হারানো প্রেমের গল্প ( পঞ্চম পর্ব )
জাকির আলম
নীলা : কেমন আছো তুমি?
রুদ্র : মোটামুটি। তুমি কেমন আছো জান?
নীলা : ভালো নেই জান। ভাই, মামাসহ অনেকে আজ বিয়ের কাবিন করতে গেলো।
রুদ্র : কী বলছো জান? সত্যি বলছো কি?
নীলা : হুম, শতভাগ সত্যি।
রুদ্র : তুমি না করোনি জান?
নীলা : হুম করেছি। আমার কথা কেউ শোনেনি। বড় ভাইয়ের পা পর্যন্ত ধরেছি , তবুও শোনেনি।
রুদ্র : জান তোমার কথা শুনে আমার বুকের ভিতরে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যাচ্ছে। তোমার মাকে এখনি বলো কাবিন যেন না করে। ছেলে পক্ষদের না করে দিতে বলো জান। যেভাবেই হোক না করতে বলো জান। এখনো সময় আছে।
নীলা : এখন আর বলে কোনো লাভ নেই। আমার কথা কেউ কোনো গুরুত্ব দেয় না। আমার আর কিছু করার নেই। মার সাথে কথা বলো।
রুদ্র : আচ্ছা দাও।
নীলা : হুম দিচ্ছি। এই যে কথা বলো...
রুদ্র : হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?
মা : ওয়ালাইকুম আসসালাম। এই তো ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
রুদ্র : হুম ভালো। আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন?
মা : না।
রুদ্র : আমি আলমগীর।
মা : হ্যা এখন চিনেছি। হ্যা বাবা বলো...
রুদ্র : নীলাকে আমার সাথে বিয়ে দেন। ওকে আমি অনেক ভালোবাসি। নীলাও আমাকে অনেক ভালোবাসে।
মা : না বাবা, এখন আর আমি না করতে পারবো না। এখন না করলে সবার কাছে আমি অপরাধী হয়ে যাবো। এমনিতেই কেউ আমাকে দেখতে পারে না। সবাই শুধু বলে মেয়ে বড় হয়েছে এখনো বিয়ে দেন না কেন? ঘরে রেখে আর কী হবে? ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেন। আমার বিদেশি ছেলেও বলেছে, মা দেখে-শুনে বিয়ে দিয়ে দাও। এখন যদি আমি না করি আমার ছেলে আত্মীয়রা আমাকে জবাই করবো। এখন না করলে আমাদের মানসম্মানের উপর কুড়াল মারা হবে। ইতোমধ্যে সবাই আমাকে শত্রু ভাবা শুরু করছে। না করলে সবাই আমার থেকে দূরে চলে যাবে। রাতে আমি ঘুমাতে পারিনা চিন্তায়। আমার লোক (স্বামী) বেঁচে নাই। তাছাড়া আমাদের বংশে এ রকম কোনো ঘটনা নেই। আমরা দু'বোন ছিলাম। কেউ বলতে পারবে না আমরা খারাপ ছিলাম।
রুদ্র : হুম আমি জানি।
মা : আমরা বাবার সংসারে যেমন সুখে ছিলাম, স্বামীর সংসারে এসেও সুখে ছিলাম। হঠাৎ করে নীলার বাবা মারা যাওয়ায় খুব কষ্ট ছিলাম এক সময়। আজও নীলার বাবার শূন্যতা অনুভব করি। তাছাড়া ঘটক পাঠালে তাও ভেবে দেখতাম।
রুদ্র : আমার মা আর বড় বোনকে দু'দিন আপনার বাড়িতে পাঠিয়ে ছিলাম জানেন?
