মোঃ রবিউল ইসলাম খান রবিন (রাশশাদ)
শিক্ষা কেবল বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর প্রকৃত লক্ষ্য শিক্ষার্থীর সামগ্রিক বিকাশ। সেই বিকাশের অন্যতম চালিকা শক্তি হলো সহশিক্ষা কার্যক্রম। সিলেটের শাহ পরাণ এলাকার সুনামধন্য বিদ্যাপীঠ জননী আইডিয়াল একাডেমীতে সহশিক্ষা কার্যক্রমের প্রশিক্ষক হিসেবে ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ১৭ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। এ সময়ের অভিজ্ঞতা আমার কাছে শুধুই একটি দায়িত্ব নয়, বরং একটি অনুপ্রেরণার গল্প।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবারে চলতো বিতর্ক দলের নিয়মিত অনুশীলন। শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে বিতর্কের প্রতি আগ্রহ, যুক্তি সাজানোর আনন্দ এবং আত্মবিশ্বাসের ঝিলিক আমাকে বারবার মুগ্ধ করতো। জননী আইডিয়াল একাডেমীতে যোগদানের পর আমি একটি সুসংগঠিত বিতর্ক দল গঠন করি। এই দল শুধু বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতায় নয়, বরং আন্তঃবিদ্যালয় প্রতিযোগিতাতেও সফলতার মুখ দেখেছে।
কিন্তু আমার কাজ কেবল বিতর্কেই সীমাবদ্ধ ছিল না। আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীর প্রতিভা বহু দিক দিয়ে বিকশিত হওয়া দরকার। তাই প্রতিষ্ঠানে গঠন করেছিলাম বিজ্ঞান ক্লাব, ইংলিশ ক্লাব, গণিত ক্লাব, ফুটবল দলসহ নানা কার্যক্রম। বিজ্ঞান ক্লাব শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে পরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ জাগিয়েছে। ইংলিশ ক্লাব তাদের ইংরেজি ভাষা চর্চায় সাহসী করে তুলেছে। গণিত ক্লাব সংখ্যার ভীতি দূর করে আনন্দের সাথে সমস্যা সমাধানে উৎসাহ দিয়েছে। আর ফুটবল দল তাদের শারীরিক সক্ষমতা ও দলগত চেতনা বৃদ্ধি করেছে।
সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, তা ছিল চোখে পড়ার মতো। যারা একসময় জনসমক্ষে কথা বলতে ভয় পেত, তারা বিতর্ক মঞ্চে দাঁড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে যুক্তি তুলে ধরেছে। যাদের ইংরেজি কথোপকথনে সংকোচ ছিল, তারা আত্মবিশ্বাসের সাথে আলোচনায় অংশ নিয়েছে। আর গণিত ও বিজ্ঞানের প্রতি অনাগ্রহী অনেকেই ক্লাব কার্যক্রমের মাধ্যমে নতুনভাবে বিষয়গুলোকে ভালোবেসে ফেলেছে।
এই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে, একটি বিদ্যালয় যদি পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে সমান গুরুত্ব দেয়, তবে শিক্ষার্থীরা শুধু পরীক্ষায় ভালো করবে না—তারা হয়ে উঠবে সৃজনশীল, আত্মবিশ্বাসী এবং সমাজ সচেতন নাগরিক।
জননী আইডিয়াল একাডেমীর এই যাত্রায় আমি কেবল প্রশিক্ষক নই, বরং একজন শিখনসঙ্গী ছিলাম। প্রতিটি হাসি, প্রতিটি অর্জন, প্রতিটি ছোট্ট সাফল্য আমার পেশাগত জীবনের এক অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে।
শিক্ষা যদি হয় মনন গঠনের শিল্প, তবে সহশিক্ষা কার্যক্রম তার রঙতুলি—যা শিক্ষার্থীর জীবন ক্যানভাসকে করে তোলে বর্ণিল ও অর্থবহ।