বাড়িতে বিয়ের ধুম পইরা গেছে। ছোট কচিকাচারা বক্স বাজাইতেছে। আত্মীয় স্বজনে বাড়ি গমগম করতেছে। আর ঐ দিকে আমার মন চিন্তায় টনটন করতেছে।
ঘুরতে আইসাই যে খেলাটা দেখাইছে। আর এখন তো ঘরে ডুইকা পড়ছে।
ঢোল বাজাইতে লাগবো না তার থালি
আমার পিঠেই বাজাইবো সে তালি।
সন্ধা ৬টা
গায়ে হলুদ দেওয়া জন্য সবাই বসে গেছে। একের পর এক হলুদ দিতে লাগল। গায়ে হলুদ দিতেছে না মরিচ দিতেছে বুঝতেছি না। বাহিরের জ্বলার চেয়ে ভিতরেই বেশি জ্বলতেছে। পেটটা ফুলে ডাম হয়ে গেছে। শালার কেউ ছাড় দেয় না সবাই খাওয়ায়। একা আর কত খাওয়া যায়। এক পর্যায়ে জীবনটারে ছাইড়াই দিলাম। যাহ্ যে যা পারস, যেমনে পারস খাওয়া। জন্মের খাওয়া খায়াইয়া দেও।
টানা আড়াই ঘন্টা অত্যাচারের পর ছেড়ে দেওয়া হলো। গোসল শেষ করে রুম গেলাম আরাম আয়েসের জন্য। ও আল্লাহ আরাম না তো বেরাম শুরু হয়ে গেল। বসে তবু একটু থাকা যায়। মাগার শুয়ে থাকাতে গেলেই অবস্থা খারাপ। পেট এতোটা ভর্তি হয়ছে যে। শুইতে গেলে পেট টানা ধরে। মনে হয় আর একটু সোজা হইলেই ফেটে যাবে।
নাহ্ কোন ভাবেই থাকা যায় না। চিন্তা করলাম টয়লেট থেকে ঘুরে আসি। ও মোর জ্বালা এখন এটাও হচ্ছে না। দরজা জানালা লক হয়ে আছে। দাদুর কাছে শুনতাম দুঃখ যখন আসে, সব দিক থেকেই আসে। আজ আমি তার বাস্তব প্রমান পেলাম। কোন রকম খাটের কোনায় বসে ঝিমিয়ে রাতটা পাড়ি দেই। সকাল সকাল ফোন বেজে ওঠে। তাকিয়ে দেখি মেহজাবিন দিছে।
মেহজাবিন- কি স্যার, কি করেন( ব্যঙ্গ করে বলে উঠল)
আমি- কিছু না শুয়ে আছি।
মেহজাবিন- স্যার আমার জন্য চকোলেট কিনা রাইখেন।
আমি- চকোলেট খাওয়া লাগবো না। আমারেই খা।
মেহজাবিন- আপনেরে তো খামুই চকোলেটও খামু।
ওর কথা শেষ হতে না হতেই কল কেটে দেই।
বাহিরে এসে দেখি সকলেই সাজুগুজু নিয়ে ব্যস্ত।
বউ আনতে যাবে ১টার নামাজের পর আর এরা সকাল থেকেই সাজুগুজু শুরু করছে।
আমিতো আমি, ব্রাশ নিয়ে ঘুরতেছি। আম্মু আমার ডিলাম ডিলাম অবস্থা দেখে।
আম্মু- কিরে তোর এতোক্ষনে উঠার সময় হইল। বাকি কাজ সারবি কখন। তোর বন্ধুরা কই, কখন আসবে।
আমি- আম্মু কেবল তো সারে নয়টা বাজে। বন্ধুরা কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে।
আম্মু- ন্যাকরাম ন্যাকরাম করতে করতেই সময় শেষ হইয়া যাবো। তখন কান্দিস নি।
আমি- আমি না গেলেও চলবো তোমরা যাও।
আমার কথা শুনে আম্মু বড় বড় চোখ বানিয়ে ফেলেছে।
ধমক দিয়ে বলতে লাগল।
আম্মু- কই যাবি তাহলে। বিয়াডা কি তোর দাদার সাথে পড়াবে। ভদ্রলোকের মতো ৫ মিনিটের মধ্যে রেড়ি হ যা। বলেই আম্মু বাহিরের দিকে রওনা হলো।
আমি বিড়বিড় করতে লাগলাম , আমারতো পাবনা গেলেই ভালো হয়।
আম্মুতো কথাটা শুনেই পিছনে ব্যাক করে আমার কাছে এসে হাজির।
আম্মু- কি বললি।
আমি- কিছু না। যেখানে যাইতে ছিলে যাও।
১১টার মধ্যেই সবাই হাজির। রওনা দিলাম শ্বশুর বাড়ির দিকে। ১১টা ৪৫ পৌঁছেও গেলাম।
বাড়ির সামনে বড় একখান গেট। সুন্দরীদের মেলা বসে গেছে। গেটের সামনে যেতেই একজন স্প্রে করে চোঁখটা কানা করে দিলো। পেটের উপর থেকে মাথা পর্যন্ত স্প্রের আদরে ভিজে গেছে।
মেহজাবিনের বান্ধবী আর শালিকারা আদর করে শরবত খাইয়ে দিল। ও আল্লাহ ওটা শরবত না তো, মরার টিকেট ছিল। পুরো গ্লাসটাই মরিচের গুড়ো দিয়ে ভর্তি।
ঝালে মুখ পুড়ে যাচ্ছে। ঝাল কমাবো একটু সে অবস্থাও না। হারামজাদারা যার যার মতো মিষ্টি খাইয়া শেষ দিছে।
গেটের দারোয়ান গুলো বায়না ধরে বসে আছে ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এক টাকা কম হলেও ছাড়বে না। কিছুক্ষণ টানা হেড়রার পর ৪ হাজার ৫ শত টাকায় ছেড়ে দেয় ।
ভিতরে যথাসম্ভব আপ্যায়নের পর এবার বাড়ি ফেরার পালা।
বিদায়ের সময় খালাকে জড়িয়ে ধরে সেই লেভেলের কান্না।
ওর কান্না দেখে আম্মু -এতো কন্না করা লাগবো না, তুই কি পরের বাড়িতে যাইতেছস নাকি। কয়েকদিন আগেই যেমন ছিলি এখনো তেমনই থাকবি।
বিদায় পর্বটা শেষ করে বাসায় চলে আসলাম।
এদিকে বাসায় আসার সাথে সাথেই বউটাকে হারিয়ে ফেলি। কে নিয়া গেছে টেরই পাইনি। বউ ফিরে পেতে আবারো ৫০০ টাকা খসে গেল পকেট থেকে।
রুমে ডুকবো সেখানেই একই অবস্থা। রুমটা তালা মেরে রেখে দিয়েছে। কি আর করা সেটার জন্যও কিছু পাত্তি খসে গেল।