1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

শহীদ মিনার কী আদৌ শৃঙ্খলমুক্ত হবে……. — এস এম জাকারিয়া

  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
  • ৭১ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

শহীদ মিনার কী আদৌ শৃঙ্খলমুক্ত হবে……. — এস এম জাকারিয়া

 

ভাষা হলো একটি জাতি বা একজন মানুষের আপন স্বত্তার পরিচায়ক। নিজের মনের ভাব প্রকাশ করার ১ম এবং সবচেয়ে জোরালো মাধ্যম হলো ভাষা। অথচ এ ভাষাকেই অপমানের কালো থাবার কড়াল গ্রাসে পরিণত করে মুছে ফেলতে চেয়েছিলো একটা সময়ে আমাদের এ উপমহাদেশে, পাকিস্তানী বর্বর শাসক গোষ্ঠী তাদের চাপিয়ে দেয়া আইনে বাংলা ভাষাকে যাতাকালে পিষ্ট করে উর্দুকেই একমাত্র রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দানের চেষ্টা হলো সেই থাবার একটা অংশ। তারা আইন করলো, ১৪৪ ধারা জারি করল। কিন্তু বাংলার দামাল যুবা-কিশোর সহ আপামর জনসাধারণকে তাদের মায়ের ভাষা মুখের ভাষা বাঁচানোর সংগ্রাম থেকে পিছু হঠাতে পারেনি। বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের অগ্রনী ভূমিকা পালনকারী রহমত, বরকত, শফিক, জব্বার, শফিউর সহ অনেকেই ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে তাদের দলবল সহ ঢাকার রাজপথে নেমে নিজেদের মাতৃভাষায় “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” শ্লোগান দিয়ে সামরিক বাহিনী ও পুলিশের গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে শহীদ হয়। রক্তরাঙা সবুজ ভূমি স্বাক্ষি হয় ইহকাল পরকাল উভয় জাহানের জন্য।

 

তাদের রক্তস্নাত হওয়া দিয়ে শুরু হয়ে আরো অনেকের রক্ত ঘামের সাগরে ভেসে অবশেষে পাকিস্তান সরকার সহ সারাবিশ্ব বাংলাকে স্বাধীন ভাষা ও জাতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। আর সেসময়ের ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগকে সারা জনম স্মরণে রাখা ও বরণ করার একটা প্রতীক হলো শহীদ মিনার। যেখানে সভা-সমাবেশ, গান-গজল, আবৃত্তি হওয়া বাঙালি জাতিস্বত্তা ও ঐতিহ্যের ধারক হয়ে আসছে বহু বছর। শহীদ মিনারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গভীর আবেগ, ভালোবাসা, ভালোলাগার অনুভূতি। নিজের ভাষার প্রতি মোহ-টান, প্রেম সবই জড়িত শহীদ মিনারের সাথে। এই আবেগ বড়ই গভীর, শুধু তাহা শহীদ পরিবারের সন্তান বা ভাষা সৈনিক অথবা তাদের সন্তানের জন্য নয়, বরং পুরো জাতির প্রতিটি সদস্য তা বুকে লালন করে। কারন ‘সাতচল্লিশের’ দেশ ভাগের দিক হতে ‘বায়ান্ন’ এর ভাষা আন্দোলন ছুঁয়ে তার চলন আরো প্রলম্বিত হয়ে ‘একাত্তর’ এর স্বাধীনতা সংগ্রাম সংগঠিত হওয়া সহ তৎপরবর্তী আরো অনেকগুলো গণতান্ত্রিক সংগ্রাম হয়েছে অগণিত মানুষের রক্তদান, ঘাম ঝরানো ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে।

 

অথচ ২০০৩ সালে কোন এক ঘটনার জের ধরে তৎকালীন সময়ে হওয়া একটা আইনের আওতায় আজো পর্যন্ত বাঙালির ঐতিহ্য ও আবেগের এই অমূল্য স্থানে কোন সভা-সমাবেশ করতে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি প্রয়োজন। যা আমাদের বাঙালি জাতিস্বত্তার ঐতিহ্য ও আবেগের উপর চরম কুঠারাঘাত বৈ আর কিছুই নয়। ২০০৩ সালের ঐ সময়ে এই আইন হওয়ার পর বিভিন্ন গুণীজন বক্তব্য বিবৃতি দিয়েছেন। পত্র পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে, সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয়তে এ বিষয়ে কথা এসেছে। কিন্তু কোন কাজে আসেনি। এ থেকে মনে প্রশ্ন জাগে আমাদের ঐতিহ্য আবেগের স্থান ‘শহীদ মিনার কি শৃঙ্খল মুক্ত’? নাকি প্রশাসন সহ কর্তা ব্যাক্তিদের আদেশ-উপদেশ ও আইনের শৃঙ্খলে বাঁধা? বিভিন্ন জাতীয় দিবসে ফুল দেওয়ার জন্য শুধু অবমুক্ত করা হয় তাও নির্ধারিত কিছু সময়ের জন্য, নির্দিষ্ঠ কিছু সংগঠন বা ব্যাক্তি বর্গের জন্য অবমুক্ত করা হয় শহীদ মিনার, অথচ এটা হওয়ার কথা ছিল সর্ব সাধারণের গমণযোগ্য সহজ একটা স্থান। যেখানে মুক্তভাবে সকলে মিলিত হয়ে স্বাধীন ভাবে নিজের মত ও পথ অনুযায়ী অনুষ্ঠান করতে পারবে। হ্যাঁ কিছু নিতীমালা অবশ্যই প্রয়োজন। যেমন- কোন উস্কানীমূলক বাক্য ব্যবহার করা যাবেনা বা সেধরনের কোন অভিনয় করা যাবেনা, চাই তা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হোক বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে হোক। আর নিয়ম থাকা প্রয়োজন কোন সংগঠন একবারের পোগ্রামে কতক্ষণ স্থান ব্যবহার করবেন?

