মায়া জালের ভূত
আল-আমিন সাজ্জাদ
৭
আজকে আমার ফুলশয্যা,। রাত ১০টা বেজে গেছে। রুমে ডুকেই দেখি পুরো খাট দখল করে বসে আছে মেহজাবিন। কাছে গিয়ে বললাম। তুই কি খাটে ঘুমাবি না নিচে। কথাটা শুনেই মেহজাবিনের চোঁখ লাল হয়ে গেল। উচ্চস্বরে বলতে লাগল।
-খাটে না নিচে মানে। আমরা একসাথে ঘুমামু।
-আমি পারমু না।
-পারবানা মানে, ১০০ বার পারবা।
-তোরে এখনো খালাতো বোনটাই মনে হচ্ছে আমার ।
– খবরদার আজকে থেকে আমি তোমার বউ,আর তুই করে বলবা না।
-আরে বু আন্নেরে বউ মনে করতে আমার কেমন যেন লাগে ।
-(চড়া গলায় বলতে লাগল) বিয়ে করার সময় মনে ছিল না। এহন কেমন যেন লাগে তাই না।জানা নাই যে এক সাথে ঘুমানো লাগবো।
আমিতো বালিশটা নিয়ে নিচে শোয়ার প্রস্তুতি নিতেছি। মেহজাবিন তো রাগে টম। আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বলতে লাগল।
-তুই কি খাটে আবি। না ঝাড়ু নিয়া আমু।
কি আর করা অবস্থা খারাপ হওয়ার আগেই চোরের মতো চুপ করে খাটে চলে গেলাম। মেহজাবিন আমাকে নানা কথা বলতে লাগল। আজকে আমাদের বাসর রাত। যেটা জীবনে একবারই আসে। এটা চলে গেলে আর ফিরে পাওয়া যায় না।
কে শুনে কার কথা। আমি এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিলাম।
মেহজাবিন- চলো আমরা বাসর শুরু করি।
আমি- এক খাটে ঘুমাতে পারি কিন্তু বাসর টাসর করতে পারবো না।
মেহজাবিন- পারবি না মানে, তুইও পারবি তোর ঘাড়েও পারবো।
আমি- এই এমন করতাছস ক্যান। তোর একটা কথা মাথায় রাখা দরকার, আমি তোর স্বামী।
মেহজাবিন – এতোক্ষণে লাইনে আইছো চান্দু।মাথায় রাখছি দেইখাই তো, এমনডা করতেছি। বেশি বুঝবি ১ সপ্তাহের মধ্যে তোরে বাপ বানাইয়া ছাইড়া দিমু কিন্তু বুঝছস।
জোর জবরদস্তির আর থ্রেটের মাধ্যমে আমার সর্বনাশ টা হয়েয় গেল। তবে এমন দিন কখনো আর কোনদিন আসবে কিনা জানিনা। কিন্তু আমি কখনো ভূলতে পারবো না।
এসময়টা সুখের চেয়েও সুখময় ছিল।
মেহজাবিনের মধ্যে একটা জিনিস আমি দেখেছি। ও কড়া মেজাজের থাকলেও হৃদয়টা ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। বাহির থেকে বুঝা না গেলেও ভিতরটা অনেক নরম।
সকালে উঠে আমাকে ডেকে তুলে আদেশ দিতে শুরু করেন।
চা খাওয়ার ইচ্ছা জাগছে তার, তাকে চা বানিয়ে দিতে বলে।
আমার তো থোতার দাঁড়ি মোছের উপর উঠে গেছে। আশা করছি সারাজীবন ওর হাতের চা খেয়ে কাটিয়ে দেবো। সে কিনা উল্টো চা খাওয়ার বায়না করে বসে আছে।
দুজনের জন্য দুটো চা বানিয়ে নিয়ে আসি। গপ্পে সপ্পে চা টা শেষ হয়ে যায়। সারাদিন সকলের সাথে আনন্দ উল্লাসে কেটে যায়। সন্ধ্যায় আমার হাত ধরে বাসার ছাদে নিয়ে যায়।
আমি- এখন এখানে আসলে কেন।
মেহজাবিন- পাহারা দেবো সেজন্য।
আমি-কাকে পাহারা দেবে। আর তাছাড়া আমাদেরই পাহারা দিতে হবে কেন।
মেহজাবিন- আমরা না থাকলে কে থাকবে বলো। তুমি আর আমি দুজনে মিলে চাঁদটাকে পাহারা দিয়ে সারা রাত কাটিয়ে দেবো।
আমি- কালকে মাত্র বিয়ে হইছে, বিয়ের গন্ধ নাকি ১৮ মাস থাকে। এই সময় সাবধানে না থাকলে শয়তানে আছড় করে। আর তুমি বলতেছো সারা রাত। মাথা খারাপ নাকি। কত কিছু হয়ে গেলো তোমার জানা নাই?। চলো রুমে চলো। আমি রুমে গিয়ে চাঁদ দেখবো।
মেহজাবিন- রুম থেকে কেমনে দেখবে। ভিতর থেকে কি আর বাহিরের চাঁদ দেখা যায় নাকি।
আমি- বাহিরেরটা দেখতে যাবো কেন। আমার কাছেই তো একটা আছে।
মেহজাবিন বুঝতে পেরে লজ্জায় ডগোমগো হয়ে যায়।
মেহজাবিন-এতো রোমান্টিকতা আসল কই থাইকা স্যার।
