প্রতিনিধিঃ মুজাহিদ সন্দ্বীপী।
এক.
আজকে মনটা অনেক খারাপ; প্রশ্ন হতে পারে কারণ কী?
তাহলে একটু পিছন থেকেই বলি। গতরাতে অনেক আনন্দিত ছিলাম। শুধু আমি আনন্দিত ছিলাম এমন না! পুরো মাদ্রাসার সকল ছাত্রই আনন্দিত- উৎফুল্ল ছিলাম। ঘড়ির কাঁটা তখন বারোটা ছুই ছুই; চারপাশটা একেবারে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমরা অধিকাংশ ছাত্রই নানা কাজে ব্যস্ত ও আনন্দে আত্মহারা। কেউ প্রিয় বিদ্যালয়ের দেয়ালিকার কাজে ব্যস্ত, আবার কেউ প্রিয় বিদ্যালয়কে নানা সাজে সাজানোর কাজে ব্যস্ত। যাই হোক। অনেক আনন্দ-উৎফুল্লতার মধ্য দিয়ে রাত কাটলো। মসজিদের মিনার হতে মুয়াজ্জিনের মধুময় সুরে ফজরের আজানের ধ্বনি কানে ভেসে আসল। নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদ পানে উপস্থিত হলাম; অতঃপর নামাজ আদায় করে প্রতিদিনের ন্যায় আজকেও সুরা ইয়াসিনের আমল টুকু শেষ করলাম। অন্যদিন মন অশান্ত থাকলে কোরআন পাঠ করার মাধ্যমে মনটা শান্ত হয়ে যেত, আলহামদুলিল্লাহ।
কিন্তু আজ কেন জানি ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই মনটা কেমন কেমন করছে! মনে হচ্ছিল যে কোন একটা কিছু হারানোর আশঙ্কা করছিল আমার মন। কথায় আছে না যে, প্রিয় মানুষের কিছু হলে মনে খবর হয়ে যায়! কথাটার বাস্তবতা নিয়ে সংশয় থাকলেও কিন্তু আজ তার বাস্তবতার মিল পেলাম।
দুই. কিছুই মাথায় আসছে না, তাই না?
তাহলে একটু খুলেই বলি; আমাদের মাদ্রাসার বিদায় অনুষ্ঠান। মিশকাত সমাপনী ছাত্র ভাইয়েরা বিদায় নিচ্ছে। ভাবতেও কষ্ট হয়। কেমন জানি অন্তরের ভিতরটা নাড়া দিয়ে উঠে! বিগত বছরগুলোতেও অনেক ভাইদের বিদায় দিয়েছি; কিন্তু আজকের ন্যায় এমন কষ্ট আর কোনোবারই অনুভব করিনি। এর পিছনে একটি বড় কারণও রয়েছে। বিগত বছরের ভাইয়েরা বয়স, ক্লাশ উভয় দিক থেকেই বড় ছিল। তাই তাদের সাথে তেমন চলাফেরা ওঠাবসা হয়নি। কিন্তু আজ যাদের বিদায় দিচ্ছি, তাদের সাথে দীর্ঘ চার বছরের একটি সোনালী সম্পর্ক ছিল। যদিও তারা সবদিক থেকেই বড় ছিল; তারপরও বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল দীর্ঘ এই পথচলায়।
তাই আজ প্রিয় মানুষগুলোকে বিদায় দিব এটা ভাবলেও হৃদয় আঙিনা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। যদিও আজকের বিদায়টা শুধুমাত্র একটা আনুষ্ঠানিকতা, এরপরও মনকে কিছুতেই মানাতে পারছি না! যাই হোক। জ্ঞানার্জনের জন্যে অনেক ত্যাগ ও কষ্ট করতে হয়। প্রবাদ আছে “কষ্ট বিনা কেষ্ট মিলে না”। তাই এখন এইসব কথা ভেবে নিজেকে নিজে সান্ত্বনা দিচ্ছি। *অতএব, প্রিয় বড় ভাইয়েরা (বন্ধুরা) আপনাদেরকেই বলছি, আপনারা ইলমে নববীর যে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছেন, নীড়ে পৌছার আগ পর্যন্ত হাল ছাড়বেন না।
কারণ, এজাতি আপনাদের দিকেই তাকিয়ে আছে; যাদের নেতৃত্ব আপনাদেরই গ্রহণ করতে হবে। তাই হাজার কষ্ট উপেক্ষা করে মাঞ্জিলে মাকসুদ পর্যন্ত পৌছবেন, এটাই আমার প্রত্যাশা।
পরিশেষে একটি আবদার রাখছি, যদিও ইলমেদীন শিখতে যেতে হয় দূর থেকে অনেক দূর। তবুও আমরা যেন থাকি আপনাদের নিকটে, আপনাদের দোয়ায়। দোয়া চাই, দোয়া করি।
ফি আমানিল্লাহ।
Website: www.ichchashakti.com E-mail: ichchashaktipublication@gmail.com