1. admin@ichchashakti.com : admin :
শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

স্মৃতিচারণ : সেই শেষ চাহনি, শেষ আশ্রয়

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৬৪ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

জীবনের প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনো মুহূর্তে হারানোর স্বাদ চেখে দেখে। কিন্তু কিছু হারানো এমন, যা কেবল স্মৃতিতে বেঁচে থাকে—প্রতিটি নিঃশ্বাসে, প্রতিটি চোখের পাতায়। আমার সেই মানুষটি, আমার সবচেয়ে আপনজন—আমার বাবা—তার শেষ সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত যেন আজও আমার ভিতরে গেঁথে আছে, নিঃশব্দে, অশ্রুজলে, গভীর ভালোবাসায়।

 

সেদিন ছিল তেইশে জুলাই, সোমবার। জানালার ফাঁক দিয়ে লাল সূর্যের আঁকিবুঁকি, গায়ে পড়া সোনালী রৌদ্রের কোমল ছায়া, সবকিছু দেখে মনে হচ্ছিল এক নতুন দিনের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু কে জানতো, সেই আলোর আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক চিরস্থায়ী অন্ধকার।

 

বাবার শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। জ্বর ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। ঔষধ দিয়েছিলাম, গরম জল দিয়ে সেবা করেছিলাম, জলপট্টি রেখেছিলাম কপালে—যেন কোনোভাবে জ্বরটা কমে। বারবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলাম, যেন বাবার অস্থিরতা কিছুটা শান্ত হয়। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছিল না। বাবার চোখে ছিল এক অসহায় দৃষ্টি, আর আমার মন তখন শুধুই দুশ্চিন্তায় ভরা।

 

অবশেষে তাঁকে নিয়ে গেলাম এনাম ক্লিনিকে। সেদিন তিনি ছোট্ট শিশুর মতো আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে ছিলেন। আমি অনুভব করেছিলাম, আমাদের সম্পর্কের সেই গভীরতম বন্ধন, যেখানে এক বাবা, এক আশ্রয়প্রার্থী হয়ে আশ্রয় খুঁজছে নিজের সন্তানের বুকে। সেই মুহূর্তে আমি আর কাঁদিনি, ভেতরে কোথাও এক আশার আলো জ্বলছিল—মনে হচ্ছিল, বাবা সুস্থ হয়ে উঠবেন, আবার সব আগের মতো হবে।

 

কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন। সময় যত এগোচ্ছিল, অন্ধকার যেন ততই ঘিরে ধরছিল চারপাশ। বাবার চোখ দুটো তখন বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। সেই চোখে আমি দেখেছিলাম অসীম আকুতি—বেঁচে থাকার ইচ্ছা, মেয়েকে কাছেই রাখার তীব্র আবেদন, নির্ভরতা, ভালোবাসা। আমি তখন বুঝিনি, সেই চাহনিতে লুকিয়ে ছিল শত শত না বলা কথা।

 

তিনি বলতে পারছিলেন না, কিন্তু চোখে যেন বলে যাচ্ছিলেন—

 

> “আমায় ছেড়ে যাস না।”

“আমার জন্য থাকিস।”

“আমি বাঁচতে চাই তোর জন্য।”

 

 

আমি তখন শুধুই নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছিলাম। বোঝার চেষ্টা করছিলাম কী করব, কীভাবে তাঁকে স্বস্তি দেব। অথচ ঠিক সেই মুহূর্তগুলোতে আমি উপলব্ধি করিনি—এই চাহনি হতে পারে শেষ চাহনি, এই সময় হতে পারে শেষ সময়।

 

তারপর এক সময় সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে গেল। যন্ত্রের শব্দ থেমে গেল, চোখের ভাষা নিভে গেল। আমি যেন এক নিমিষে ঢুকে পড়লাম এক অচেনা পৃথিবীতে—যেখানে শব্দ নেই, আলো নেই, শুধু এক শীতল শূন্যতা।

 

সেই রাতের কথা, সেই শেষ চাহনি, বাবার শেষ স্পর্শ—সবকিছু আজও আমার মনে ভেসে ওঠে। আমি চুপ হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন, আজও চুপ। কান্না দূরে সরে গিয়েছিল, কারণ চোখে জল আসার শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলেছিলাম।

 

মাথার ভেতর বারবার একটা প্রশ্নই ফিরে ফিরে আসে—

আমি কি সত্যিই হারিয়ে ফেলেছি তাঁকে? যাকে আর কোনোদিনই ফিরে পাবো না?

 

সেই চোখের ভাষা, সেই আশ্রয় খোঁজার আকুতি, সেই ভালোবাসার গভীরতা—সব আজ শুধুই স্মৃতি। স্মৃতি বলেই কি এত বেদনাদায়ক? না কি ভালোবাসার এই গভীরতাই স্মৃতিকে এত জীবন্ত করে রেখেছে?

 

আজ যখন একা থাকি, নিঃশব্দে তাকাই আকাশের দিকে, মনে হয়—সেই চোখ দুটো আমায় এখনো খুঁজে বেড়ায়। আমি জানি, তিনি হয়তো কোথাও আছেন—আমার প্রতিটি ভালো কাজের মাঝে, প্রতিটি আত্মবিশ্বাসী পদক্ষেপে, প্রতিটি নিঃশ্বাসে।

 

বাবা, আপনি চলে গেছেন, কিন্তু থেকে গেছেন আমার ভেতরে—চিরতরে।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park