 

শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সে ফুল আবার পদদলে মাড়িয়ে যখন সুটেড-বুটেড ফটো সেশন করে তখনতো বাঁধা দেওয়ার কেও থাকেনা। বিভিন্ন সময়ে জাতীয় দিবসের পরদিনই পত্র-পত্রিকার পাতায় ছেয়ে যায় এমন নেক্কারজনক ছবি। এগুলোর বিরুদ্ধে কখনো কোন একশন নিতে কি আমরা কখনো দেখি? অথচ আমাদের উচিত ভাষা দিবস সহ বিভিন্ন দিবস উদযাপনে শহীদদের প্রতি যার যার ধর্মীয় আচার অনুযায়ী তাদের শহীদ হওয়ার রুহের জন্য দোয়া করা। যেমন- সেদিন ভোরে ফজরের সূর্যোদ্বয়ের সাথে সাথে প্রভাত-ফেরী করে সকলে শহীদ মিনারে একত্রিত হয়ে মুসলিমরা সূরা-কেরাত পড়ে দোয়া করবেন অন্যান্যরা তাদের রীতি অনুযায়ী ধর্মীয় আচার পালন করবেন। অথচ এসব করাতো দূরে থাক একদল ফুল দেয় অন্যদল পওে নিজেদের ফুল দিতে গিয়ে পূর্ববর্তীগুলো মাড়াই, তাও সেটি দিবস নির্ভর। আর বছরের বাকি দিনগুলো ফাঁকা যায় শহীদ মিনার চত্বর। সেখানে কোন শিক্ষা বিষয়ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান, সাহিত্য চর্চা অনুষ্ঠান ইত্যাদির জন্য যদি সারা বছর উন্মুক্ত থাকতো, আইনের কলে বাঁধা না থাকতো সম্ভবত তা আমাদের জন্য ঐতিহ্য লালিত হতো। অথচ আজ তা না হওয়ায় জাতীয় ও অন্যান্য কয়েকটি শহীদ মিনার ছাড়া প্রায় বিভিন্ন স্থানের শহীদ মিনার ও তার চত্বর চরমভাবে অবহেলিত।

 

সেখানে কোথাও কোথাও গরু ছাগল উঠে চরতেও দেখা যায়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। যদি সারা বছর ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত থাকতো অন্তত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করে হলেও সাহিত্য চর্চা হতো, বাংলা বিষয়ক শিক্ষকের তত্বাবধানে। যিনি তার বাংলা চর্চার শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতি সপ্তাহ বা মাসে একবার শহীদ মিনারের চত্বরে বসে প্রাণ ভরে বাংলা ভাষা চর্চা করতেন। সেখানে আবৃতি হতো, গজল হতো, গান হতো। এতে করে বছর শেষে ঘুরে যখন শহীদ দিবস আসতো তখন সেখানে ঝড় হওয়া মানুষগুলো নিত্য-নতুন ভাষার কবিতা, গজল, গান শুনতে পারতো। আরো সম্বৃদ্ধ হতো বাংলা সাহিত্য জগত। আমরা চাই শহীদ মিনার হোক শৃঙ্খলমুক্ত, সর্বসাধারণের জন্য সর্ব সময়ের তরে উন্মুক্ত।

 

আর যেন কোন ব্যাক্তি কাতর হয়ে বলতে না হয় “আমাকে শহীদ মিনারে যেতে দিন ওখানে আমার বাবার রক্ত আছে”, ঠিক যেমনটি বলেছিলেন ‘বায়ান্ন’ এর ভাষা আন্দোলনের শহীদ ‘জ্যোতির্ময় ঠাকুরতা’র কন্যা ‘মেঘনা ঠাকুরতা’ তাকে বাধাদানকারী পুলিশ ভাইদের প্রতি অনুরোধ করে। কারন শহীদ মিনার শুধু শহীদদের আত্মোৎসর্গের স্মারক নয়, বরং তা মুক্তির প্রতীক ও বটে। এই মুক্তাঙ্গনকে অগনতান্ত্রিক ভাবে শৃঙ্খলবদ্ধ করার এমন বিবেচনা বিবর্জিত সিদ্ধান্ত আর কতদিন থাকবে তা আমাদের কারোরই জানা নেই। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে শুধু প্রশ্ন রাখতে পারি আর সরকার ও প্রশাসনকে কড়জোড়ে অনুরোধ করতে পারি বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির উৎকর্ষতার খাতিরে শহীদ মিনার কেন্দ্রীক অনুষ্ঠানের অনুমতির আইনটি যেন তারা শিথিল করেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে বুঝার তৌফিক দান করুন।

 

(সহ সুপার, চিশতিয়া বজল আহমদ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা ; সংবাদকর্মী ও মানবাধিকার কর্মী )।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park