1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

“স্মৃতিতে  বৈশাখী মেলা”

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১১৪ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

 মো: সামাউন আলী (সুমন)

 

আজ পহেলা বৈশাখ।  প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বছর ঘুরে এলো পহেলা বৈশাখ ।বৈশাখ মানেই পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছর করে বরণ করে নেওয়া । তবে পুরোনো বছর  বিদায় হলেও বৈশাখের কিছু স্মৃতি প্রাণবন্ত, মনে হয় এ যেন স্মৃতি নয়! নিত্যদিনের  অভ্যাস।

 

আজ থেকে  দুই যুগ আগের কথা। পহেলা বৈশাখের ছুটিতে মামাতো ভাই আমাদের  বাড়ি বেড়াতে এসেছে। আমাদের  এলাকা প্রত্যন্ত গ্রাম হওয়ায়  তখন তেমন কোন বিদ্যুৎ সংযোগ ছিলনা, হাতে গোনা দু একটা বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল ,প্রায় বাড়িতে  কেরোসিনের বাতি/হারিকেন আর দু- চারটে বাড়িতে  সৌর বিদ্যুৎ এর ব্যবহার, আমাদের বাড়ির নিকটে বেশ পুরোনো  একটি বাজার আছে। ঐ বাজারটি নওগাঁ বাজার নামেই পরিচিত, আত্রাই নদীর পাড়ে এই বাজার অবস্থিত, তখন ঐ বাজারটাই ছিল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা কাটার একমাত্র স্হান,  তবে বর্তমান অল্প কয়েক বছর হলো তার পাশেই পুরান বাজারে নদীর  বিপরীত  পাড়ে রাস্তা সংলগ্ন আরেকটা নতুন বাজার বসেছে,  বর্তমানে এই বাজারটি শিববাড়ি বাজার নামে পরিচিত, তবে কেনাকাটার জন্য পুরাতন বাজারই অনেক নামকরা।  আর গ্রাম থেকে অনকটা দূরে উপজেলা সদরে সাপ্তাহিক দুই দিন  হাট বসে,  সোমবার ও বৃহস্পতিবার । তবে দুই বাজারেই প্রতিদিন সকালে বাজার বসে, সাংসারিক মোটামুটি সকল  জিনিসপত্র এখানে পাওয়া যায়। তবে শৌখিন পন্য / দ্রব্য  তো ঐতিহাসিক স্হান বা  মেলা ছাড়া পাওয়া যায় না। তাই বৈশাখ মাসে  বৈশাখী মেলার জন্য গ্রামের মানুষ বছর জুড়ে অপেক্ষা করতেন।

 

গ্রামে মেলা তো অনেক উৎসবকে ঘিরেই  হয়। তবে আমার কাছে প্রিয় ছিল বৈশাখী মেলা। দুপুরের  ভ্যাঁপসা রোদের প্রকপ  কমে এলে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতো জমজমাট  মেলা। গ্রামে এলে মা আমাকে  একা কোথাও  যেতে চাইতেন না। কারণ আমি অতোটা চঞ্চল প্রকৃতির ছিলাম না ছোট বেলায়, মা বেশ ভয়ে থাকতো যদি হারিয়ে যাই, তাই কোথাও গেলে কারো  সঙ্গে পাঠাতেন।

 

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বগুড়ূা – আত্রাই মহাসড়ক সংলগ্ন   আত্রাই নদীর কোল ঘেষে  শিববাড়ি বাজারের পাশে গাবতলায়  মেলা বসেছে,  প্রতি বছর এখানে পহেলা  বৈশাখের  মেলা বসে। এটা অনেক ঐতিহ্যবাহী পুরোনো মেলা।বৈশাখের দ্বিতীয় দিন সকাল থেকেই মেলা শুরু। আমরাও বৈশাখের আনন্দে  তিন জন রওনা দিলাম  মেলায়। বাসা থেকে মেলা পর্যন্ত মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ আর পায়ে হেঁটে গেলে আধা ঘণ্টা খানেক এর রাস্তা।

 

আমি, মামাতো ভাই হাসান, ছোট বোন কাজলী মেলার উদ্দেশ্য  রওনা দিলাম,  কিছু সময় পর আমরা মেলায় এসে পৌঁছলাম । আমরা মেলায় ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়লো গৃহস্থালি নানা ধরনের জিনিস পত্রের দোকানে, সেখানে সাজানো আছে   হাতপাখা, কুলা- চালুন, বেত-বাঁশ-মাটির তৈরি নানা প্রয়োজনীয়  জিনিসপত্র। এইসব গৃহস্থালি জিনিস কেনার জন্য পুরুষ ও নারী উভয়ই  ভিড় জমাচ্ছেন দোকানে।

