এবার গ্রীষ্ম যেন হাজির হয়েছে প্রকৃতির রুদ্ররূপের বারতা নিয়ে। টানা তাপপ্রবাহের রেকর্ড ভেঙেছে। দাবদাহে প্রাণ ওষ্ঠাগত। সাথে হাজির গরমের নানা স্বাস্থ্য সমস্যা। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে যে স্বাস্থ্য সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি আলো হচ্ছে “হিট স্ট্রোক”। হিট স্ট্রোক কি? “হিট স্ট্রোক” এমন একটি অবস্থা যাতে একজন ব্যক্তির শরীর খুব গরম হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, যখন কেউ পর্যাপ্ত তরল পানীয় পান না করে খুব গরম আর্দ্র আবহাওয়ায় পরিশ্রম করে তখনই “হিট স্ট্রোক” হতে পারে। হিট স্ট্রোক একট মেডিকেল ইমার্জেন্সী, যার দ্রুত চিকিৎসা না হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আমাদের শরীর যখন খুব গরম হয়, তখন “হিটক্র্যাম্প” (মাংস পেশিতে) এবং “তাপ ক্লান্তি” ও হতে পারে। এ অবস্থাগুলো হিট স্ট্রোকের মতো গুরুতর নয়। তবে যদি এগুলোর চিকিৎসা না করা হয়, তবে পরবর্তীতে হিট স্ট্রোকও হতে পারে। হিট স্ট্রোক কেন হয়? সাধারণত নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীর তার অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ৩৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৯৮.৬০ ফারেনহাইট) এ রাখার চেষ্টা করে। ত্বকের মাধ্যমে ঘাম ঝরিয়ে এবং তাপ বিকিরণ করে আমরা নিজেদের ঠাণ্ডা রাখি। নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে যেমন প্রচণ্ড তাপ, উচ্চ আর্দ্রতা বা প্রচণ্ড রোদে দীর্ঘক্ষণ থাকলে বা অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে কখনো কখনো শরীরের এ তাপ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া ঠিকভাবে কাজ করে না। এতে করে শরীরের তাপমাত্রা বিপজ্জনক স্তরে (৪০ ডিগ্রি সেঃ/ ১০৪০ ডিগ্রি ফাঃ বা এর বেশি) পৌঁছে যেতে পারে। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হয়। এরই ফলশ্রুতিতে হিট স্ট্রোক হয়। হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি যাদের: ১. শিশু এবং বয়স্ক (৬৫ বছরের ঊর্ধ্ব) ব্যক্তি। ২. যারা দীর্ঘ সময় রোদে থাকেন (কৃষক, নির্মাণ শ্রমিক)। ৩. যারা কায়িক পরিশ্রম করেন (খেলোয়াড়,রিকশা-ভ্যান চালক)। ৪. দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি বা যারা জটিল রোগে ভুগছেন।
৫. দীর্ঘসময় ভারী পোশাক পরিধান করে থাকেন এমন ব্যক্তি। হিট স্ট্রোকের লক্ষণ: ১. শরীরের তাপমাত্রা (৪০০ ডিগ্রি সেঃ/ ১০৪০ ডিগ্রি ফাঃবা এর বেশি হওয়া)। ২. বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া বা চেতনা হ্রাস পাওয়া। ৩. অবসন্ন বোধ করা। ৪. খিঁচুনি ও জ্ঞান হারানো। ৫. শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া।
৬. হৃদস্পদন বেড়ে যাওয়া বা দ্রুত হওয়া। ৭. রক্তচাপ কমে যাওয়া। ৮. ত্বক, ঠোঁট, জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়া। ৯. মাংস পেশির দুর্বলতা। ১০.ক্ষেত্রবিশেষে বমি বা ডায়রিয়া। হিট স্ট্রোক হলে করণীয়: প্রাথমিক ভাবে হিট স্ট্রোকের আগে যখন শরীর ক্লান্ত এবং অবসন্ন হয়ে পড়ে এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় তখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজেই যা করতে পারে- ১. দ্রুত শীতল কোনো স্থানে চলে যাওয়া। সম্ভব হলে ফ্যান বা এসি ছেড়ে দেয়া। ২. ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে ফেলা। সম্ভব হলে গোসল করা। ৩. প্রচুর পানি (প্রয়োজন হলে খাবার স্যালাইন) পান করা। চা বা কফি পান না করা। যদি হিট স্ট্রোক হয়েই যায় তবে রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে। ঘরে চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে রোগীর আশে পাশে যারা থাকবেন তাদের করণীয় হলো- ১. রোগীকে দ্রুত শীতল স্থানে নিয়ে যাওয়া। ২. রোগীর গায়ের কাপড় খুলে ফেলা। ৩. ভেজা কাপড় দিয়ে অনবরত শরীর মোছা। ৪. প্রয়োজনে বগলে এবং কুঁচকিতে বরফ দেওয়া। ৫. রোগীর জ্ঞান থাকলে তাকে পানি এবং খাবার স্যালাইন দেয়া। ৬. রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস এবং নাড়ি চলছে কিনা খেয়াল রাখা। ৭. রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা: ১. রোদে অধিক সময় কাজ না করে মাঝে মাঝে ছায়ায় বিশ্রাম নেয়া। ২. পর্যাপ্ত পানি পান করা (প্রয়োজনে খাবার স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে। তবে চা-কফি পান না করাই শ্রেয়। ৩. হালকা সুতির কাপড় পরিধান করা। ৪. প্রচণ্ড রোদে বাচ্চাদের বাইরে খেলাধুলা না করা। ৫. বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া।
মনে রাখা জরুরি: ১. হিট স্ট্রোকে জ্বর ভেবে জ্বরের ঔষধ খাওয়া যাবে না। ২. প্রচণ্ড রোদ বা গরমে বাইরে থেকে বাসায় ফিরে সাথে সাথে ফ্রীজের ঠাণ্ডা পানি পান করা যাবে না।