হারানো প্রেমের গল্প ( তৃতীয় পর্ব )
জাকির আলম
নীলা : জানো তোমাকে ছেড়ে এসে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা আমি করেছিলাম। তোমার কথা মতো যদি আমি তোমার কাছে আমি চলে আসতাম তবে এতোটা কষ্ট আমাকে সহ্য করতে হতো না।
রুদ্র : এমন করে আর বলো না। আমি থাকতে পারছি না।
নীলা : তোমার জীবনে আমি আবার চলে আসতে চাই। তোমাকে ছাড়া আমিও এখানে ভালো নেই। তোমার মতো কেউ আমাকে ভালোবেসে না, বোঝে না !
রুদ্র : সে কথা তোমাকে আগেই বলেছিলাম।
নীলা : তখন বুঝতে পারিনি। তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার এতো বেশি কষ্ট হবে।
রুদ্র : কী আর করার। সবকিছু মানিয়ে নাও। ঠিক হয়ে যাবে।
নীলা : এতোকিছু তুমি আমাকে মানিয়ে নিতে বলতেছো?
রুদ্র : হুম। তাছাড়া যে কোনো উপায় নেই। এক সময় সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।
নীলা : আমি কিছু শুনতে চাই না। আবার আমি তোমাকে ফিরে পেতে চাই।
রুদ্র : তা আর সম্ভব নয়।
নীলা : কেন সম্ভব নয় ?
রুদ্র : আমরা সমাজে বাস করি। সমাজ আমাদের ধিক্কার জানাবে।
নীলা : সমাজের কথা বলছো, সমাজ কি আমাদের কষ্টগুলো দূর করে দিবে ?
রুদ্র : আমার কোনো কষ্ট নেই।
নীলা : আছে, তুমি লুকাচ্ছো।
রুদ্র : না, যা সত্য তাই বলছি।
নীলা : আমি কিছু শুনতে চাই না। আমি আবার তোমাকে ফিরে পেতে চাই।
রুদ্র : আমাকে পাওয়ার আশা আর করো না। আমি এখন শুধুই মরীচিকা। পৃথিবীতে আমার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাবে না তুমি।
নীলা : কী যা তা বলতেছো? পাগল হলে নাকি?
রুদ্র : আরে আমি তো সেদিন মরে গেছি, যেদিন তুমি আমার জীবন থেকে অনেক দূরে চলে গেছো। তুমি চলে যাওয়ার পর কিভাবে যে থেকেছি তা তুমি জানো না। শুধু আমার আল্লাহ জানে। কষ্টের পাহাড় এই বুকে জমা রেখে দিন-রাত আমি শুধু কেঁদেই গেছি। কাউকে বলতে পারিনি আমি আমার এই কষ্টের কথাগুলো। যার কাছেই বলতে চেয়েছি, সেই শুধু বলেছে শোনার সময় নেই। কেউ আমাকে করুনাও করেনি।
পাগল হয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেরিয়েছি আমি।
নীলা : আর বলো না। সব শুনেছি আমি, সব জেনেছি।
রুদ্র : না, তুমি তার কিছুই জানোনি।
নীলা : এর জন্য তুমি আমাকে যে শাস্তি দিবে তা আমি মাথা পেতে নিবো। তবুও তোমার পায়ের তলে আমাকে একটু জায়গা দাও।
রুদ্র : কথা বলতে পারছিনা। ভেতর থেকে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।
নীলা : জান তোমাকে ছেড়ে এসে আমিও এমন কষ্ট করেছি। তুমি তাও কাঁদতে পেরেছো। আমি কাঁদার সময়টাও পাইনি। সবসময় পাশে লোক থেকেছে। বুকে কষ্ট চাপা রেখে হাসি মুখে সবার সাথে থাকতে হয়েছে অভিনয় করে। বড় যন্ত্রণা মুখর আমার এ জীবন !
রুদ্র : কষ্টের কথা আর বলো না। হাসি পায় আমার।
নীলা : খুব শীঘ্রই আমি তোমার কাছে চলে আসবো।
রুদ্র : না, এসো না। আমাকে আর খুঁজে পাবে না তুমি। অনেক দূরে চলে এসেছি আমি। পিছু ফিরে আর কোনোদিন যাবো না। তুমি ভালো থেকো।
নীলা : তুমি যেখানেই থাকো তোমাকে আমি খুঁজে বের করবোই জান।
রুদ্র : তোমার পক্ষে সেটা আর কখনো সম্ভব নয়। একসময় তোমাকে আমিও বলেছিলাম আমার কাছে চলে আসতে। তুমি বলেছিলে এখন আর সম্ভব নয়। আমার কাছে তুমি কোনো সুখ দেখতে পাওনি। তাই আর চলেও আসোনি।
নীলা : এখন কি তুমি তার প্রতিশোধ নিচ্ছো?
রুদ্র : প্রতিশোধ নিবো কেন? তোমাকে তো শুধু মনে করিয়ে দিলাম।
নীলা : মনে করিয়ে দিতে হবে না। আমার সব মনে আছে। আমি যা করেছি সব ভুল করেছি। তোমার পা ধরে আমি তার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। তুমি আমাকে যে শাস্তি দিতে চাও তা আমি মাথা পেতে নিবো। আমাকে শুধু একটু জায়গা দাও তোমার বুকে।
রুদ্র : আমাকে তুমি মাফ করো। আমার পক্ষে সেটা কখনোই সম্ভব নয়। এখন রাখি ফোন। অনেক কথা বললাম। ফোনে চার্জ নেই।
নীলা : তুমি কি আমাকে এড়িয়ে চলছো?
রুদ্র : তোমাকে এড়িয়ে চলার কি হলো?
নীলা : আমাকে তোমার কাছে নিবে কিনা সেটা বলো?
রুদ্র : আমার কাছে কোনো সুখ নেই।
নীলা : তোমার কাছে আমি সুখ চাই না। শুধু বুকে একটু জায়গা চাই।
রুদ্র : তাও নেই। সবকিছু শেষ হয়ে গেছে আমার। মনে করো আমি মরে গেছি। সত্যিই আমি মরে গেছি আমি।
নীলা : আমাকে তোমার কাছে না নিলে আমি আত্মহত্যা করবো। সত্যি বলছি।
রুদ্র : পাগলামি করো না।
নীলা : পাগলামির দেখছোটা কী? কাছে তুমি নিবে কিনা সেটা বলো?
রুদ্র : যার কাছে আছো তার কাছেই সুখ খুঁজো। সবকিছু তার মাঝে খুঁজে পাবার চেষ্ট করো, পেয়ে যাবে। সবকিছু তাকে বুঝিয়ে বলো। তোমাকে সে অনেক ভালোবাসবে।
নীলা : ওর কাছে আমি আর থাকতে চাই না। বাকি জীবন তোমার সাথেই থাকতে চাই আমি।
রুদ্র : বলছি তো সেটা আর কোনোদিন সম্ভব নয়। এই এক কথা আমি আর কতোবার বলবো ? আমার মন এখন কিচ্ছু চায় না। আমার মাঝে আর কিচ্ছু নেই। সবকিছু ভোঁতা হয়ে গেছে। অপেক্ষায় আছি দ্বিতীয় মৃত্যুর। তুমি ভালো থাকো। এখন রাখি। ফোন বন্ধ হয়ে যাবে। চার্জ একদম শেষের দিকে।
নীলা : হ্যালো, হ্যালো......
( চলবে... )
Website: www.ichchashakti.com E-mail: ichchashaktipublication@gmail.com