ইসলাম কেবলমাত্র কিছু বিধি-বিধানের সমষ্টি নয়, বরং এটি মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি পরিপূর্ণ গাইডলাইন। ইসলাম এমন একটি জীবনব্যবস্থা, যা মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শেখায় এবং আত্মিক প্রশান্তির দিগন্ত খুলে দেয়। একজন মানুষ কীভাবে সত্যিকারের সফল হতে পারে, তা ইসলাম খুব সুন্দরভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরেছে।
সফলতার সংজ্ঞা যদি কেবল দুনিয়ার ভোগবিলাস, অর্থ-সম্পদ ও খ্যাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত, তাহলে অনেক বিত্তবান ও ক্ষমতাশীল ব্যক্তিই সুখী হতে পারতেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক ধনী মানুষও অন্তরের শান্তি খুঁজে পান না, অন্যদিকে অনেকে সীমিত সম্পদের মাঝেও প্রশান্তিতে জীবন কাটান। ইসলাম সেই প্রশান্তির মূল রহস্য আমাদের শিখিয়েছে।
একজন মানুষ সত্যিকারের সফল তখনই হবে, যখন সে তার দুনিয়া ও আখিরাত—উভয় জীবনে কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারবে। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রকৃত সফলতা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। একজন ব্যক্তি যদি আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলে, সত্যকে আঁকড়ে ধরে এবং অন্যায় ও পাপ থেকে নিজেকে দূরে রাখে, তাহলে সে এক অনন্য সফলতার অধিকারী হবে। আল্লাহ তা’আলা কুরআনে ঘোষণা করেছেন—
“যে ব্যক্তি পরিশুদ্ধ জীবন যাপন করবে, সে-ই সফল হবে।” (সূরা আল-আ’লা: ১৪)
সফল জীবনের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো আত্মশুদ্ধি ও আত্মনিয়ন্ত্রণ। একজন মুমিন যদি তার মন ও চরিত্রকে বিশুদ্ধ রাখতে পারে, তাহলে সে সর্বদা সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার পথে অগ্রসর হবে। এ জন্য প্রয়োজন সৎচিন্তা, নৈতিক মূল্যবোধ এবং আল্লাহর ভয়। যে ব্যক্তি তার আত্মাকে কলুষিত করে, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়, সে কখনো প্রকৃত সফলতা অর্জন করতে পারে না।
ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় যে, দুনিয়ার জীবন সাময়িক। এটি পরীক্ষার ক্ষেত্র। এই পরীক্ষায় সফল হতে হলে ধৈর্য, কৃতজ্ঞতা ও আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখা জরুরি। দুঃখ-কষ্ট আসবে, চ্যালেঞ্জ আসবে, কিন্তু যদি আমরা ধৈর্য ধরে আল্লাহর ওপর নির্ভর করি, তাহলে কঠিন পরিস্থিতিতেও শান্ত থাকতে পারব।
সফলতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো হালাল রিজিক অর্জন। ইসলাম স্পষ্টভাবে বলেছে, অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ বা সম্পদ কখনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। বরং হালাল পথে উপার্জিত সামান্য সম্পদও বরকতময় হয়। রাসূল (সা.) বলেছেন—
“সৎপথে উপার্জিত একটি দিরহাম হারাম উপার্জিত দশ হাজার দিরহামের চেয়ে উত্তম।” (তিরমিজি)
সফলতার আরেকটি রহস্য হলো পরোপকার ও মানবসেবা। একজন মুসলমানের জীবন হবে মানবতার কল্যাণে নিবেদিত। আত্মকেন্দ্রিক জীবনযাপন নয়, বরং সমাজের কল্যাণে কাজ করাই একজন প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“সবচেয়ে উত্তম মানুষ সে, যে মানুষের উপকারে আসে।” (আল-হাদিস)
অতএব, যারা সত্যিকার অর্থে সফল হতে চান, তাদের উচিত ইসলামের নির্দেশনা অনুসারে জীবন গড়ে তোলা। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদর্শকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা। তবেই দুনিয়া ও আখিরাত—উভয় জগতে আমরা সফল হতে পারব। আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দান করুন। আমিন।
মোহাম্মদ মোহছেন মোবারক
আনোয়ারা চট্টগ্রাম।