মা : না। (বি.দ্র) এখানে নীলার মা মিথ্যা বলেছিলো। সে জানতো। রুদ্রর মা-বোনকে দেখে সে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। বাড়িতে যারা ছিলো তারা কোনো কথা বলেনি। দরজা বন্ধ করে তারা ঘরের ভিতরে লুকিয়ে ছিলো। কেউ ঘর থেকে বাহিরে এসে কিছু বলেনি। এমনকি কেউ বসতেও বলেনি। বলেনি কোথা থেকে এসেছেন? কী জন্য এসেছেন? শুধু নীলা বাহিরে ছিলো। আগে থেকেই নীলার মাধ্যমে সে জানতো রুদ্রর মা-বোন ওদের বাড়িতে যাবে। নীলা শুধু রুদ্রর মা-বোনকে বসতে বলেছিলো। বসেন যাইয়েননি। নীলার এক ছোট বোন আছে। তাকে রুদ্র দজ্জাল মেয়ে বলে। কারণ সেই আগে দেখেছিলো রুদ্রর মা-বোনকে। দেখা মাত্র তার মাকে বাড়ি থেক বের হয়ে যেতে বলে। সাথে সাথে নীলার মা পিছন দিক দিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। যেটি রুদ্রর মা-বোন স্পষ্ট দেখেছিলো। ফলে রুদ্রর মা-বোন অনেক অপমান অনুভব করে। আগের দিনও এমন করেছিলো। শুধু রুদ্রর জোড়াজুড়িতে দ্বিতীয় দিন তার মা-বোন গিয়েছিলো নীলাদের বাড়িতে। কারণ নীলা শুধু রুদ্রকে বলতো তোমার বাড়ি থেকে কাউকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতে বলো। মার সাথে আমাদের বিয়ের কথা বলতে বলো। সেজন্য খুব আশা নিয়ে রুদ্র তার মা-বোনকে পাঠিয়ে ছিলো। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। যাই হোক। দ্বিতীয় দিন রুদ্রর মা-বোন কারো সাথে কথা বলতে না পারায়, তাদের চলে আসতে দেখে নীলা নাকি অনেক কেঁদেছিলো। নীলা জানতো না তার মা রুদ্রর মা-বোনকে দেখে বাড়ি থেকে চলে গেছে। পরে যখন রুদ্রর মা-বোন রুদ্রকে ফোনে সব কথা বলে, তা শুনে নীলাকে রুদ্র সব ঘটনা খুলে বলে। কিন্তু নীলা তা সহজে বিশ্বাস করতে পারে না। পরে নীলা তার মাকে জিজ্ঞাসা করলে তার মা সরাসরি বলেছিলো-কো জানি না তো কিছু। আমিতো বাড়িতেই ছিলাম না তখন। অনেক আগেই তোর মামার বাড়ি গেছিলাম। তারপর...
রুদ্র : নীলাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। নীলাও আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। দয়া করে আমার সাথে নীলাকে বিয়ে দেন।
মা : না বাবা এখন আর কিছু বলো না। আমার ছেলের নামে নাম তোমার, সেজন্য ভেবেছিলাম আমার ছোট ছেলে দেশে এলে তার বিয়েতে তোমাকে দাওয়াত করবো। নীলা তোমার আপন বোনের মতো। এখন কিছু বলো না বাবা।
রুদ্র : আমি এখন অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ি। কয়েক দিন পর আমার ফাইনাল পরীক্ষা। ভেবেছিলাম আপাতত কাবিন করে রাখবো। কিছু দিন পর দুই পরিবারের সিদ্ধান্তে আমরা বিয়ে করবো।
মা : আমি জানি বাবা তোমরা খুব ভালো ছেলে। তোমার বাবাও খুব ভালো মানুষ। কেউ বলে না তোমরা খারাপ। লেখাপড়া শেষ করে যখন চাকরি করবে তখন কতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেখে নীলার চেয়ে ভালো কাউকে বিয়ে করতে পারবে।
রুদ্র : আমি যে শুধু নীলাকেই ভালোবাসি। ওকেই শুধু বিয়ে করতে চাই আমি। ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না।
মা : বাবা এমন করে বলো না। নীলার চেয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেশে পড়ে আছে। সময় হোক একদিন বিয়ে করতে পারবে অনেক সুন্দর মেয়ে দেখে।
এমতাবস্থায় রুদ্রর ফোনে ব্যালেন্স না থাকায় লাইন কেটে যায়। পরক্ষণেই নীলা ফোন করে...
রুদ্র : কাতর কণ্ঠে হ্যালো...
নীলা : এই মার সাথে ভালো ভাবে কথা বলে আমার কাছে কান্না করছো কেন?
রুদ্র : জান আমি কিছুতেই মানতে পারছি না। আমাকে ছেড়ে যেওনা জান প্লিজ। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না জান।
নীলা : তুমি শুধু আমার সাথেই পারো।
রুদ্র : তুমিই আমার সব। তোমাকে অবলম্বন করেই আমি বাঁচতে চাই গো জান।
নীলা : এখন আর আমার কিছু করার নেই।
রুদ্র : তোমার কাছের কাউকে বলে কাবিন করতে না করো জান।
নীলা : কোনো কাজ হবে না। কেউ আমার কথা শোনে না। আমার কথার কোনো মূল্য নেই কারো কাছে।
রুদ্র : প্লিজ জান আমাদের সুখের কথা ভেবে কাউকে বলে না করতে বলো এখনি। এখনো সময় আছে জান। সবকিছু শেষ করে দিওনা জান প্লিজ। আমি থাকতে পারছি না জান।
নীলা : আমার কোনো সুখ চাই না। আমি এখন নিরুপায়। পারলে মাফ করে দিও।
রুদ্র : এভাবে আমাকে একা করে যেওনা গো জান। তোমাকে না পেলে সারাজীবন আমার কষ্টে কাটবে।
আমি শুধু তোমাকেই চাই। তুমিহীন বড়ই নিঃসঙ্গ আমি।
নীলা : আচ্ছা ফোন রাখি। ভালো থাকো।
রুদ্র : জান কিছু একটা করো প্লিজ। হ্যালো হ্যালো... পরক্ষণেই নীলা ফোন কেটে দেয়।
( সমাপ্ত )
Website: www.ichchashakti.com E-mail: ichchashaktipublication@gmail.com