপে। তখন তার সব ধরণের স্বাধীনতা প্রায় শেষ হয়ে যাবে। একসময় ভুলে যাবে নাফিসকে। পুনরায় গর্ভে সন্তান এলেই সেজুঁতির স্বপ্ন বেড়ে যাবে নবাগতের আগমনের প্রত্যাশায়। তখন নাফিসের চুলে পাক ধরবে। বিয়েটাও আর করা হবে না। ধীরে ধীরে সেজুঁতিকে ভুলে যেতে বাধ্য হবে। কেউ কাউকে আর মনে রাখবে না। তখন যে যার পথে ছুটতে থাকবে। হয়তো কোনোদিন দেখা হবে। কিন্তু কথাটাই শুধু হবে না। তখন এক বুক কষ্ট নিয়ে দু’জন চলে যাবে যে যার পথে। এমন ভালোবাসা কারো জীবনে না আসুক। কেউ কারো উপর প্রচণ্ড ঘৃণা নিয়ে না বাঁচুক। প্রত্যেক ভালোবাসা সহজতর হোক। জটিল ভালোবাসায় কারো জীবন যেন বিদ্ধ না হয়। তাই ভালোবাসাকে ভালোবাসি চরম বিশ্বাস এবং আন্তরিকতার সহিত।

 

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park