মায়া জালের ভূত
আল-আমিন সাজ্জাদ
পরের দিন কলেজে গিয়ে আবার চোঁখে পড়ে মায়াকে। পিছনের কথা মনে করে লজ্জায় আর সামনে গেলাম না। সামনে গিয়ে কি হবে, যে কিনা ফেক আইডির মধ্যেই সংসার গুছিয়ে ফেলে। তাও আবার এলাকার ছোট ভাইয়ের সাথে। তার সামনে না যাওয়াই ভালো।
মায়াই আমাকে ইশারায় ডাক দিয়ে কাছে আসে। আর ঐদিন সময়ের কারণে পরিচিত হতে পারেনি। সেজন্য সরি বলে পরিচিত হয়ে নেয়।
মায়া:- আপনি এ কলেজেই পড়েন।
অন্তু:-হ্যা
মায়া:- আগে কখনো দেখিনিতো।
(৩০ দিনের ২৫ দিনই আমারে ভূতে দৌড়ায়, কলেজে আসি আমাবস্যা পূ্র্ণিমা দেইখা, দেখবা কেমনে। মনে মনে বললাম)
অন্তু:- দেখা হয়না তাই দেখেন্নি। আপনি কোন ইয়ারে পড়েন।
মায়া:- ইন্টার প্রথম বর্ষ। আপনি
অন্তু:- সেম টু ইউ। চলেন বসে এক কাপ কফি খাই।
মায়া:- ঠিক আছে চলেন।
জাহিদ ভাইয়ের কফিশপে বসে কফি খাচ্ছি। এমন সময় ঐ ভাই দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এনি সেই, যার জন্য আমার ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তাকে দেখেই মুখটা ঘুরিয়ে খবরের কাগজ দিয়ে মুখ ডেকে ফেললাম। আমার এমন অবস্থা দেখে মায়া বলল,
মায়া-মুখ লুকাচ্ছেন কেন।
আমি- আর বইলেন না। ওনি যা করছে তা বলার মতো না (কথাটা বলা শেষ হতে না হতেই পিছন থেকে ডাক দিয়ে বসে ভাইটা। যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই রাত হয়। ডাক শুনেই তো মেজাজটা ১০০ ডিগ্রিতে গরম হয়ে গেল।
হালা বারোটা বাজাইছোস এহন এনে আইছোস তেরোটা বাজাইতে। অবশেষে হারামজাদায় কাছেই এসে গেল। বেজাল বাধাঁনোর আগেই পরিচয় করিয়ে দিলাম মায়ার সাথে। কপাল ভালো তাই একটা কফি খেয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই চলে গেলেন।
ভাইটা যাওয়ার পরপরই মায়া আমাকে জিজ্ঞেস করে। কি হইছে তার সাথে, যে তাকে দেখে এমন করলাম।
আমি মায়াকে সেদিন স্টেশন থেকে বাসা পর্যন্ত যা ঘটছে সব খুলে বললাম। আমার কথা শুনে খিলখিল করে হাসতে লাগল। মায়ার হাসি দেখে,
-আপনি হাসতেছেন, আর ওদিকে আমার জীবন শেষ। বাসায় উঠতে বসতে ঝাড়ি খেতে হচ্ছে আমাকে। বাসায় যাইতেই ভয় লাগে।
আমার কথা শুনে,
মায়া-ভাইসাব এরকম ঝগড়া থেকেই কিন্তু দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের জন্ম হয়।
হায় হায়রে আমি তারে পটানোর ধান্দায়।আর সে আছে দুষ্টু মিষ্টি নিয়ে। তে কামের বিনাশ, ভালোবাসা গোল্লায় যাবে মনে হচ্ছে।
আমি-ধুর ওই ডাইনির সাথে, জীবনেও না।
মায়া- সময় মতো হয়ে যাবে ভাইসাব। আচ্ছা এবার উঠি।
দুজনে আবার হাটতে হাটতে ক্যাম্পাসে চলে আসলাম। মায়া চলে গেলে কমন রুমে আর আমি ক্লাস রুমে। আমাকে দেখেই তো সাকিবের মনে খই ফুটতে ছিল।
সাকিব-কিরে এক দেখাতেই পটিয়ে নিয়েছিস নাকি।
আমি- কি বলস উল্টা পাল্টা, মাথা ঠিক আছে কি।
সাকিব- ঠিকি আসে,দেখলাম তো দুইজন মনের সুখে কফি খাইলি,
আমি- ফারহান আসে নাই আজকে, ওরে তো দেখতেছি না।
সাকিব- সকালে কল দিছি, ও বলল, ওর নাকি জ্বর আসছে, সেজন্য কলেজে আসে নাই।
আমি- আচ্ছা।
কলেজ থেকে বের হয়ে চলে যাই ফারহানদের বাসায়। ওর সাথে দেখা করে চলে আসি বাসায়।
বাসায় এসে দেখি মেহজাবিন মায়ের সাথে কাজে করতেছে। দেখেই মায়ার কথাটা মনে পড়ে গেল। ডাক দিয়ে চকোলেট ধরিয়ে দেই। খুশি হয়ে ব্যাগটা নিয়ে, বলে তুমি ফ্রেস হয়ে আসো খাবার দিচ্ছি।
খেয়ে আগের মতো বেলকুনিতে বসে গান শুনতে লাগলাম। একটু পরেই কল আসে। রিসিভ করতে বলে উঠল।ভাইজান আপনার একটা পার্সেল আসছে কোথা থেকে রিসিভ করবেন। আমি বাসার ঠিকানা দিয়ে দিলাম।
