আমি ফেসবুকে সাফা নামে একটি মেয়েকে অসম্ভব ভালোবাসতাম। তার বাবার নাম হজরত আলী এবং মায়ের নাম মহসেনা বেগম। সে আমাকে কতটা ভালোবাসত, তা আমি জানি না, তবে আমি তাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতাম। আমাদের পরিচয় হয়েছিল ফেসবুকে, তবে ভালোবাসাটা ছিল একদম খাঁটি। প্রায় ২ বছর ৩ মাস ধরে তাকে ভালোবেসেছি। প্রথম পরিচয়টা হয়েছিল যখন আমি তার জন্য একটি নাম আর্ট ডিজাইন করে দিয়েছিলাম। সেখান থেকেই শুরু—পরিচয়, বন্ধুত্ব, আর পরে গভীর সম্পর্ক।
আমি তাকে প্রচণ্ড ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তার জন্য বাঁচা যেন আমার জন্য অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। মাঝখানে সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। আমি তাকে আগের মতোই ভালোবেসে গেছি। কিন্তু হঠাৎ একদিন, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে, আমার ফোনটি নষ্ট হয়ে যায়। এরপর তার সঙ্গে কথা বলার জন্য আমি পাগলের মতো ছটফট করছিলাম।
তার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য একদিন তার আপুর সঙ্গে বাটন ফোন দিয়ে কথা বলি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই ফোনটিও নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে আর তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারিনি। আমি তাকে প্রতিদিন মনে করতাম। তার কথা মনে পড়লেই খাতায় লিখতাম “মিস ইউ”। প্রতিটি শব্দে যেন তার জন্য আমার ভালোবাসার গভীরতা প্রকাশ পেত। আমি ভেবেছিলাম, ফোন কিনে নেওয়ার পর সব লেখা তাকে দেখাব।
তাকে এত মিস করার পরেও থেমে থাকিনি। বাসা থেকে ফোন কেনার জন্য জোর করতে থাকি। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে সেই দিনেই ফোন কেনা সম্ভব ছিল না। অবশেষে, ২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি একটি ফোন কিনি। তখনই শুনি তার বোনের বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে এমন কিছু কথা, যা আমার হৃদয় ভেঙে দেয়:
“তুমি যদি সত্যি আমাকে ভালোবাসো, তবে আমাকে কিছু কথা দাও। তুমি নিজের ক্ষতি করবে না। আমার সুখের জন্য তুমি হাসিমুখে আমাকে ছেড়ে দেবে। আমার খুশির জন্য তুমি আমার থেকে দূরে থাকবে। আর কথা দাও, তুমি তোমার পরিবারের পছন্দে বিয়ে করবে।”
এই কথাগুলো শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। এই মানুষটির জন্য আমি কত কিছু করলাম, কত স্বপ্ন বুনলাম, অথচ সে আমাকে মুক্তি চায়!
ফোন কেনার জন্য আমি আমার মা-বাবাকে বারবার বলেছিলাম। একদিন আমি মাকে এমন কথা বলেছিলাম, যা তার হৃদয়ে আঘাত দিয়েছিল। আমি বলেছিলাম, “ফোন কিনে না দিলে আমি বাঁচব না, ভাত খাব না।” আমার মা আমার জন্য কেঁদেছিলেন। সেই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তিনি একবেলা ভাত খাওয়া বন্ধ করে দেন। শুধু আমার জন্য মা এত কষ্ট করলেন, অথচ যার জন্য এত কিছু করলাম, সেই সাফা আমাকে ছেড়ে গেল।
আজ আমার মা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। তার হাত-পা কাজ করে না। এই অবস্থার জন্য আমিই দায়ী। সাফাকে ভালোবেসে কথা বলার জন্য আমি মাকে চাপ দিয়েছিলাম। মায়ের সুখের জীবনটাও ধ্বংস করে ফেললাম। সাফা বলেছে, তার খুশির জন্য আমি যেন তাকে ভুলে যাই। কিন্তু আমি কখনো ভুলতে পারব না। আমি তাকে কথা দিয়েছিলাম, জীবনে প্রথম ভালোবাসব এবং সে-ই হবে শেষ। আমি সেই কথা রাখব। আমার জীবনে দ্বিতীয় কোনো নারী আসবে না।
আজ সাফা হয়তো অন্য কারও সঙ্গে সুখে আছে। কিন্তু আমি তাকে প্রতিদিন মনে করি, প্রতিটি স্মৃতি লিখে রাখি। সে আমাকে ভুলতে বলেছে, কিন্তু আমি তাকে কখনো ভুলব না। আমি তাকে ভালোবেসেছিলাম, এখনও বাসি, আর আমৃত্যু বাসব।