এস এম জাকারিয়া, মীরসরাই, চট্টগ্রাম
আর কয়েকদিন পর শুরু হবে পবিত্র মাস রামাদ্বান। সর্বশ্রেষ্ঠ মাস,কুরআনের মাস, ক্ষমা প্রাপ্তির মাস নাজাতের মাস, সমতার মাস অনুগ্রহের মাস ইত্যাদি বিভিন্ন নামে পরিচিত এই মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জন করাই হলো রামাদ্বানের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়া’লা তাঁর বান্দাদের উদ্দেশ্য করে কোরআনুল কারিমের সূরা বাকারার ১৮৩নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন –
” یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا كُتِبَ عَلَیۡكُمُ الصِّیَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُوۡنَ “.
” হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার।
সাওম পানাহার ও শারীরিক চাহিদাকে সংযত করা এবং আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় জীবন পরিচালনার মাধ্যমে মানুষের মাঝে এক আধ্যাত্মিক বোধ তৈরি করার এক উৎকৃষ্ট প্রশিক্ষণের নাম। যার ফলে মানুষ যাবতীয় অহংকার, কুপ্রবৃত্তি ও নফসের গোলামী থেকে মুক্ত হয়ে তাক্বওয়া অর্জন করার মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হয়।
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন – ” মাহে রমজানের প্রতি রাতেই একজন ফেরেশতা ঘোষণা করতে থাকেন: ‘ হে পুণ্য অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাচারী! থামো, চোখ খোলো ‘।
তিনি আবার ঘোষণা করেন: ‘ক্ষমাপ্রার্থীকে ক্ষমা করা হবে। অনুতপ্তের অনুতাপ গ্রহণ করা হবে। প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করা হবে “।
এ মাসে আল্লাহর দরবারে মাগফেরাত কামনা করলে, গরিব-দুঃখীদের প্রতি দান-সদকার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে, নিজে সব ধরনের খারাপ কাজ পরিহার করলে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আসকার, তাসবিহ-তাহলিল, কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়া-ইস্তেগফার করলে মহান আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন।
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন – ” এ মাসে চারটি কাজ অবশ্যই করণীয়। দুটি কাজ এমন যে, তার দ্বারা তোমাদের প্রতিপালক সন্তুষ্ট হন। অবশিষ্ট দুটি এমন, যা ছাড়া তোমাদের কোনো উপায় নেই। এই চারটির মধ্যে একটি হলো কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করা, দ্বিতীয়টি হলো অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। এ দুটি কাজ আল্লাহর দরবারে অতি পছন্দনীয়। তৃতীয় ও চতুর্থ হলো জান্নাত লাভের আশা করা ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের প্রার্থনা করা। এ দুটি এমন বিষয়, যা তোমাদের জন্য একান্ত প্রয়োজন “। (ইবনে খুজাইমা)
রাসুলুল্লাহ সাঃ আরও বলেছেন – ” যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়ে নিষ্পাপ হতে পারল না, তার মতো হতভাগ্য এই জগতে আর কেউ নেই “।
মাতৃগর্ভ থেকে মানুষ যেভাবে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়, মাহে রমজানের ৩০ দিন যথাযথভাবে রোজা পালন করলে তেমন নিষ্কলুষ হয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই এ মাসে বেশি বেশি আমল ও দোয়া করা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত।
মাহে রামাদ্বানে ধাপে ধাপে বান্দাকে ক্ষমা করা হয়। রামাদ্বানে যে সকল ধাপে বান্দাকে ক্ষমা করা হয় –
মোট তিন ধাপে পুরো মাসব্যাপী এই ক্ষমার মহোৎসব চলামান থাকে, যথা :
১. সিয়াম পালন।
২. কিয়ামুল লাইল আদায় ( রাতের নফল সালাত /তারাবিহ এর সলাত আদায় / তাহাজ্জুদ সালাত / সালাতুত তাসবীহ )
৩. লাইলাতুল ক্বদরে (শবে কদরে) রাত জেগে নফল সালাত ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি করা।
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন :
” مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ”.
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রামাদ্বানের রাতে কিয়াম করে (তারাবিহ/তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করে) করে তার পূর্বের সকল পাপ মোচন করা হয়।”
(বুখারি ও মুসলিম)
তিনি আরও বলেছেন:
” مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ “.
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রামাদানের সিয়াম পালন করে তার পূর্বকৃত সমস্ত গুনাহ মোচন করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে কিয়াম করে তারও পূর্বের সকল গুনাহ মোচন করা হয়।”
(বুখারি ও মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন : ” যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করবে; তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে “। (সহীহ বুখারী )
সহীহ মুসলিমের হাদীস, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন : ” এই রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে অবতরণ করে বান্দাদের ডেকে ডেকে বলেন – ” কে আছো অসুস্থ আমার কাছে চাও আমি শেফা দান করব, কে আছো অভাবগ্রস্ত আমার কাছে চাও আমি প্রাচুর্য দান করব, কে আছো বিপদগ্রস্ত আমার কাছে চাও আমি বিপদমুক্ত করে দেব “।
রাসুল সাঃ আরো বলেছেন : ” যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেল কিন্তু ইবাদত-বন্দেগিতে সময় কাটাতে পারল না, তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই “।