1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

লংলা সিমেট্রি—নীরব স্বাক্ষর চা শিল্পের আত্মত্যাগে

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫
  • ২২৯ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

চায়ের কাপে ঘূর্ণায়মান প্রতিটি ধোঁয়া যখন আমাদের মনে প্রশান্তির ঢেউ তোলে, তখন কি একবারও ভাবি—এই পাতার পেছনে রয়েছে শতবর্ষের ইতিহাস, আত্মত্যাগ, এবং একদল মানুষের নিঃশব্দ কষ্টের গল্প! ইতিহাসের সেই মৌন সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে একটি সমাধিক্ষেত্র—লংলা সিমেট্রি।

 

কুলাউড়া শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের টিলাগাঁও ইউনিয়নের ডানকান ব্রাদার্সের মালিকানাধীন লংলা চা বাগানের রাবার বাগান এলাকায় অবস্থিত এই সিমেট্রিটি হয়তো আজও অনেকেরই অচেনা। কিন্তু এটি যেন এক নীরব স্মৃতিস্তম্ভ, যেখানে ঘুমিয়ে আছেন চা শিল্পের অগ্রদূতরা। চা বাগানের সেই খৃস্টান সম্প্রদায়ের বিদেশি টি প্ল্যান্টাররা, যারা এসেছিলেন এক অজানা দেশে, শুধুই এক নতুন শিল্প গড়তে।

 

১৮৫৭ সালে মালনীছড়া চা বাগানের মধ্য দিয়ে সিলেট অঞ্চলে চা শিল্পের সূচনা হলেও, ১৮৮০ সালের দিকে মৌলভীবাজারে ব্যাপক আকারে চা চাষ শুরু হয়। ব্রিটেন থেকে অভিজ্ঞ টি প্ল্যান্টারদের এনে ব্রিটিশরা গড়তে শুরু করে এক বিস্ময়কর সবুজ সাম্রাজ্য। কিন্তু এই পথ ছিল না কোনোভাবেই কুসুম বিছানো। ছিল রোগ, দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ—আর ছিল নির্বাসিত জীবনের নিঃসঙ্গতা। নিজ দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে, তারা হারিয়েছিলেন জীবন, কিন্তু রেখে গেছেন এক চিরন্তন শিল্প।

 

লংলা সিমেট্রিতে সমাহিত ২৮ জন ব্রিটিশ টি প্ল্যান্টারের প্রতিটি সমাধি যেন একেকটি ইতিহাস—একেকটি পর্ব, যেখানে লেখা আছে শ্রম, সাহস আর আত্মত্যাগের গল্প। প্রাচীন বৃক্ষের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা শ্বেতপাথরের সমাধিফলকগুলো আজও বলে যায়—তাদের গল্প শেষ হয়নি। তারা আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন প্রতিটি চা পাতায়, প্রতিটি কুঁড়ির সুবাসে।

 

চা বাগান শুধু শ্রমের ক্ষেত্র নয়, এটি এক প্রাণবন্ত ইতিহাস। লংলা সিমেট্রি তার নিঃশব্দ কণ্ঠে সেই ইতিহাস আমাদের মনে করিয়ে দেয়। অনেকেই বলেন, এটি শুধু সমাধিক্ষেত্র নয়—এটি একটি জীবন্ত পাঠশালা, যেখানে দাঁড়ালে বোঝা যায়—চা শিল্পে ভালোবাসা কত গভীর হতে পারে।

 

আজ যখন আমরা চা পানের ফাঁকে বিশ্রাম খুঁজি, যখন ক্যামেরায় বন্দি করি সবুজ পাতার সৌন্দর্য, তখন আমাদের মনে রাখা উচিত—এই শিল্প গড়ে উঠেছে কারও জীবনের বিনিময়ে, কারও নিঃস্বার্থ শ্রমে। লংলা সিমেট্রি আমাদের শেখায় শ্রদ্ধা করতে, স্মরণ করতে, অনুপ্রাণিত হতে।

 

এটি সংরক্ষণের দাবি রাখে। আমাদের উচিত এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে শুধু পর্যটন কেন্দ্র নয়, একটি গবেষণাগার হিসেবে গড়ে তোলা। যাতে নতুন প্রজন্ম জানতে পারে—এই দেশের চা শিল্প একদিন কিভাবে গড়ে উঠেছিল একদল সাহসী, দূরদেশ থেকে আগত মানুষের হাত ধরে।

 

লংলা সিমেট্রি তাই শুধু অতীত নয়—এটি ভবিষ্যতের পথ দেখায়। এটি চা শিল্পপ্রেমীদের জন্য শ্রদ্ধার এক অনন্ত প্রেরণা।

 

লেখক:

মোঃ রবিউল ইসলাম খান রবিন (রাশশাদ)।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park