আজ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর এক গরীব সাহাবী হযরত আলী (রঃ) এর দানশীলতার গল্প বলবো। তিনি কেমন দানশীল ব্যক্তি ছিলেন।
হযরত আলী (রাঃ) ছিলেন একজন দানশীল ব্যক্তি।তিনি দানশীলতার দিক দিয়ে ছিলেন আল্লাহর প্রিয় একজন বান্দা।তিনি ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কলিজার টুকরা মা ফাতেমা-তুজ জোহরা (রাঃ) এর স্বামী এবং হযরত ইমাম হাছান (রাঃ)ও হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর পিতা। তাদের আর্থিক অবস্থা এমন ছিলো যে তিনদিন/সাতদিন পার হয়ে গেলেও চুলায় আগুন জ্বলতো না। উপবাসে দিন কাটাতে হতো। এমন কি খিদের কারণে পেঠে পাথর বেঁধে রাখতেন । হযরত আলী (রাঃ) সারাদিন কাজ করে যা রোজগার করতেন তা দিয়ে বাজার থেকে চাল কিংবা আটা ক্রয় করে খাবার তৈরি করে খেতেন।
একদিন হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর ভীষণ জ্বর হয়েছে। জ্বরের কারণে বিছানা থেকে উঠার মত শক্তি ছিলো না। আলী (রাঃ) ফাতেমা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন এই জ্বরের কারণে তু আপনি কিছু খাচ্ছে না বলেন আপনার কি কিছু খেতে ইচ্ছে করে? আমি এনে দেই। হযরত ফাতেমা (রাঃ) জ্বর অবস্থায় কিছু খেতে পারেন না মুখে স্বাদ লাগে না।তাই হযরত আলী (রাঃ) হযরত ফাতেমা (রাঃ) কিচু খেতে চায় কি না জিজ্ঞেস করেন। হযরত আলী (রাঃ) জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন তার মনে চাচ্ছে একটি ডালিম খাবেন । আলী (রাঃ) এক কথা শুনে বললেন ঠিক আছে আমি কাজ থেকে ফেরার সময় আপনার জন্য ডালিম নিয়ে আসবো। আলী (রাঃ) সকাল সকাল কাজের সন্ধানে বেরিয়ে গেলেন। সেইদিন ভাগ্য একটা কাজ জুটলো এবং সেই কাজ করার বিনিময়ে দু বা চার আনা পেয়ে ছিলেন। তাই তিনি বাজারে চলে গেলেন ডালিম ক্রয় করার জন্য । বাজারে গিয়ে সুন্দর একটা ডালিম হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর জন্য কিনলেন। সেইদিন ডালিম কিনেই আর এদিক সেদিক না গিয়ে সোজা বাড়ির রাস্তা ধরলেন। সেই সময় ফেরেস্তারা একজন আরেকজন কে বলতেছে নবীর সাহাবীগণ দানশীলতায় খুবই উদার। তাদের কাছে যা আছে আল্লাহর নামে চাইলে তাই দিয়ে দেয়। নিজেরা না খেয়ে আল্লাহর রাস্তায় দান করতে পিছপা হন না। আল্লাহ পাক ফেরেস্তাদের কথোপকথন শুনছিলেন। আল্লাহ ঠিক সেই মুহুর্তে ফেরেস্তাদের ডেকে বললেন তোমরা এভাবে কথা না বলে সরাসরি পরীক্ষা করে নাও যে আমার হাবিবের সাহাবিগণ সত্যই দানশীলতায় উদার কি না? ঐ যে নজর করে দেখো আমার হাবিবের সাহাবী হযরত আলী (রাঃ) হাতে একটা ডালিম ফাতেমার জন্য কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। তোমরা ডালিম টা আলী (রাঃ) এর কাছ থেকে আনতে পারো কি না পরীক্ষা করে নাও।আল্লাহর কথা শুনে একজন ফেরেস্তা ভিক্ষুকের রূপ ধারণ করে আলী (রাঃ) এর কাছে আসলেন।
