1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান

  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৮৫ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান”

ফারুক আহম্মেদ জীবন 

ইচ্ছাশক্তি আইডি নম্বর- 0020220582

 

একটি দুইটি দিন করে। একমাস, দুই মাস, তিন মাস। তারপর একবছর, দুই বছর, তিন বছর। এভাবে ক্লাস ওয়ান থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। দীর্ঘ পাঁচ পাঁচটি বছর যেনো চোখের পলকেই কেটে গেলো। সেদিনের সেই জিহাদ নামের ছোট্ট দুষ্টু মিষ্টি ছেলেটির প্রাইমারির স্কুল জীবন।

 

এরইমধ্যে জিহাদের বয়সী কতো-যে চেনা-অচেনা ছেলেমেয়েরা হয়েছে জিহাদের স্কুল জীবনের বন্ধু। ক্লাসে পড়ালেখার সহপাঠী। হয়েছে খেলার সাথী। যাদের সঙ্গে সুখে- দুঃখে হাসি- আনন্দে কেটেছে জিহাদের সুদীর্ঘ পাঁচ-পাঁচটি বছর। শিশু ওয়ানের স্বরবর্ণ অ, আ, ই, ঈ, ব্যঞ্জনবর্ণ ক, খ, গ, ঘ, ঙ, আর গাছ, পাখি, ফুল, প্রজাপতি,সাগর নদী, পাহাড় আকাশ, চাঁদ, তারা সূর্যের ছবি আঁকাআঁকি আর পাঠ্যবই নিয়ে বাল্যকালের তার ছোট্ট জীবনটা। প্রতিটাদিন স্কুল টাইমে টিফিনের সময় টিফিন একে অন্যের সাথে ভাগাভাগি করে খাওয়া। টিফিনের পর পড়ার ফাঁকে নানান রকম খেলা-ধুলা, দুষ্টুমি হৈ-হুল্লোড় করে কাটিয়েছে দিনগুলো।

 

এই কয়বছরে  স্কুলটি-কে ঘিরে রয়েছে জিহাদের ছোট্ট বাল্য জীবনের পিছনে হারিয়ে যাওয়া কতোই- না সুখ- দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দময় স্মৃতি বিজড়িত মধুময় ঘটনা। এখন বিদায়ের প্রায় দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে সেই  জিহাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবন। এই ডিসেম্বরেই জিহাদের পঞ্চম শ্রেণীর বার্ষিক সমাপনী ফাইনাল পরিক্ষা শুরু হবে। তারপর জিহাদের জীবনে শুরু হবে আবারো এক নতুন অধ্যায়। একেবারে নতুন অচেনা স্কুল, অচেনা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে নতুন পরিচয়- পরিচিতি। নতুন সব শিক্ষা পাঠ। নতুন সহপাঠী, নতুন পড়ার, আর খেলার সাথী।

 

খুব ছোটবেলায় জিহাদ পড়ালেখায় বেশ ভালো ছিল। কিন্তু মাঝে হঠাৎ! আকস্মিক ভাবে বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় প্রচন্ডভাবে আঘাত পাই নিচে প্রাচীরের ইটের ওয়ালে। সেই আঘাতে মাথা অনেকখানি কেটে গিয়েছিে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল তাতে জিহাদের। সেদিন বেশ কয়েকটা সেলাই দিতে হয়েছিল জিহাদের মাথার কাটা স্থলে। আর তারপর থেকেই জিহাদ যেনো আগের মতো পড়ালেখায় তেমন একটা মনোযোগী হতে পারে না। জিহাদের পড়ালেখায় অমনোযোগী দেখে। জিহাদের আব্বু আম্মু সবসময়- জিহাদকে নিয়ে বেশ দুঃশ্চিন্তায় থাকে। কেননা….

“শিক্ষা হলো জাতির মেরুদণ্ড….

যার ভিতর শিক্ষার আলো নেই। সে জ্ঞান হীন মূর্খ মানুষ অন্ধকারের সামিল। আর অন্ধকার বিপদের সামিল ”

 

তবে জিহাদের মাথায় আঘাতের ঘটনা শোনার পর থেকে।তাদের পানিসারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বলা যায়, প্রায়, সব শিক্ষক শিক্ষিকারাই তাকে চোখে চোখে রাখে।বিশেষ করে তার স্কুলের মাসুদ রানা স্যার। হাসান মাস্টার, কালাম স্যার, মঞ্জুয়ারা ম্যাডাম। হেড ম্যাডাম পুষ্প রাণী বিশ্বাস, অন্য অন্য স্যার, ম্যাডাম সকলেই।

 

“জিহাদের আব্বু জীবন একজন হতদরিদ্র কবি।

বলা যায়, তার সংসারে নুন আনতেই

হাঁড়ির পান্তা-টি ফুরাই।

আর সেজন্য তার ছেলে জিহাদ। এতোবড় একটা

আঘাত পাওয়া সত্তুেও…ইচ্ছা থাকলেও…

আজও পর্যন্ত, কবি জীবন, তার ছেলে জিহাদকে একজন ভালো মাথার ডক্টরকে দেখিয়ে মাথাটা সিটি স্কিন করে পরিক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে কোনো

উন্নত চিকিৎসা করাতে পারিনি।

জিহাদের আব্বু জীবন আজ কয়দিন বেশ লক্ষ্য করছে জিহাদের মনটা ভীষণ খারাপ। জীবন ছেলে জিহাদকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলো জিহাদ?

