মুনাফিক শব্দটি আরবি, যার অর্থ কপটচারী একজন প্রতারক বা ভন্ড ধার্মিক ব্যক্তি। যারা প্রকাশ্যে ইসলাম চর্চা করে; কিন্তু গোপনে অন্তরে কুফরী বা ইসলামের প্রতি অবিশ্বাস বা শত্রুতা পোষণ করে এরুপ ব্যক্তিদের মুনাফিক বলা হয়।
মুনাফিকের আলামত : মুনাফিকের আলামত তিনটি। হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,” মুনাফিকের আলামত তিনটি; (১) কথা বললে মিথ্যা বলে। (২) ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং (৩) তার কাছে আমানত রাখা হলে তার খিয়ানত করে।’’ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, যদিও সে রোযা রাখে এবং নামাজ পড়ে ও ধারণা করে যে, সে মুসলিম (তবু সে মুনাফিক)।’’ (বুখারি৩৩, ২৬৮২, ২৭৪৯, ৬০৯৫, মুসলিম ৫৯, তিরমিযি ২৬৩১, নাসায়ি ৫০২১, আহমদ ৮৪৭০, ৮৯১৩, ১০৫৪২) অন্য আরেক বর্ণনা মতে মুনাফিকের আলামত চারটি। হাদীসে এসেছে আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে সে হবে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়।
১. আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে
২. কথা বললে মিথ্যা বলে
৩. চুক্তি করলে ভঙ্গ করে এবং
৪. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল গালি দেয়।
মুনাফিকের শাস্তি: কেয়ামতের মাঠে মহান আল্লাহ তায়ালার সামনে মুনাফিক ব্যক্তিদের কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। তাই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর উম্মতরা যাতে বিপদগামি না হয়, সেজন্য মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্যগুলো বলে দিয়েছেন।
কোরআনে মুনাফিক সম্পর্কে এরশাদ হচ্ছে, “আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফেরদেরকে জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, এটা তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ করেছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী শাস্তি। (সুরা তওবা ৬৮)।
মুনাফিকরা মুসলিম সমাজের আগাছা। যারা মুমিনদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করার জন্য সর্বদা ওঁৎ পেতে থাকে। মহান আল্লাহতায়ালা এই সমস্ত মুনাফিকদের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করেছেন এবং তিনি তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুমিনদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন তারা মুনাফিকদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করে।
মহান আল্লাহ বলেন- ‘তুমি এদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো কিংবা না করো (এ দু-টোই) তাদের জন্য সমান। (কারণ) আল্লাহ তায়ালা কখনোই তাদের ক্ষমা করবেন না; আল্লাহ তায়ালা কোনো নাফরমান জাতিকে হেদায়েত দান করেন না। (সুরা মুনাফেকুন, আয়াত-৬)।
মুনাফিকদের স্থান হবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘এ মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করবে, তুমি সেদিন তাদের জন্যে কোনো সাহায্যকারী খুঁজে পাবেনা।’ (সুরা নিসা, আয়াত-১৪৫)
মুনাফিকদের সঙ্গে বিশ্বনবির আচরণ কেমন হবে, সে ব্যাপারেও আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করে বিশ্বনবিকে বলেন-
‘হে নবি! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জেহাদ করুন এবং তাদের সম্পর্কে কঠোর নীতি অবলম্বন করুন। আর তাদের পরিণতির হচ্ছে জাহান্নাম এবং তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট স্থান। (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৭৩)
লেখক : মো: মাহে আলম আখন
প্রভাষক,নুরুন্নবী চৌধুরী মহাবিদ্যালয়
লালমোহন, ভোলা।