ভিক্ষুক রূপ ধারণকারী ফেরেস্তা তখন আলী (রাঃ) এর কাছে এসে সালাম দিলেন এবং ভিক্ষা চাইলেন। আলী (রাঃ) সালামের উত্তর দিলেন এবং বলতে লাগলেন আমি আপনাকে দেওয়ার মত এখন কিছু আমার হাতে নাই।আমার স্ত্রী’র জ্বর উঠায় সে একটা ডালিম খেতে চেয়েছে।যা রোজগার করে ছিলাম তা দিয়ে একটা ডালিম ক্রয় করে এনেছি আমার স্ত্রী কে খাওয়ানোর জন্য । তখন ফেরেস্তা বলতে লাগলো আমার ও মন চাইতেছে একটা ডালিম খাবো। আচ্ছা অন্যকিছু দিতে হবে না আল্লাহর নামে ডালিমটা অর্ধেক করে আমাকে অর্ধেক দিয়ে দাও বাকি অর্ধেক তুমার স্ত্রী কে দিয়ে দিও।তখন আলী (রাঃ) বললেন ঠিক আছে আল্লাহর নামে যেহেতু চেয়েছেন আমি ডালিমটা অর্ধেক করে তোমাকে দিয়ে দিলাম। অর্ধেক ডালিম ফেরেস্তা নিয়ে বললেন তুমি যেও না আমি ডালিম খাওয়ার পর তুমি যাবে । আলী (রাঃ) দাড়িয়ে রইলেন। ভিক্ষুক রূপী ফেরেস্তা অর্ধেক ডালিম খেয়ে বলতে লাগলেন । অর্ধেক ডালিম খেয়ে তৃপ্তি পেলাম না বাকি অর্ধেক টাও আল্লাহর নামে আমাকে দান করে দেন।অর্ধেক ডালিম খেয়ে আমার অর্ধেক প্রাণটা তৃপ্ত হলো বাকি অর্ধেক টা ও আমাকে দান করেন। বাকি অর্ধেক টা আমি আমার স্ত্রীর জন্য রেখে ছিলাম। তুমি যেহেতু আমার আল্লাহর নামে আবার চাইলা এই নাও বাকি অর্ধেক টা ও তুমি ই খেয়ে নাও। বাকি অর্ধেক ডালিম ও আলী (রাঃ) ফেরেস্তা কে দিয়ে বাড়ি চলে গেলাম। বাড়ি গিয়ে দেখেন হযরত ফাতেমার জ্বর আগের থেকে কিছুটা কমছে। তিনি বিছানা থেকে ঘর ঝাড়ু দিতেছেন। আলী (রাঃ) মনে মনে ভাবতেছেন এবার আমার ফাতেমা কে কি বলবো। যদী ডালিম আনছি কি না জিজ্ঞেস করে কি বলবো। আলী (রাঃ) একথা মনে মনে ভাবতেছে আর ফাতেমার সাথে কথা বলতেছে যেন ডালিমের কথা ফাতেমা জিজ্ঞেস না করে। আলী (রাঃ) মনে মনে বিশ্বাসী ছিলেন যেহেতু আল্লাহর নামে একটা দান করেছি তাহলে এর জন্য দশটা পাবো ইনশাআল্লাহ্।
এ কথা ভাবতে ভাবতে রাতে ঘুমিয়ে যাবে এমন সময় দরজায় ডুকা পড়লো কে যেন বাহির থেকে ডাকতেছে দরজা খুলেন।দরজায় ডুকার শব্দ শুনে আলী (রাঃ) মনে মনে একটু খুশি হলেন। কারণ তিনি মনে মনে ভাবতেছেন হয়তু আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার চলে এসেছে। তখন ওমর (রাঃ) জুড়ে ডাকতে লাগলেন হে আলী দরজা খুলেন আমি ওমর ইবনে খাত্তাব। আমি খাত্তাবের পুত্র ওমর এসেছি দরজা খুলেন। হযরত আলী (রাঃ) দরজা খুলে দেখেন ঠিকই হযরত ওমর (রাঃ) একটা ব্যাগে করে ডালিম নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। হযরত ওমর (রাঃ) ডালিমের ব্যাগটা হযরত আলী (রাঃ) এর কাছে দিয়ে বললেন এই নেন আপনার ডালিম। রাসূলে করীম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে এই ডালিমগুলো আল্লার ফেরেস্তা জিবরাইল (আঃ) এসে দিয়ে গেছেন আপনাকে দেওয়ার জন্য । আপনি নাকি ভিক্ষুক কে একটা ডালিম দিয়েছেন। তার বিনিময় আল্লাহ আপনার জন্য বেহেস্তী ডালিম পাঠিয়ে দিয়েছেন। আপনি যে ভিক্ষুক কে ডালিম দিয়েছেন আসলে সে ভিক্ষুক ছিলো না আপনার দানশীলতার পরীক্ষা করার জন্য একজন ফেরেস্তা ভিক্ষুক রূপ ধারণ করে আপনার কাছ থেকে ডালিম খেয়ে গেছেন।এ কথা শোনে হযরত আলী (রাঃ) ডালিমের ব্যাগটি নিয়ে গুনতে শুরু করলেন কয়টা ডালিম এসেছে। ডালিমগুলো গুনে দেখলেন ব্যাগে নয়টি ডালিম আছে।তখন হযরত ওমর কে উদ্দেশ্য করে আলী (রাঃ) বলতে লাগলেন ডালিম নয়টা কেন?
আল্লাহর নামে এক দিলে দশ আসে তবে নয়টি কেন?তখন ওমর (রাঃ) বলতে লাগলেন নয়টা দিয়েছে তু কি হয়েছে একটার বিনিময়ে তু আপনি নয়টা পেলেন তাহলে সমস্যা কোথায়? আলী (রাঃ) বলেন না আমি একটা দিয়েছি তবে দিলে আমাকে দশই দিতে হবে নয়টা দিলে আমি মানবো না।তাহলে তুমি কি আল্লাহর সাথে ডালিমের জন্য যুদ্ধ করবে না কি? না আমি যুদ্ধ করবো কেন একটা দিলে দশটা দিবেন। আমাকে দিলে দশটাই দিতে হবে। তখন হযরত ওমর (রাঃ) পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা ডালিম বের করে আলী (রাঃ) হাতে দিয়ে বলতে লাগলেন এই নেন ভাই আপনার অবশিষ্ট একটা ডালিম এবার আপনি দশটা ডালিম মিলিয়ে নেন। আসলে আমি ইচ্ছে করে ই একটা ডালিম আমার কাছে রেখে দিয়েছিলাম।একটা ডালিম রাখার কারণ হলো আমি দেখতে চেয়ে ছিলাম আপনার ইমাম কত মজবুত। আল্লাহর প্রতি আপনার বিশ্বাস কতটুকু। সত্যই ভাই আপনার ইমানের জবাব নেই৷ আল্লাহর প্রতি আপনার অগাধ বিশ্বাস।আল্লাহর রাস্তায় একটা দান করলে দশটা পাওয়া যায়। যেকোনোভাবেই আল্লাহ আপনার দশ মিটিয়ে দিবেন সেই অগাধ বিশ্বাস আল্লাহর প্রতি আছে। তা দেখে আমি আপনার প্রতি মুগ্ধ। সত্যি আপনার ইমানের জবাব হয় না। সাহাবীরা ছিলেন দানশীলতার প্রতীক। তারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের সহিত দান করতেন।প্রত্যেক সাহাবীদের জীবনী তালাশ করলে পাওয়া যাবে তারা ছিলেন দানশীলদের মধ্যে বিশিষ্ট দানবীর।আল্লাহর নামে তারা যেকোনো জিনিস তৎক্ষনাৎ দান করে দিতেন।তাদের উত্তমজীবন আদর্শে আমরা আমাদের জীবন কে পরিচালিত করে আমরা তাদের মত আল্লাহর নামে দান করবো এটাই আমাদের জন্য পরকালীন জীবনে নাজাতের উসিলা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্।