সূরা ফুরকান (৬৩-৭৩ ) নং আয়াতের দ্বারা মু’মিনের চরিত্র ও শিক্ষা :
এস এম জাকারিয়া, মীরসরাই, চট্টগ্রাম
” وَعِبَادُ الرَّحْمَٰنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا. وَالَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَقِيَامًا. وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا. إِنَّهَا سَاءَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا. وَالَّذِينَ إِذَا أَنفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَٰلِكَ قَوَامًا. وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا. يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا. إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا وَمَن تَابَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَإِنَّهُ يَتُوبُ إِلَى اللَّهِ مَتَابًا. وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا. وَالَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ لَمْ يَخِرُّوا عَلَيْهَا صُمًّا وَعُمْيَانًا “.
অর্থাৎ : ” ৬৩- রাহমানের (আসল) বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে বলে দেয়, তোমাদের সালাম। ৬৪- তারা নিজেদের রবের সামনে সিজদায় অবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে রাত কাটিয়ে দেয়। ৬৫- তারা দোয়া করতে থাকেঃ “হে আমাদের বর! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের বাঁচাও, তার আযাব তো সর্বনাশা। ৬৬- আশ্রয়স্থল ও আবাস হিসেবে তা বড়ই নিকৃষ্ট জায়গা। ৬৭- তারা যখন ব্যয় করে তখন অযথা ব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করেনা। বরং উভয় প্রান্তিকের মাঝামাঝি তাদের ব্যয় ভারসাম্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। ৬৮- তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্যকে ডাকে না, আল্লাহ যে প্রাণকে হারাম করেছেন কোন সংগত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। – এসব যে-ই করে সে তারা গোনাহের শাস্তি ভোগ করবে। ৬৯- কিয়ামাতের দিন তাকে উপর্যুপরি শাস্তি দেয়া হবে এবং সেখানেই সে পড়ে থাকবে চিরকাল লাঞ্ছিত অবস্থায়। ৭০- তবে তারা ছাড়া যারা (ঐসব গোনাহের পর) তাওবা করেছে এবং ঈমান এনে সৎকাজ করতে থেকেছে। এ ধরনের লোকদের অসৎ কাজগুলোকে আল্লাহ সৎকাজের দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন এবং আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও মেহেরবান। ৭১- যে ব্যক্তি তাওবা করে সৎ কাজের পথ অবলম্বন করে, সে তো আল্লাহর দিকে ফিরে আসার মতই ফিরে আসে। ৭২- (আর রাহমানের বান্দা হচ্ছে তারা) যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না। এবং কোন বাজে জিনিসের কাছে দিয়ে পথ অতিক্রম করতে থাকলে ভদ্রলোকের মতো অতিক্রম করে যায়। ৭৩- তাদের যদি তাদের রবের আয়াত শুনিয়ে উপদেশ দেয়া হয়, তাহলে তারা তার প্রতি অন্ধ বধির হয়ে থাকে না “।
সূরা ফুরকান সম্পর্কে কিছু তথ্য :
☞ ২৫তম সূরা।
☞ সূরার মোট আয়াত সংখ্যা-৭৭
☞ সূরার মোট রুকু সংখ্যা-৬
☞ ইহা একটি মাক্কী সূরা।
নামকরণ :
সূরার প্রথম আয়াত تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ থেকে।
নাযিলের সময়কাল :
১| বিষয়বস্তু বলে সূরা মুমিনুনের সম-সময়ে নাযিল। তথা মক্কী জীবনের মাঝামাঝি সময়ে।
২| ইবনে নারীর বলেন, এটি সূরা নিসারের ৮বছর পূর্বে নাজিল হয়েছে। সে অনুযায়ীও এটি নাজিল হওয়ার সময়কাল মক্কী জীবনের মাঝামাঝি সময় হওয়াই যুক্তিযুক্ত।
কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয় :
কুরআন, মুহাম্মদ সা.এর নবুয়াত ও তার পেশকৃত শিক্ষার বিরুদ্ধে কাফেরদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত সন্দেহ ও আপত্তি সম্পর্কে আলোচনা। সবটির জবাব এবং দাওয়াত অস্বীকারের পরিণাম।
উপর্যুক্ত আয়াতগুলোর বিষয়বস্তু :
সূরা মুমিনুনের মত মুমিনের নৈতিক গুনাবলীর একটি নকশা তৈরী। খাটি ও ভেজাল নির্ণয়ের জন্য মাধারনের সামনে মানদন্ড প্রদান।
সূরা ফুরকানের শেষ রুকুর (৬৩-৭৩) নং আয়াতে বর্ণিত মু’মিনের ১৩টি গুণাবলী হলো নিম্নরূপ –
১) আল্লাহর বান্দা হওয়া,
২) নম্রতা সহকারে চলা,
৩) মুর্খের থেকে নিরাপদে থাকা,
৪) সর্বদা ইবাদতে মশগুল থাকা,
৫) জাহান্নামের ভয়ে ভীত থাকা,
৬) দানশীল হওয়া,
৭) ইবাদতে কাউকে শরীক না করা,
৮) অন্যায়ভাবে কাউকে খুন না করা,
৯) ব্যভিচার না করা,
১০) কোন মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য না,
১১) অনর্থক সভা সমাবেশ এড়িয়ে চলা,
১২) কুরআন অনুসরণে অন্ধ ও বধীরের ন্যায় আচরণ না করা,
১৩) পরিবারের জন্য দোয়া করা।
হে আল্লাহ তায়া’লা আমাদের সকলকে উপরোক্ত গুণাবলি অর্জন করার ও তার উপর টিকে থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।