জাকির আলম
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে গড়ে ওঠা একরাশ স্নিগ্ধ কোমল অনুভূতির নাম মারিয়া আফরিন। যার হাত ধরে অনাগত জীবনে হেঁটে চলার প্রবল ইচ্ছে থেকে ভালোবেসে যাই সঙ্গোপনে। পাশাপাশি বসে গল্প-কথার প্রাক্কালে যতবার তার চোখে চোখ পড়েছে, ভীষণ মায়ায় ডুবে গেছি গভীর অনুভূতির মাঝে। তার সুরভিত হাসির দ্যোতনায় মন হারিয়ে গেছে শেষ বিকেলে বয়ে চলা নদীর মোহময় শব্দে। তাকে সমস্ত ভালোবাসার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে কাছে টেনে নেই পরম সোৎসাহে। একজীবনে তাকে কাছে পাওয়ার প্রত্যয়ে ব্যাকুল মন ছুটে চলে ভালোবাসার অলিগলিতে। মারিয়াকে কল্পনা করতে গেলে পুরো পৃথিবীর ভাবনা এসে আমাকে ছুঁয়ে যায় নিবিড় আলিঙ্গনে। তখন আমি মৌন আবেগে কেঁদে ফেলি বোধের অগোচরে। শিশির ভেজা ভোরে সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে মারিয়ার হাত ধরে হাঁটার ঐকান্তিক মুহূর্তে স্বয়ং ঈশ্বর যেন তুলে নিয়ে যান ভালোলাগার হাতছানিতে কোমল পরশে স্বর্গের মাঝামাঝি। তখন আমি ভুল করে মারিয়ার দীঘল চুলে দোল খেতে থাকি প্রজাপতির অবয়বে। মারিয়াকে ভালোবাসি একথা তাকে বোঝাতে গিয়ে মিশে যাই লজ্জানামক মেয়েলি বোধের কাছে। জগতের সব সৌন্দর্য গায়ে মেখে মারিয়া হয়েছে উর্বশী বালিকা! পৃথিবীর সব আলো ম্লান হয়ে গেলে মারিয়া তখন নিজস্ব আলোয় উদ্ভাসিত। কখনো কখনো তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে গিয়ে অর্থবহ কোনো জীবনের সান্নিধ্য পেয়ে যাই।
ভালোবাসার সমস্ত রং গায়ে মেখে আমিও তখন রংধনু মেঘের অবারিত আকাশ ছেয়ে যাই। এই সেই মারিয়া আফরিন, যাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে ভাষার সৌকর্যে আমি জড়িয়ে যাই। গল্পের প্লটে পুরোপুরি তুলে ধরতে গিয়ে ডুবে যাই মারিয়াকে নিয়ে ভাবনার গভীর তলদেশে। সবুজ বাংলার সমস্ত নারী কূলের অবয়বে তার প্রতিচ্ছবি এঁকে যাই চিত্রপটের স্বচ্ছ আয়নায়। মাটি ও মানুষের কথা বলতে গিয়ে আমি মারিয়ার মাঝেই লুকানো সত্যকে খুঁজে পাই। একটা মানুষ এতটা নির্মল-স্বচ্ছ হতে পারে আমার জানা ছিল না। যার সুললিত কথার বাক্য বিন্যাসে আমি থতমত খেয়ে যাই। সুরেলা কণ্ঠের জাদুতে চিত্ত হরণ করতে যার এতটুকুও সময় লাগেনা। যাকে ভেবে হাজারো কবিতার জন্ম হয়। গল্প-উপন্যাসের কালজয়ী চরিত্র হতে যার কোনো সময় লাগেনা, সেই মানুষটির নাম মারিয়া আফরিন। আমি চাই এমন একজন মানুষের সাথে থেকে পুরো পৃথিবীকে ধারণ করতে। আমি চাই তার চোখের পাপড়িতে মিশে স্বর্গ-মর্ত্য অবলোকন করতে। একজীবনে তাকে কাছে না পেলেও আমার কোনো দুঃখ নেই। তাকে মনের গভীর থেকে ভালোবাসতে পেরেছি এটাই আমার কাছে অনেক বেশি আনন্দের। জগতের সব সুন্দরী নারীকে স্বচক্ষে দেখলেও মারিয়ার মতো কাউকে ভালো লাগেনি। এমনকি ক্যাসিনোর জলসাঘরেও দেখতে পাইনি তার মতো জৌলুশ ভরা কোনো মোহনীয় নারী। আমার চোখে সুন্দর মানেই মারিয়া।