কিন্তু কথা হচ্ছে কে পাঠাবে পার্সেল, আমার নিজেরই অজানা।
একদিন পরেই হাতে পার্সেল হাতে এসে পৌঁছে। প্যাকেটটা খুলেই দেখি। ছোট একটা কাগজ। তাতে লেখা “” অচিরেই হারিয়ে যাবো দুজনে””
বরাবরের মতো সারাদিনের কাজ শেষ করে রাতে ঘুমিয়ে পরি। ভয়ংকর একটা স্বপ্ন দেখে চমকে উঠি। নিজের হাতে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করি।
এবং বাসায় ফেরার পথে হুট করে পানি এসে বন্যায় পরিনিত হয়। আর আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
আমি সকালে আম্মুকে আমার সাথে ঘটে সবকিছু খুলে বলি। কথাটা শুনেই আম্মুর মুখ কালো হয়ে যায়। আব্বুকে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলে আম্মু। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় চলে আসে। আব্বুকেও সব খুলে বলা হয়।
তৎক্ষনাৎ সবাইকে রেডি হতে বলে। আম্মু জিজ্ঞেস করে কোথায় যাবে। আব্বু উত্তরে বলে তার জানা মতে একজন ভালো পীর আছে তার কাছে।
সবাই রেডি হয়ে রওনা দিলাম পীরের আস্তানার দিকে। কিছু দূর যেতেই সাকিবের কল আসে।
সাকিব- তুই কি কাল রাতে কলেজে আসছিলি
আমি- না কেন?
সাকিব- কলেজে আজকে একটা লাশ পাওয়া গেছে, নদীর পারে।কুপিয়ে যখম করা। সিসি ক্যামেরা চেক করা হয়ছে। কলেজ ক্যাম্পাসে একটা মানুষকে ঘুরাঘুরি করতে দেখা গেছে। চেহেরাটা ঠিক বুঝা যায় নি। কিন্তু সবকিছু দেখতে তোর মতই লাগতেছে।
কথাটা শুনেই হাতপা কাঁপতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম পীরের আস্তানায়। আমাকে দেখেই কাছে ডাক দেয়। মাথায় হাত রেখে সবকিছু বলতে লাগল, আমার সাথে যা যা ঘটে গেছে।
আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলে তোর ছেলে হারিয়ে যাবে। কথাটা শুনেই আম্মু হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।
আমি তাদের একমাত্র সন্তান।
আব্বু কারণ জিজ্ঞেস করে। পীরবাবা উত্তরে বললেন,
পীর-কোন কারণ জানতে চাস না। বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। এসব থেকে মুক্তি পেতে ছেলেকে বিয়ে দিয়ে দে। আর বাসাটা ছেড়ে দে।
পীরের আস্তানা থেকে বাড়ির পথে রওনা দেই। আস্তানা থেকে তিন কিলোমিটার পেরুতেই সেই মেয়েটিকে দেখতে পাই। আমাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসতেছে। মাঝ পথে আরো দুবার দেখা মেলে।
পরের দিনই আমরা বাসাটা ছেড়ে চলে আসি। আম্মু মেয়ে দেখতে উঠে পড়ে লাগলেন। আমি আম্মুকে মায়ার কথা বলি। আম্মু বলে,
রাখ তোর মায়া টায়া। তোর উপর থেকে ছাড়াইতাছি কালো ছায়া।
সাত আটটা মেয়ে দেখার পর ছোট খালা খালুকে বাসায় আসতে বলে। রাতে খাওয়া শেষে সবাইকে নিয়ে বসে।
আম্মু – (ছোট খালার দিকে তাকিয়ে) মেহজাবিনরে আর দিমুনা
খালা- ক্যা, কি কস এই সব।
আম্মু – মাইয়া টাইয়া আর দেখাহামু না। ও আইছে তো আইছেই আর যাওয়া লাগবো না।
খালা- নিয়া যাই, আমাগোরেও চিন্তা ভাবনার বিষয় বলতে কিছু আছে। আগে চিন্তা কইরা নেই। তারপর জানাইতাছি তোগো।
আম্মু-(খালুর দিকে তাকিয়ে) তুমি কি বলো ফজলু।
খালু- আপা আপনাগো কথার উপর আমার কোন কথা নাই। আপনের বইনে কি কয় সেইটা শুনেন।
অনেক কথা হওয়ার পর সবকিছু ঠিক হয়ে যায়।
আমার কপাল গেছে রে। মায়া কইছিল দুষ্টু মিষ্টি প্রেম হবে। প্রেম তো নারে ভাই ডাইরেক বিয়া। শালার এতো দিন ভুগছি ওই জ্বালায়। আর এখন ভুগতে হবে এর জ্বালায়। জ্বালাবো নাতো তেলের কড়াইতে নিয়া এপিট ওপিট কইরা ভাজবো।
কি আর করা। কপাল, যাই হোক মেনে নিতে হবে।