নীলা : শুনলাম তুমি নাকি অসুস্থ্য?
রুদ্র : হুম।
নীলা : আহারে ! তোমার কী হয়েছে জান?
রুদ্র : তিন দিন ধরে খুব জ্বর আর মাথা ব্যথা।
নীলা : আগে বলোনি কেন তোমার জ্বর হয়েছে?
রুদ্র : তোমাকে বলে কি হবে ? আমি চাই না আমার কষ্টে কেউ কষ্ট পাক।
নীলা : তোমার মাঝে এতো অভিমান কেন ?
রুদ্র : কো, না তো। আমার কোনো অভিমান নেই।
নীলা : আচ্ছা যাই হোক। ওষুধ খাইছো?
রুদ্র : হুম খেয়েছি।
নীলা : কমেনি জ্বর?
রুদ্র : হুম কমছে। গলা ব্যথা আর মাথা ব্যথাটা এখনো কমেনি।
নীলা : ঠিক মতো ওষুধ খাচ্ছ তো?
রুদ্র : মন চাইলে খাই না চাইলে না খাই।
নীলা : আচ্ছা তোমার কি হয়েছে বলো তো ? নিজের প্রতি কেন এতো অবিচার করছো? নিজের প্রতি দেখছি তোমার একটুও খেয়াল নেই। আমাকে কষ্ট দিয়ে তুমি কি খুব বেশি সুখ পাও?
রুদ্র : তুমি এটা কি বললে ? তোমাকে কষ্ট দিবো কেন ? আর তোমাকে কষ্ট দেওয়ার আমি কে ?
নীলা : মনে করে দেখো আমি তোমার কি ছিলাম।
রুদ্র : সরি, মনে করতে পারছি না কিছু। সব ভুলে গেছি আমি।
নীলা : সত্যিই কি ভুলে গেছো সব?
রুদ্র : হুম।
নীলা : আমার কথা তোমার কখনো মনে পড়ে না ?
রুদ্র : জানিনা। তবে কেউ একজনকে খুব মিস করি আমি। সে খুব দূরে চলে গেছে আমাকে ছেড়ে।
নীলা : সে মানুষটা কি আমি ?
রুদ্র : না, সে আমার হারানো প্রেম!
নীলা : তুমি কি আরো কাউকে ভালোবাসতে?
রুদ্র : জানিনা। তবে একজনকে ভালোবেসেই জীবন শেষ আমার।
নীলা : আমার সাথে তুমি ভালো ভাবে কথা বলতে চাও না কেন?
রুদ্র : কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না। নীরব থাকতে একটু ভালো লাগে তাই।
নীলা : তুমি এখন কোথায় আছো ?
রুদ্র : বাড়িতেই আছি।
নীলা : বাড়িতে কবে আসছো ?
রুদ্র : চার-পাঁচ দিন হলো।
নীলা : বাড়ির সবাই কেমন আছেন?
রুদ্র : ভালো। তোমার?
নীলা : ওহ ভালো। একটা কথাবলি?
রুদ্র : হুম বলো।
নীলা : এখনো কি তুমি আমার অপেক্ষায় থাকো।আমার ফোন বা মেসেজের অপেক্ষায় থাকো?
রুদ্র : হঠাৎ এ কথা বললে কেন?
নীলা : জানতে মন চাইলো তাই। বলো না থাকো কিনা ?
রুদ্র : আরে না, আমি কারো অপেক্ষায় থাকি না। শুধু মৃত্যুর জন্য অপেক্ষায় আছি।
নীলা : খবরদার ! আর কখনো মৃত্যুর কথা বলবে না। আমার একদম সহ্য না।
রুদ্র : কেন আমি তোমার এমন কে যে সহ্য হয় না?
নীলা : তুমি আমার নিঃশ্বাসের প্রতিধ্বনি।
রুদ্র : মজা করো?
নীলা : কী বলো, মজা করলাম কখন?
রুদ্র : ফোনটা এখন কেটে দিলে খুশি হতাম।
নীলা : ফোন করলে বিরক্ত হও?
রুদ্র : আমি বিরক্ত হলে তাতে কার কি যায় আসে?
নীলা : আমার যায় আসে?
রুদ্র : মানে?
নীলা : মানেটা খুব সহজ। তোমাকে আমি আজও ভীষণ ভালোবাসি।
রুদ্র : ভালোবাসার কথা আর কখনো মুখে এনো না তো। চরম রাগ হয় আমার। ভালোবাসার চেয়ে খারাপ জিনিস জগতে আর নেই। বড় ঘেন্না হয় ভালোবাসার কথা শুনলে।
নীলা : জান আমাকে তুমি ভুল বুঝো না। মন থেকে আজও তোমাকে সরাতে পারিনি আমি। সবসময় তোমার কথা ভাবি আর নীরবে দু’চোখ থেকে জল ফেলি।
রুদ্র : তা কেন?