 

একটু পাশেই দেখতে পেলাম মাটির তৈরী  খেলনা, পুতুল,মাটির ব্যাংক সহ নানা ধরনের মাটির তৈরী তৈজসপত্র,  সেগুলো দেখতে বেশ ভালোই লাগছিল

একসময় আমার চোখ পড়লো  মাটির তৈরী ব্যাংকের দিকে, ব্যাংক গুলো দেখতে বেশ সুন্দর, নিপুন হাতে দিয়ে তৈরী সুন্দর কারুকার্য খচিত নকশা করা হয়েছে ব্যাংক গুলোতে, আমি আর মামাতো ভাই হাসান দুজন  বড় বড় দুটো মাটির ব্যাংক কিনলাম, ছোট বোনের জন্য একটা পুতুল  এবং আমি আম কাটার জন্য  জন্য একটা আম ছুড়িও কিনলাম।তারপর দেখতে পেলাম নাগরদোলা,  ভ্রাম্যমান রেল ও পুতুল নাচ  সহ ছোটদের আনন্দ দেওয়ার জন্য  নানা ধরনের খেলনা সামগ্রী । শত শত দোকানের ভিড়ে নাগরদোলা,  পুতুল নাচ, খেলনার দোকানগুলোই আমাকে বেশি টানছে।

 

এছাড়াও মেলাও সারি সারি ছিল মিষ্টি, জিলাপি,বাতাশা, চিনির তৈরী হাতি – ঘোড়া, ফুচকা- চটপটি সহ নানা ধরনের খাবার সামগ্রীর দোকান। আমরা তিন জন  মিলে  জিলাপি ও ফুচকা – চটপটি খেলাম, তারপর বাসার জন্য কিছু ঝুড়ি,  মিষ্টি, জিলাপি ও ঝালমুড়ি কিনলাম, মা মেলায় আসার সময় বলেছিল যদি চিনির তৈরি হাতি- ঘোড়া পাই তাহলে কিনতে তাই আমরা চিনির হাতি-ঘোড়াও কিনলাম।

 

মেলায় ঘুরতে ঘুরতে বিকাল ঘনিয়ে এলো। নাগরদোলায়  তে  চড়া শেষ। এখন পুতুল নাচটা না দেখলে মেলার আসল তৃপ্তি আসবে না।  পুতুল নাচ দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো টেরই পেলাম না। ফেরার পথে হাওয়াই মিঠা ওয়ালার সাথে দেখা মিলল, এবার হাওয়াই মিঠাই খেতে খেতে বাড়ি ফেরার পালা। তিনজনে তিনটি হাওয়াই মিঠাই নিয়েছি।

 

হঠাৎ আকাশে মেঘের গর্জন। বৈশাখের প্রথম দিনেই ঝড়ের পূর্বাভাস। জোড়ে বাতাস বইছে,চারদিকে  ধুলোবালি উড়ছে । দ্রুত বাড়ির পথে রওয়ানা হলাম । ভ্যানে  উঠতেই আরও জোরে বাতাস বইতে শুরু করল, ধুলোবালি চোখে-মুখে লেগে একাকার।আধা ঘণ্টার  পথ। বৃষ্টি শুরুর আগেই যেতে হবে। ভাঙা রাস্তায় যেতে যতটা না কষ্ট হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছি বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার। বৈশাখের বৃষ্টিতে ভিজলে নিশ্চিত   জ্বর আসবে । বাড়িতে মা নিশ্চয়ই আমাদের  নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

 

ভ্যানে চেপে সেদিন আমরা ঝড় ওঠার আগেই বাসায় ফিরেছিলাম । ঘরে ঢোকার পর পরই তুমুল বৃষ্টি শুরু। মায়ের বোকা খাওয়া থেকে তাহলে এইবার অন্তত রক্ষা হলো। ধীরে ধীরে মেলায় কেনা জিনিসগুলো মা’কে দেখালাম।

 

ছোট্ট পুতুলটা ছোট বোন কাজলীকে দিলাম। আর আম ছুড়ি কিছু দিন পর ধার শেষ হয়ে নষ্ট হয়ে  গেল। মাটির তৈরি ব্যাংকটি অনেক দিন আমার কাছে ছিল। সেখানে আমি আর মা মিলে অনেকগুলো টাকাও জমিয়ে ছিলাম, ব্যাংক ভেঙে  সেই টাকা দিয়ে মা আমার জন্য একটা বুক শেল্ফ কিনে দিয়েছিলেন, সেই বুক শেল্ফ টা এখনো আছে স্মৃতির পাতায়, তবে শৈশবের সেই বৈশাখী মেলার মধুর স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো আজও বড্ড মনে পড়ে।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park