1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

মু’আবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান এবং শিয়াদের বিরোধ কারণ, ইতিহাস ও দৃষ্টিভঙ্গি

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০২৫
  • ৪৯ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

মোঃ নূরনবী ইসলাম সুমন 

 

ইসলামের ইতিহাসে মু’আবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের নামটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তিনি ছিলেন নবীজির সাহাবীদের একজন এবং সিরিয়ার গভর্নর ও পরবর্তীতে খিলাফতের প্রতিষ্ঠাতা। মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর অংশ তাঁর নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। তবে শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে মু’আবিয়ার প্রতি একটি নেতিবাচক মনোভাব প্রচলিত, যা মূলত ইসলামের নেতৃত্ব ও খিলাফতের বৈধতার প্রশ্ন থেকে উদ্ভূত। কেন শিয়া মু’আবিয়াকে গ্রহণ করে না তা বুঝতে হলে আমাদের ইতিহাসের পটভূমি, রাজনৈতিক সংঘাত এবং ধর্মীয় ধারণাগুলো ভালোভাবে জানতেই হবে।

 

ইসলামের প্রাথমিক যুগে নবীজির মৃত্যুর পর মুসলিম সম্প্রদায় নতুন এক পর্যায়ে প্রবেশ করে। নবীর উত্তরসূরি নির্বাচনের প্রশ্নটি তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নবীর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সঙ্গী এবং দোস্ত আবু বকর সিদ্দীককে প্রথম খলিফা নির্বাচিত করা হয়। তার পর হজরত উমর এবং পরে হজরত উসমান এই দায়িত্ব পালন করেন। তবে হজরত উসমানের আমলে নানা ধরনের অসন্তোষ ও বিদ্রোহ গড়ে ওঠে, যা শেষ পর্যন্ত তাঁর হত্যাকাণ্ডে পরিণত হয়। এই ঘটনাটি মুসলিম সমাজে গভীর বিভাজনের সূচনা করে।

 

হজরত আলী ইবনে আবি তালিবকে চতুর্থ খলিফা নির্বাচিত করা হলেও তিনি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংঘাতের মুখোমুখি হন। বিশেষ করে সিরিয়া প্রদেশের গভর্নর মু’আবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের সঙ্গে তাঁর বিরোধ সংঘটিত হয়, যা সিফফিন যুদ্ধে পরিণত হয়। এই যুদ্ধে মুসলিম উম্মাহ গভীরভাবে দুই ভাগে বিভক্ত হয়।

 

শিয়া সম্প্রদায় বিশ্বাস করে নবীর পর ইসলামের নেতৃত্বের অধিকার শুধুমাত্র হজরত আলী এবং তাঁর বংশধরদের। তাদের মতে, আলীকে নবী সরাসরি নির্ধারণ করেছিলেন এবং তিনি ছিলেন সবচেয়ে ন্যায়পরায়ণ ও ঈমানদার ব্যক্তিত্ব। এই বিশ্বাসের কারণে শিয়ারা আলীর খিলাফতকে বৈধ এবং তার বিরোধীকে অবৈধ মনে করে। মু’আবিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম প্রধান অভিযোগ হলো, তিনি আলীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন এবং তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছিলেন, যা শিয়াদের দৃষ্টিতে একটি গুরুতর বিচ্যুতি।

 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো মু’আবিয়ার পুত্র ইয়াজিদকে উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া। শিয়ারা বিশ্বাস করে ইসলামের নেতৃত্ব কোন বংশানুক্রমিক বিষয় নয়, বরং এটি ঈমান ও জ্ঞানভিত্তিক দায়িত্ব। ইয়াজিদের শাসন শিয়াদের কাছে অনৈতিক ও অবৈধ ছিল, বিশেষ করে কারবালার প্রেক্ষাপটে, যেখানে নবীর নাতি হুসাইন শহীদ হন। শিয়ারা ইয়াজিদের কর্মকাণ্ড ও আদর্শকে ইসলামের শত্রু হিসেবে দেখেন, তাই মু’আবিয়ার এই পদক্ষেপকে নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করেন।

 

শিয়ারা মু’আবিয়াকে অবৈধ খিলিফা হিসেবে দেখে এবং মনে করে তিনি ইসলামী ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। তারা বিশ্বাস করে, তার শাসনকালে অনেক সাহাবি ও মুসলিম অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং তিনি রাজনীতিক উদ্দেশ্যে আলী ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। শিয়াদের দৃষ্টিতে তিনি ইসলামের ইতিহাসে বিভাজনের প্রধান কারিগর।

 

অপরদিকে, সুন্নি মুসলিমরা মু’আবিয়াকে একজন মর্যাদাপূর্ণ সাহাবি ও দক্ষ প্রশাসক মনে করেন। তারা বলেন, মু’আবিয়া নবীজির সঙ্গী ছিলেন এবং ইসলামের বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের মতে, সিফফিন যুদ্ধ ছিল জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতির ফলাফল এবং উভয় পক্ষের ইচ্ছায় সংঘটিত হয়। সুন্নি ঐতিহ্যে মু’আবিয়া ও তাঁর উত্তরসূরিদের কর্মকাণ্ডকে বৈধ এবং ইসলামী ইতিহাসের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

 

মু’আবিয়ার বিরুদ্ধে শিয়াদের অভিযোগগুলো মূলত রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতবিরোধের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটি কোনো ব্যক্তিগত অপমান বা কুৎসার বিষয় নয়, বরং ইসলামী নেতৃত্ব ও ক্ষমতার বৈধতা নিয়েও মতভেদ। এই মতভেদ আজও শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান এবং মাঝে মাঝে তা সংঘর্ষের রূপ নেয়।

 

মু’আবিয়াকে ঘিরে এই দ্বৈত মনোভাব ইসলামী ইতিহাসের একটি স্পর্শকাতর অধ্যায়। একটি সম্প্রদায় তাঁকে ইতিহাসের মহান নেতা ও নায়ক হিসেবে দেখলেও অন্যরা তাঁকে এক ধরণের অবৈধ ক্ষমতাশালী হিসেবে বিবেচনা করে। এই পার্থক্য বুঝতে গেলে আমাদের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও উভয় পক্ষের মতামত গ্রহণ করতে হবে।

 

অবশেষে বলা যায়, ইসলামী ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে মু’আবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের নাম ইতিহাসের পাতায় চিরস্থায়ী। তাঁর চরিত্র ও কর্মকাণ্ড নিয়ে মতের পার্থক্য থাকলেও তার গুরুত্ব ও প্রভাব অবহেলা করা যায় না। শিয়া মুসলিমদের জন্য তিনি রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতবিরোধের একটি প্রতীক, আর সুন্নিদের কাছে তিনি সাহাবায়ে কেরামের একজন মর্যাদাপূর্ণ সদস্য।

 

এই মতবিরোধের আলোকে মুসলিম উম্মাহর উচিত সহনশীল ও ঐক্যবদ্ধ হওয়া, এবং ইতিহাসকে ন্যায়সঙ্গত ও সত্যনিষ্ঠ দৃষ্টিতে বুঝে গ্রহণ করা। মুসলিম সমাজের শক্তি ঐক্য ও পারস্পরিক সম্মানে নিহিত।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park