আমি-এমন একটা খালাতো বউ থাকলে কি আর রোমান্টিকতার অভাব থাকে নাকি।
মেহজাবিন-খালাতো বউ মানে।
আমি-কিছুনা চলো।
দুজনেই রুমে চলে আসি।খাটে বসে মেহজাবিনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে,
আমি- ওই দিন অটোতে রেগে টম হওয়ার কি দরকার ছিল। আজ তো হয়েয় গেল।
মেহজাবিন-খুব ভালো হইছে। এহন ছাড়েন সবকিছু ঠিকঠাক কইরা দেই। ঘুমাইয়া পরেন। সক্কাল সক্কাল উঠা লাগবো।
দিনে দিনে রুটিন পরিবর্তন হতে লাগল। চরম সুখেই কাটছে দিন। মায়ের শাসন, বৌয়ের আবদার, বাবার উপদেশে। প্রকৃতি যেমন বসন্তে নতুন রুপে সাজে। সেই বসন্তের মতই আমারো ডালে ফুলে পরিপূর্ণ হতে থাকে। এখন পাখির গান, সবুজের বান, সবই ভালো লাগে।
এই বিশ্ব ভূখন্ডে যদি একটা সুখী মানুষ থাকে সেটাই নিজেকে দাবী করে বসি। কারণ একজন ছেলের বাবা মা এসবের পরে যদি কোন শখ থাকে সেটা হচ্ছে, মনের মতো একটা সঙ্গী আর বাড়ি,গাড়ি। যা সবই পরিপূর্ণ।
বিয়ের পনেরো দিন পরে আমাদের আগের বাড়িতে আগুন লেগে যায়। জানি না কেন এটা হয়েছে। তবে আম্মুর একটাই সন্দেহ এটা ওই অদৃশ্য মানবীর জন্য হয়েছে।
যাই হোক সেটা নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই কারণ, আমি এখনো ঠিক ঠাক। আমার কিছু হওয়ার আগেই যে বাড়ি ছেড়ে চলে আসছি সে জন্য আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া।
একটা চাকরিও হয়ে গেল আমার। যদিও আব্বুই ব্যবস্থা করে দিয়েছে তার অফিসে। বাপে বেটায় এক সাথেই অফিসে যাওয়া আসা করি।
বিয়ের পর আর কখনো সেই পারফিউম ছড়ানো সুন্দরীর দেখা পাওয়া যায় নি। আর যদি ভূলেও দেখা দিতে আসতো। তাহলে হয়তো মেহজাবিনের ঝাড়ুর নিচেই জীবনটা শেষ হতো তার।
মেহজাবিন এখন আর আমাকে ঝাড়ু দেখায় না। তবে চকোলেট ছাড়া বাসায় গেলে বেলকুনিতে মশার কামড় খেতে খেতে রাত পার হয়।
কোন বিয়ে বাড়ি গেলে সিসি ক্যামেরার মতো পিছনে লেগে থাকে। যাওয়ার আগেই কিছু বয়ান মেরে রাখে।
১/ভূলেও কোন মেয়ের দিকে তাকানো যাবে না।
২/কথা বলা যাবে না।
৩/স্টাইল মেরে আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না
৪/কোন কারণে আশেপাশে থাকলেও পরিপাটি থাকা যাবে না
৫/লুঙ্গী পড়ে থাকতে হবে।
সবকটাই মেনে চলি যথাসম্ভব। (বি,দ্র: যদি সামনে থাকে তাহলে)
দেখতে দেখতে বিয়ের দেড় বছর পার হয়ে গেছে।
নতুন অতিথি আগমের আভাস দেখা দিয়েছে। আম্মু তো আনন্দে আত্মহারা।
মাস তিনেক পর অতিথি ও পৃথিবীতে ঘুরতে চলে আসলেন।
এবার শুরু হলো নতুন স্টাইলে অত্যাচার।
বাবুকে রাতে ঘুম পাড়ানো, দুধ খাওয়ানো, ত্যানা পাল্টানো, সব আমার উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজে নাক ডেকে ফুপিয়ে ঘুম পারে।
কেমনডা লাগে কনতো দেখি? কিছু কইতেও পারি না। সইতেও পারি না। একদিন এ নিয়ে একটু ঝগড়া করছি। ও আল্লাহ পরের দিন আম্মুর কাছে বিচার দিছে। আম্মু তো আগে থেকেই তার দলে। বাংলায় ইচ্ছা মতো ধোলাই শুরু করলেন। অসহায়, এতিম,গরিবের মতো সব হজম করে নিলাম।
চুপ করে রুমে চলে আসলাম। আমার একটা কথাই বেশি মনে পড়তে ছিল। কলেজ জীবনে একদিন এক রিকশাওয়ালাকে পাঁচ টাকা কম দিছিলাম। আর একটু রাগারাগি করছিলাম। ওনি শুধু একটা কথাই বলছিলেন।
– গরিবে পাঁচ টাকা মাইরা খাইলেন। আবার রাগও দেখাইলেন। আল্লায় আন্নের বিচার করবো। বউয়ের হাতে গুতা খাইতে খাইতে দিন যাবো। মনে রাইখেন কথাটা।
শালার কথাটা এক্কেবারে জায়গা মতো আইসা লাগছে।
মাঝে মাঝে এখনো রিকশায়ালাকে স্বপ্নে দেখে চমকে উঠি।