বৃষ্টি ভেজা রাতে মারিয়ার সাথে ভিজতে ভিজতে পূর্ণিমার চাঁদের আলোর কথা ভুলে গেছি। কখনো বা ভরা চাঁদের জোছনায় মারিয়ার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছি আলতো সুখের পরশে। চোখে চোখ রেখে একরাশ প্রীতির বন্ধনে দু'জনে হেঁটে গেছি সমুদ্র তীর ঘেঁষে সম্মুখের পথে। কখনো রাতের আকাশে নক্ষত্র দেখতে দেখতে মারিয়ার কপাল ছুঁয়ে ঝরে পড়ে এক পশলা বৃষ্টি। কখনো সমুদ্র স্নানে দু'জনে ঢেউয়ের তালে তালে উপভোগ করেছি ঐশ্বরিক মুহূর্ত। স্বপ্নের দ্বারপ্রান্ত ছুঁয়ে মাঝির নৌকায় ভেসে ভেসে গেয়ে যাই ভাটিয়ালি গান। নদীর বাঁকে ফোটা নরম কাশফুল মারিয়ার খোঁপায় গুঁজে দিতে দিতে মেঘের ভেলায় হারিয়ে গেছি সফেদ বলাকার মতো। সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরা পাখির মতো আমিও ফিরে আসি মারিয়ার নিকেতনে। ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে যাই মারিয়ার কথা ভাবতে ভাবতে। কখনো রাত জেগে কবিতা লিখতে লিখতে বারংবার মারিয়াকে ভালোবেসে ফেলি। পবিত্র ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মিশে যাই পূর্ণতার মাঝে। যাপিত শূন্যতাকে পিছনে ফেলে পূর্ণতায় খুঁজি জীবনের মানে। আবেগে শিহরিত হয়ে মারিয়ার গলে পরাই অনুভূতির মালা। হৃদয়ের গভীর উত্তেজনা থেকে যখন পাখির মতো ডানা মেলে উড়ে যাই তখন মনে পড়ে যায় তার মুখচ্ছবি।
আমার সমস্ত ভালোলাগা ভালোবাসা মারিয়াকে ঘিরে। অথচ তাকে চাওয়া পাওয়ার হিসেব কখনো করিনি। তাকে ভালোবাসার মাঝেও আমি আনন্দ খুঁজে পাই। যার সাথে কথা বলে যাপিত কষ্টের কথা ভুলে যাই। যার পাশে বসলে স্বর্গীয় সুখ অনুভব করি। যার চোখের দিকে তাকালে নিজেকে পবিত্র বলে মনে হয়। যার হাসির মাঝে পূর্ণতার জগৎ খুঁজে পাই। যার হেঁটে চলার মাঝে আলোকিত মনে হয় নিজেকে। যার পায়ের চিহ্নে খুঁজে পাই ঐশ্বরিক জগতের ছাপ। যাকে ভালোবেসে আমি নিজেকে খুঁজে পাই, তাকে কখনো ভুলতে পারব না। আমার সমস্ত অস্তিত্বের নাম মারিয়া। আমার ভালোবাসার নাম মারিয়া। আমার বিখ্যাত গল্পের চরিত্রের নাম মারিয়া। এই মারিয়াকে আমি কখনো হারাতে পারিনা। তাকে হারালে আমি নিঃসঙ্গ হয়ে যাব একেবারে। এই মারিয়াকে আমি কল্পনার মাঝে খুঁজে পেয়েছি। তাই বাস্তবতার মাঝে তাকে খুঁজতে যাই না কখনো। মারিয়া আমার হাজার জনমের ভালোবাসা !
Website: www.ichchashakti.com E-mail: ichchashaktipublication@gmail.com