1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

শুকনো ফুলের ঘ্রাণ — জাকির আলম

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৬১ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

শুকনো ফুলের ঘ্রাণ

জাকির আলম

 

অনেক দিন পর তোমার দেওয়া ডায়েরির পাতায় চোখ রাখতেই হৃদয় ফোটে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সেই সাথে বুকের ভিতর জেগে উঠেছে পুরনো ক্ষত। এতোদিন পরেও তোমাকে ভুলে যাওয়ার কোনো অবকাশ পাইনি। এখনো তোমার অপেক্ষায় থেকে দ্বিতীয় কাউকে ভালোবাসতে পারিনি। এখনো ডায়েরির পাতার ফাঁকে তোমার রেখে দেওয়া শুকনো ফুলের ঘ্রাণ আমাকে সদা আচ্ছন্ন করে রাখে। এখনো তোমার নরম হাতের স্পর্শ অনুভব করি ডায়েরির পাতার প্রতি ভাঁজে ভাঁজে। একটা সময় তোমাকে ছাড়া আমার সবকিছু এলোমেলো ছিলো৷ একনজর না দেখলে উদ্বিগ্ন হয়ে যেতাম। অথচ সেই তুমি আজ বড় অচেনা। বন্ধুত্বের জায়গা থেকে আমাদের যুগল প্রেমের গল্প অপূর্ণতায় হারিয়ে গেছে। শুধু রয়ে গেছে তোমার সহস্র স্মৃতি। গভীর নিশীথে নিঃসঙ্গতার অন্ধকারে হারিয়ে যখন তোমার চিঠিগুলো বারংবার পড়তে যাই তখন তোমার কথা খুব মনে পড়ে। কোনোভাবেই তোমাকে ভুলে থাকতে পারিনা। ভেবেছিলাম কোনো একদিন তুমি ফিরে আসবে। কিন্তু ততোদিনে তুমি অন্যজনের সাথে সুখের সংসার পেতেছো।

 

তুমি ভালো থাকলে আমার আফসোস করার কিছু নেই। কিন্তু তবুও তোমাকে হারানোর কষ্টে অবিরাম বুকটা ফেটে যায়। সীমাহীন ভালোবাসায় জড়িয়ে তোমাকে আমার হৃদয়ের মেহমান বানিয়ে ছিলাম। সেটা তুমিও জানতে। তবুও কেন যে আমাকে ছেড়ে তোমার নিরুদ্দেশ ভ্রমণ সেই প্রশ্নের উত্তর আজো আমি খুঁজে পাইনি৷ স্বপ্ন ছিলো তোমার সাথেই আমৃত্যু থেকে যাবো। কখনো তোমার কষ্টের কারণ হতে চাইনি। চেয়েছিলাম তোমার স্বপ্নের পুরুষ হয়ে অন্তহীন ভালোবাসতে। কিন্তু সেই সুযোগটা তুমি আমাকে দিলে না। তোমাকে হারানোর পিছনে আমার কোনো দোষ এখনো খুঁজে পাইনি। তুমিও বলে যাওনি কেনই বা আমাকে ছেড়ে গেলে ? বলে গেলে হয়তো নিজের ভুলের মাশুল দিয়ে তোমার কাছে আপাদমস্তক ক্ষমা চাইতাম। এখন মনে হয় তুমি তোমার স্বার্থের কাছে হেরে গেছো। সেজন্য আমাকে ভুলে যেতে তোমার খুব বেশি কষ্ট হয়নি। শুনেছি নিরুদ্দেশে তুমি অনেক ভালোই আছো। স্বামী সন্তান নিয়ে সুখেই আছো। আমার কথা ভাবার মতো সময় নেই তোমার কাছে৷ তোমার কাছে এখন আমি ধোঁয়াশার মরীচিকা। একটা সময় তুমি বলতে আমাকে ছাড়া তোমার সবকিছু বৃথা। আমি ছাড়া কোনোদিন তুমি থাকতে পারবে না। কিন্তু আজ তুমি আমার ত্রিসীমানায় নেই। হয়তো ভুলে গেছো সেসব কথা। কিন্তু আমি ভুলে যেতে পারিনি সেসব কথা। মিথ্যে ভালোবাসার স্বপ্নে আমাকে তুমি না ভাসালেও পারতে। বিনা দোষেই আমাকে তুমি দোষী সাব্যস্ত করেছো। তবুও তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। তুমি তোমার ভালোর জন্য যা করেছো সেটা তোমার মঙ্গল হোক। তুমি ভালো থাকো সবসময়। চিরদিন আমি তোমার ভালো চাই। কখনো তোমাকে অভিশাপ দিবো না। যাকে মন থেকে ভালোবাসা যায় তাকে কাছে না পেলেও কখনো ভুলে থাকা যায় না। প্রিয় মানুষকে হারানোর ক্ষত কখনো মুছে যায় না৷ বরং দিন দিন তার ব্যাপ্তি আরো ছড়িয়ে পড়ে পুরো শরীর জুড়ে।

