মোঃ রবিউল ইসলাম খান রবিন (রাশশাদ)
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের রাজঘাট ইউনিয়নের খেজুরিছড়া চা-বাগানে অবস্থিত শতবর্ষের স্মৃতিবিজড়িত ডিনস্টন সিমেট্রি কেবল একটি কবরস্থান নয়, বরং চা শিল্পের সাথে জড়িয়ে থাকা অতীত ইতিহাস, বেদনা আর ভালোবাসার অনন্য দলিল। ১৮৮৫ সালে ব্রিটিশ নাগরিক রবার্ট রয়বেইলিকে সমাহিত করার মধ্য দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়, আর আজ এখানে শায়িত আছেন মোট ৪৬ জন, যার মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ দম্পতি, শিশু এবং চারটি প্রতীকী কবর।
প্রতিটি সমাধি যেন একটি গল্প—যেখানে আছে ভালোবাসার অমর দৃষ্টান্ত ‘মেরি এলিজাবেথ পিটার’ ও তার স্বামী ‘জর্জ উইলিয়াম পিটার’-এর যৌথ কবর, আবার আছে এক নারীর অপূর্ণ ভালোবাসার স্মৃতি, যিনি স্বামীর মরদেহ শেষবারের মতো দেখতে না পেরে শিলালিপিতে লিখে গেছেন হৃদয়বিদারক উক্তি “ইন লাভিং মেমোরি অব মাই হাজবেন্ড”। এই কবরস্থান যুদ্ধের সাক্ষীও বটে—দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত বিদেশি পাইলটদের মরদেহ একসময় এখানে সমাহিত করা হয়েছিল, যা ইতিহাসের করুণ অধ্যায় হয়ে রয়েছে।
দর্শনার্থীরা যখন এ সমাধিগুলোর সামনে দাঁড়ান, তখন তারা শুধু নাম ও তারিখ পড়েন না, অনুভব করেন শত বছরের পুরোনো এক অমর ইতিহাসের দীর্ঘশ্বাস, ভালোবাসার নিদর্শন আর মৃত্যুর নীরবতা। আজ ডিনস্টন সিমেট্রি শুধু মৃতদের সমাধি নয়, বরং পর্যটনের আকর্ষণীয় কেন্দ্র, যেখানে এসে দেশ-বিদেশের মানুষ আবিষ্কার করেন শ্রীমঙ্গলের চায়ের ইতিহাস এবং মানবজীবনের ক্ষণস্থায়িত্বের গভীর পাঠ।