আজ কয়দিন তোমার মন খারাপ কেনো?

 

জিহাদ বললো: আব্বু আগামী রবিবার স্কুলে আমাদের বিদায় অনুষ্ঠান। পরিক্ষার পর স্কুলটা ছেড়ে চলে আসতে হবে। খুব ছোট্টবেলা থেকে ঐ স্কুলে পড়েছি তো। বেশ মায়া পড়ে গেছে স্কুলটার প্রতি। স্কুল, স্কুলের স্যার, ম্যাডামদের ছেড়ে চলে আসতে হবে ভাবতেই কেমন যেনো কান্না আসছে। জানো আব্বু.. আজ কয়দিন স্যার ম্যাডামদেরও মন খুব খারাপ। জীবন বললো…তেমনটাই তো হওয়া স্বাভাবিক বাবা। প্রতিটা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা-রা। ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েদের হাতেখড়ি থেকে শুরু করে। তাদের প্রকৃত আদর্শবান মানুষ করে গড়ে তুলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে। আর এজন্যই তো মা-বাবার পরেই শিক্ষা গুরু, শিক্ষক শিক্ষিকার সম্মান মর্যাদা অপরিসীম। কেননা,তারা প্রতিটা মা-বাবার মতোই, স্কুল সময়ে ছেলে-মেয়েদের দেখে শুনে রাখে। জিহাদ বললো…তুমি ঠিক কথা বলেছ আব্বু। আমরা কতো জ্বালাতন করি স্কুলে স্যার ম্যাডামদের। অথচ, তারা রাগ করে না। একটু বকাবকি করলেও। পরে আবার কাছে ডেকে আদর করে।

 

জীবন বললো.এজন্য শিক্ষকদের মা-বাবার মতো

ভক্তি, শ্রদ্ধা, সম্মান করতে হয় বাবা। তাদের দোয়া আশীর্বাদ নিতে হয়। তাহলে মানুষের মতো মানুষ হওয়া যায়। অনেক জ্ঞানী গুণী হওয়া যায়। যাও মন খারাপ করো না। পরিক্ষার বাকি এই কয়টা- দিন মন দিয়ে পড়ালেখা করো। আর শোন..বিদায় অনুষ্ঠানের দিন শিক্ষকদের আশীর্বাদ চেয়ে নিও কেমন..। কেননা..মানুষের মতো মানুষ হতে গেলে শিক্ষকদের দোয়া খুব বেশি প্রয়োজন।

 

জিহাদ বললো…ঠিক আছে আব্বু। তুমিও আমার

জন্য দোয়া করো। কবি জীবন হেসে উঠে বললো..

মা-বাবার দোয়া সবসময় সন্তানের মাথার উপর থাকে বাবা জিহাদ। আলাদা ভাবে মুখে বলার দরকার হয়না।এরই দুইদিন পর…

আজ রবিবার জিহাদের স্কুলে বিদায় অনুষ্ঠানের দিন। অন্য ছাত্র- ছাত্রীদের মা-বাবাদের মতন। জিহাদের আব্বু আম্মুও গেছে জিহাদের সাথে তার স্কুলে। স্কুল কমিটির সভাপতি, সহসভাপতি, সেক্রেটারি, প্রধান শিক্ষিকাসহ এলাকার গণ্য মান্য ব্যক্তিবর্গ সকলে নিজেদের আসনে উপবিষ্ট।

 

সামনে ছাত্র- ছাত্রীরা বসে আছে। আলোচনার একপর্যায়, ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্য এক-এক করে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখলো। তাদের মধ্যে শিক্ষকদের অনুরোধে জিহাদের আব্বু কবি জীবন -ও ছোট ছোট কচিকাঁচা ছাত্র- ছাত্রীদের উদ্দেশ্য। তাদের আগামীদিনের আলোকিত জীবন গড়ার দিকনির্দেশনা দিয়ে। কিছু মূল্যাবান বক্তব্য পেশ করলো। উপস্থিত সকলেই খুব খুশি হল জিহাদের আব্বু কবি জীবনের মহামূল্যবান কথা শ্রবণ করে। ছাত্র- ছাত্রীদের মধ্য থেকে দুই একজনকে কথা বলার জন্য ডাকা হলো। একসময় ডাকা হলো জিহাদকে। জিহাদ শিক্ষকদের কাছে গিয়ে শুরুতে উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্য সালাম দিলো। তারপর শিক্ষকদের দিকে তাকিয়ে শিক্ষক শিক্ষিকাদের কথা বলতে গিয়ে।