নীলা : সে তুমি বুঝবে না।
রুদ্র : হুম। আমার বোঝার কাজ নেই।
নীলা : বড় স্বার্থপর !
রুদ্র : কে?
নীলা : কে আবার, তুমি।
রুদ্র : আমি স্বার্থপর?
নীলা : হুম, তা নয়তো কি?
রুদ্র : খুব ভালো বলেছো। স্বার্থপর বলেই তো আজ আমার এ দশা।
নীলা : এ দশা মানে? কি বলতে চাও তুমি?
রুদ্র : এতো রাতে চিৎকার করো না। পাশে থাকা ব্যক্তির ঘুম ভেঙে যাবে।
নীলা : পাশে কেউ থাকলে তো ঘুম ভাঙবে!
রুদ্র : কেন, তোমার স্বামী পাশে নেই?
নীলা : ওর কথা আর বলো না। এখনো বাসায় ফেরেনি।
রুদ্র : কি বলছো?
নীলা : যা বলছি তাই সত্যি। তোমাকে তো আগেই ওর কথা বলেছি।
রুদ্র : হুম। তাহলে কখন আসবেন তিনি?
নীলা : জানি না। মাত্র তো রাত বারোটা বাজে। ঘণ্টা দুই পর হয়তো আসতে পারে।
রুদ্র : তখন তো রাতটাই শেষ হবে।
নীলা : হুম। এমনি করেই কাটছে বিয়ের পর থেকে।
রুদ্র : ওহ।
নীলা : এমন হবে আগে জানলে কখনো তোমাকে ছেড়ে আসতাম না। তোমার কাছে থাকলে কতো আনন্দে যে রাত-দিন কাটতো আমার তা শুধু আমার মনটাই জানে। বড় অবিচার করেছি তোমার প্রতি।
রুদ্র : প্লিজ তুমি থামো। কখনো পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিওনা। আমি ঠিক থাকতে পারিনা।
নীলা : সরি জান কষ্ট পেওনা।
রুদ্র : প্লিজ কখনো জান টান বলো না। খুব বিরক্ত লাগে।
নীলা : এক সময় তুমি আমাকে কথায় কথায় জান বলতে। আর আজ কিনা বিরক্ত লাগে তোমার !
রুদ্র : হুম। তখন মনে অনেক স্বপ্ন ছিলো। মিথ্যে মায়ায় নিজেকে জড়িয়ে ছিলাম। বড় ভুল করেছিলাম তোমাকে ভালোবেসে। আসলে ভালোবাসা বলে পৃথিবীতে কিছু নেই। সব মিথ্যে মরীচিকা।
নীলা : হুম। তুমি ঠিকই বলেছো।
রুদ্র : এখন তাহলে ফোন রাখি। তোমার স্বামী আসার সময় হলো।
নীলা : সম্ভবত এখনো অনেক দেরি হবে ফিরতে।
রুদ্র : আচ্ছা আমার সাথে যে কথা বলো তোমার স্বামী জানে না?
নীলা : আমার প্রতিই তো তার কোনো খেয়াল নেই। আর তোমার সাথে কথা বলি জানবে তো দূরের কথা। বাসায় এসেই ঘুমিয়ে পড়ে। বেশি কিছু বললেই রেগে যায়। প্রচণ্ড রাগ তার। তাই কিছু বলি না প্রয়োজন ছাড়া।
রুদ্র : জানলে কিন্তু তোমারই সমস্যা হবে?
নীলা : হলে হবে। ওর সাথে আমি আর থাকতে চাই না।তোমার কাছে আমি ফিরে আসবো জান। আমি আবার তোমার হবো জান।
রুদ্র : মাথা নষ্ট হলো নাকি আবার? নিজের স্বামী থাকতে কেউ কখনো এ কথা বলে?
নীলা : স্বামী নামের কলঙ্ক সে। স্ত্রীর প্রতি কোনো খেয়াল নেই তার। আমি কি চাই না চাই তার কোনো খবর নেয় না। খুব যন্ত্রণার মধ্যে আছি তার কাছে। তার থেকে আমি সত্যি মুক্তি চাই।
রুদ্র : এসব কথা রেখে ফোন কেটে দাও। তোমার স্বামী আসবে এখন।
নীলা : ঠিক আছে। তুমি বলতে না বলতে দরজায় নক করছে সে। আচ্ছা ঘুমাও এখন। শুভ রাত্রি।
রুদ্র : আচ্ছা, শুভ রাত্রি। ভালো থাকো। বাই…
( চলবে…..)