 

পেশাগত জীবনে তুমি মানব সেবিকা হলেও আমার প্রতি তুমি রীতিমতো অন্যায় করেছো। তোমাকে ছাড়া আমার কষ্ট হবে জেনেও তুমি তোমার দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছো। মাকড়সার মতো জাল বুনেছো আমার অবয়ব জুড়ে। বাহিরে তুমি সুন্দর হলেও তোমার ভিতরটা নিকষ কালো অন্ধকারে ভরপুর। তোমার হাসির মায়ায় পড়তে গিয়ে আমার জীবনের বারোটা বেজে গেছে। যেখান থেকে কোনো মুক্তি নেই আমার। এরচেয়ে তুমি যদি আমাকে গলা টিপে হত্যা করতে তবুও বেঁচে যেতাম। এতোটা কষ্ট নিয়ে আমাকে বেঁচে থাকতে হতো না। ফেলতে হতো না চোখের নোনা জল। কাঁদতে কাঁদতে ভোর হতো না কোনো রাত। আমার পুরো পৃথিবী জুড়ে তোমার অবস্থান ছিলো। তুমি চাইলেই আমাদের ভালোবাসার পূর্ণতা পেতো। তখন আর এতো কষ্ট নিয়ে আমাকে বেঁচে থাকতে হতো না। কিন্তু তোমাকে যে খুব সহজে পেয়ে গেছে সে কখনো বুঝবে না তোমাকে কাছে পাওয়ার আনন্দটা। তার কাছে তুমি কখনোই শখের নারী হয়ে উঠতে পারবে না। তুমিও খুঁজে পাবে না মিলনের পূর্ণ স্বাদ। তাই অপূর্ণ থেকে যাবে তোমার সব সাধ-আহ্লাদ। মাঝখানে কেউ সুখী হতে পারবো না। তবুও বেঁচে থাকার সংগ্রাম করে যেতে হবে আজীবন। সত্যি বলতে মানুষ যা চায় তা সবসময় পায় না। সবকিছু পেয়ে গেলে হয়তো জীবন এতোটা রহস্যময় হতো না। চিরদিন কারো এক যায় না৷ যার এক যায় তার জীবনটা বড়ই অভিশপ্ত। তোমাকে না পেলেও সারাজীবন তোমার স্মৃতিগুলো আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকবো। দূর থেকেই তোমাকে সীমাহীন ভালোবেসে যাবো। তোমাকে পেয়ে গেলে হয়তো হারানোর কষ্ট কখনোই বুঝতাম না।

 

চোখের জলে ভিজতো না শিয়রের বালিশ। চাপা আর্তনাদে ক্ষতবিক্ষত হতো না বুকের পাঁজর। নির্ঘুম রাতের কষ্টও কখনো বুঝতাম না৷ তোমাকে হারিয়েও অমৃত কোনো সুখের দেখা পেয়েছি। সে সুখ কেবল অন্তর্হিত। যা তোমাকে কাছে পাওয়ার থেকেও তীব্রতর আনন্দের। তোমাকে হারানোর পর থেকে অনেক ভাবেই তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কখনোই সফল হতে পারিনি। তুমি চলে গেছো আমার বৃত্তের বাইরে। এখনো নিয়ম মেনে দিনের পর রাত আসে৷ সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই ঝাঁক বেঁধে পাখি ফিরে আসে নীড়ে। নদীর বুকে ঢেউ জাগে দখিনা বাতাসে। সূর্যের  আলোয় আলোকিত হয় অন্ধকার পৃথিবী। নাবিক ছুটে চলে অজানা গন্তব্যে। ফুলের মধু খেতে প্রজাপতির আনাগোনা। অথচ তোমার নিয়মনীতি সব বদলে গেছে৷ অন্যজনের সাথে তোমার দৈনন্দিন পথ চলা। কখনো পিছু ফিরে তাকাওনি। তোমার ফিরে আসার অপেক্ষায় যে দরজা খোলা রেখেছিলাম সেখানে লতাপাতার অনেক ঘাস জন্মেছে৷ ঢেকে গেছে দরজার ফাঁকফোকর। একলা বিছানায় শুয়ে থাকার কি যে ভয়ানক কষ্ট সেটা তুমি কোনোদিন বুঝবে না। জীবন সঙ্গী হারিয়ে গেলে বেঁচে থাকাটাই তখন বৃথা হয়ে যায়। তোমাকে হারিয়ে আমি নামমাত্র বেঁচে আছি। অনুভূতি মরে গেছে ডুকরে ডুকরে কেঁদে।

 

কাউকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন উবে গেছে জীবন প্রণালী থেকে। ভোঁতা হয়ে গেছে দেহের সব কলকব্জা। মনে রাখার স্মৃতি শক্তিও একদম কমে গেছে। কমে গেছে চোখের জ্যোতি। অল্প দূরত্বেও এখন স্পষ্ট চোখে দেখি না। ঘোলাটে লাগে পৃথিবীর সব আলোকিত স্মৃতিস্তম্ভ। মনের চাওয়া-পাওয়াগুলোও নিঃশেষ হয়ে গেছে। কখন যেন যমদূত এসে আমার আঙিনায় হানা দেয়। যদিও মৃত্যুর কোনো ভয় অনুভূতির মাঝে আর কাজ করে না। তবুও বেঁচে থাকার বৃথা চেষ্টায় তোমাকে ধারণ করে চলেছি প্রাণের ভিতর। তোমাকে কাছে পাওয়ার অনেক ঊর্ধ্বে চলে গেছি যাপিত বোধের অগোচরে। চিলেকোঠার ঘর বেঁধেছি বেদনার বালুচরে। অতিথি পাখির মতো ছুটে চলেছি গন্তব্যহীন পৃথিবীর অভিমুখে। শারীরিক এবং মানসিক প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ঘর ছেড়েছি ফেরারি জীবনের পথ ধরে। নতুন ভাবে জীবন শুরু করার কোনো ইচ্ছেই আজ অবশিষ্ট নেই মনের শক্তিবলয়ে। শুধু একটু মানসিক প্রশান্তির আশায় এতোসব আয়োজন। একটা জীবনে খুব বেশি চাওয়ার ছিলো না। তোমাকে পেয়ে গেলে দ্বিতীয় কোনোকিছু পাওয়ার আশা একদম ছেড়ে দিতাম।

 

সারাক্ষণ তোমার ভালোবাসা পাওয়ার অভিপ্রায়ে শাড়ির আঁচল তলে লুকিয়ে থাকতাম। মাঝেমাঝে আড়াল থেকে লুকোচুরি খেলতাম তোমার সাথে। দিনের শেষে রাত এলেই তোমার কাছে ধরা দিতাম। আদরে সোহাগে ভরিয়ে দিতাম তোমার মন। কোলে তুলে নিয়ে তোমাকে বিছানায় শোয়াতাম। তারপর মন ভরে তোমাকে চোখ মেলে দেখতাম। কখনো তোমাকে কষ্টের সমুদ্রে ভাসাতাম না। তোমাকে সুখী করার সব দায়িত্ব ভার কাঁধে তুলে নিতাম। তোমার ইচ্ছেগুলোকে শতভাগ গুরুত্ব দিতাম। যখন যা বলতে নির্দ্বিধায় সব মেনে নিতাম। কিন্তু আমাকে কষ্টের সমুদ্রে ভাসিয়ে তুমি চলে গেছো অচেনা পৃথিবীর হাত ধরে। যেখানে তোমাকে খুঁজে পাওয়ার কোনো সাধ্য নেই আমার। আমার সবকিছুকে তুমি হেঁয়ালির চোখে দেখেছো। যেটা মেনে নিতে আমার অনেক বেশি কষ্ট হয়েছে৷ তবুও মেনে নিছি রিয়ালিটির কাছে হেরে গিয়ে।

 

কখনো তোমার চলার পথে বাঁধার দেওয়াল হয়ে দাঁড়াইনি। অথচ তবুও তোমাকে পোষ মানাতে পারিনি আমার যাপিত ভালোবাসার সংমিশ্রণে। তখন আমি সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়েছি তোমার কাছে৷ তুমি ভালো থাকলে আমিও ভালো থাকি। তুমি ভালো থাকলে আমিও প্রশান্তির ছোঁয়া অনুভব করি ভোরের স্নিগ্ধ আবহে। তুমি যেখানেই থাকো বিধাতার সুদৃষ্টি যেন তোমার সাথেই থাকে। তোমার প্রতি এই শুভ কামনায় ঠিকানা বিহীন এক ধূসর অন্ধকার জগতে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছি কালো মেঘের ডানায় ভেসে। কখনো আর ফেরা হবে না উপনীত পৃথিবীর বুকে। আমাকে তোমার ক্ষমার প্রার্থনায় রেখে স্বর্গ সুখের মাঝে বেঁচে থেকো। আমি তোমার শুকনো ফুলের সুবাসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার অপেক্ষায় শায়িত আছি জীবন্মৃত লাশের উপক্রমে। কখন যেন চলে যাই মৃত্যুর অনেক ঊর্ধ্বমুখী জীবনে। শেষ দেখাটা আর হবে না তোমার সাথে। এইটুকু আফসোস রয়ে যাবে হৃদপিণ্ডের অস্থিমজ্জায়। তবুও আমি পরিপূর্ণতার ছোঁয়া পেয়েছি একজীবনে তোমাকে ভালোবাসতে পেরে। এরচেয়ে সুখের অনুভূতি আমার কাছে হতে পারে না। কিছুতেই হতে পারে না !

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park