 

জিহাদ বললো… আমাদের এই স্কুলের প্রত্যেকটা স্যার ম্যাডামরা অনেক ভালো। তারা আমাদের পিছনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তারা সুদীর্ঘ পাঁচ পাঁচটি বছর আমাদের মা-বাবারই মতো কখনো শাসন, আবার কখনো আদর, ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া দিয়ে স্কুল সময়ে সার্বক্ষনিক আগলে রেখেছেন। তাদের সে অবদান ভুলবার মতো নয়। আমরা, আমাদের মাতৃ পিতৃ  তুল্য। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শিক্ষিকাদের সে ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না।

 

আমাদের এবার এই চির চেনা-জানা স্কুলটি ছেড়ে চলে যেতে হবে অন্য স্কুলে। জানি আমরা থাকতে চাইলেও আর থাকা সম্ভব নয়। এই স্কুলের মাটি প্রতিটা বালুকণা থেকে শুরু করে। স্কুলের ফুল গাছ ও অন্য অন্য গাছালী। প্রতিটা দেয়াল, মেঝে এবং জানালা, দরজা, চেয়ার, টেবিলে গুলোতে রয়েছে আমাদের দেহ, হাত, পায়ের দীর্ঘ  দিনের পদচারণের স্পর্শ।আমাদের শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রতি রয়েছে যেমন অপরিসীম মায়া। তেমন এই স্কুলের সবকিছুর প্রতি একটা মায়া রয়েছে।

 

এসবকিছু ছেড়ে আমাদের এবার চলে যেতে হবে। জানি, অনেক..অনেক.. কষ্ট হবে। তবু..তবু..

বলতে..বলতে.. জিহাদ কেঁদে ফেললো।

জিহাদের সাথে কাঁদছে স্কুলের অন্য অন্য বিদায়ী তার সকল পড়ার সহপাঠী বন্ধু-বান্ধবীরা। শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ উপস্থিত সকলের চোখ অশ্রু  সিক্ত। জিহাদ কাঁদতে.. কাঁদতে.. আবার বলা শুরু করলো..তবু চলে যেতে হবে এটাই নিয়ম। আমরা সময়-অসময় আমাদের স্যার, ম্যাডামদের অনেক জ্বালাতন করেছি। মনের অজান্তে বিরক্ত করেছি কষ্ট দিয়েছি। আশা করি সকল শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মণ্ডলী আমাদের সব অপরাধ সকল ভুল দোষ গুলো ক্ষমা চোখে দেখবেন। কেননা…এই স্কুলের সকল শিক্ষক শিক্ষকার কাছে আমরা তাদের সন্তানের মতো। সর্বপরি আমাদের প্রাণপ্রিয় সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা মণ্ডলীর কাছে আশীর্বাদ চাই। আপনারা আমাদের জন্য মন থেকে দোয়া করবেন। যেনো আমরা পড়ালেখা শিখে প্রকৃত মানুষের মতন মানুষ হতে পারি।

 

এরপর জিহাদ আবারো সবাইকে সালাম দিয়ে তার কথা শেষ করলো। সকলে জিহাদের কথা শুনে অশ্রুসিক্ত নয়নের জল মুছতে মুছতে করতালি দিলো। জিহাদের অমন কথা শুনে সব হতবাক। তাকে নিয়ে উপস্থিত সকলে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আলোচনা করতে লাগলো ।আর দোয়া করতে লাগলো তার ও অন্য অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। প্রধান শিক্ষিকা পুষ্প রাণী বিশ্বাস টিস্যু দিয়ে দু,চোখের জল মুছে দাঁড়িয়ে বললো। সত্যি ঐটুকু ছেলে জিহাদ অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে যেনো আমাদের সকলের মনের অব্যক্ত কথা গুলো ব্যক্ত করেছে । যা-এককথায়….

 

অভূতপূর্ব সুন্দর অতুলনীয় ছিল তার কথা গুলো। তারপর বললো…তোমাদের সবার আগামীদিনের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য থাকবে আমাদের মনের গহীন থেকে আশীর্বাদ। তোমরা পড়ালেখা শিখে যেনো অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারো। আমরা তোমাদের সকলের উজ্জ্বল মঙ্গলময়ী জীবন-ও সাফল্য কামনা করি। তারপর সকলের উদ্দেশ্যে বললো..আজকের মত আমরা এখানেই বিদায়ী অনুষ্ঠান শেষ করছি। স্রষ্টা সকলের মঙ্গল করুন। সকলে ভালো থাকবেন।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park