মায়া জালের ভূত (৪র্থ পর্ব) — আল-আমিন সাজ্জাদ
চা টা খেয়ে বিছানায় গা ঠেকিয়ে ঝিমাতে লাগলাম। ঘন্টা দুই আরামের পর রাজকীয় কায়দায় বসে মেহজাবিনকে মিষ্টি সুরে ডাক দিয়ে বললাম। আমার জন্য একটা চা বানিয়ে আনতে।
আজকে না অন্যদিন বানিয়ে খাওয়াবোনি, মেহজাবিন উত্তর দিল।
মনে মনে বললাম, সুযোগে প্রতিশোধ নিলি, আবারো সুন্দর করে ডাক দিয়ে কাছে নিয়ে আসলাম।
-একটা চা বানিয়ে দাওনা গো আপু
মেহজাবিন- আমার সময় নাই, তুমি বানিয়ে খাও।
-তুমি অনেক ভালো যাও প্লিজ।
মেহজাবিন- কথায় এতো রস আসলো কই থাইকা, আমারে ফকিন্নি কইছিলা মনে নাই।
– যা আর কমু না, এবার একটা বানিয়ে দে।
মেহজাবিন- দিতে পারি একটা শর্তে,
-কি?
মেহজাবিন – চকোলেট লাগবে আমার।
– আচ্ছা, যা চা টা বানিয়ে নিয়ে আয়, সন্ধায় বাহির থেকে আইনা দিমুনি।
চকোলেটের কথা শুনতেই নাচতে নাচতে চা বানিয়ে নিয়ে আসে। চা টা মুখে দিয়ে,, কালকে থেকে নিয়মিত চা বানিয়ে খাওয়াবে আমাকে।
কথাটা শুনেই বলে উঠল, আমি কি আপনের বউ, যে প্রতিদিন চা বানিয়ে খাওয়াবো।
আমি বললাম- বউ হইতে যাবি কেনো, তোর হাতের চা অনেক সুন্দর হয়, তাই তো কথাটা বললাম। আর তোরে তো কিছু বলায় যায় না, ছ্যাং ছ্যাং কইরা উঠস কেন।
মেহজাবিন – কি (রাগি চেহারায়) আমি ছ্যাং ছ্যাং করি। (ঝাড়ু দেখিয়ে) ওইযে ওইডা কি দেখছেন।
আমি- তোর চকোলেট আনা বাদ, যা এখান থাইকা।
মেহজাবিন- আমার চকোলেট না আসলে, তোর বাড়িতে আসা বন্ধ। যদি ভুলে আসিসও, ডাবল ঝাড়ু দিয়া পিটামু(রাগি সুরে)
– তুই এতো বেয়াদব হইছোস কবে থাইকা, বড়দের সাথে কেমনে কথা বলা লাগে খালা খালু তরে শেখায় নাই।
মেহজাবিন – আমারে ঠিকই শিখাইছে তোরে শেখায় নাই। তুই তো আমার দুই বছরের বড়, আমার বর যে হইবো সে তো থাকবো আমার থেকে কমছে কম দশ বছরের বড়, বেশি বুঝলে ওরে ধরেই পিটামু বুঝছোস।
আর তুই তো খালাতো ভাই।
রুমের ভিতর তুমুল বেগে মুখ দিয়ে যুদ্ধ চলতে ছিল। বাক্যগুলির আওয়াজ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী ( মানে আমার মা. ফকিন্নিটার খালা) হাজির হয়ে গেলেন। রুমে ডুকতেই ফকিন্নিটা নেকা কান্নায় মাকে জড়িয়ে ধরে স্প্রিট টা বাড়িয়ে দিল।
লও ঠেলা, আম্মুও তার ক্যাসেটটা বাজিয়ে দিল, ইচ্ছে মতো বকতে লাগল, মনে হচ্ছে আমি চুরি করছি, আর এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যান জনগন এক হয়ে আমাকে পিটাচ্ছে।
দুঃখে নিজেকে রোহিঙ্গাদের মতো মনে হচ্ছিল। অসহায়ের মত চুপ করে সব শুনলাম। আবার জরিমানার ভাগেও পরে রইলাম, আম্মু সাফ সাফ বলে দিল, সন্ধায় যেন দুইটা চকোলেট মেহজাবিনের হাতে আসে।
কি আর করা, হাইকোর্টের নির্দেশ মানতে তো হবেই।
রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে, দুঃখে বুক ফেটে যাচ্ছে, চকোলেটের জন্য পকেট ফেটে যাচ্ছে। মনডায় চাইতেছিলে বাড়ি ছাইড়া চইলা যাই। মাগার চইলা গেলে না খাইয়া মরা ছাড়া উপায় না,
চুপচাপ বাজারে চলে আসলাম, সাজন কাকার দোকানে বসে মনের সুখে ধোঁয়া টানতে টানতে নেটটা অন করে ফেজবুক টায় ঘুরাঘুরি করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর টুক করে একটা ফ্রেন্ডরিকোয়েস্ট চলে আসে। আইডি টা দেখে মনটা খুশিতে লাফিয়ে উঠে।
উঠবে না কেন বলেন, আইডিটার নাম “” মেঘবতী মায়া”” যারে পাবার আশায় মন ব্যাকুল। তার আইডি থেকে রিকোয়েস্ট। ইতি মধ্যে হাই চলে আসছে। আমিও হ্যা বলে এস এম এস করা শুরু করে দিলাম। ভালোই কথা হচ্ছিল। মনে মনে ভাবতে লাগলাম হয়তো মায়া আমাকে চিনেই এস এম এস গুলো করতেছে। যদি থাকে নছিবে আপনি আপনি আসিবে গানটা মন গুন গুন করে গাইতে লাগল। আমি তাকে বলে ফেললাম তুমি কবে থেকে আমাকে চিনো।
মায়া- অনেক আগে থেকেই
আমি তো বেহুশ, কি বলে, তাহলে কি মায়া আমাকেও………
মায়া- আচ্ছা পরে কথা হবে, আম্মু ডাকতেছে।
আমি, আচ্ছা যাও, লাইনে আসলে নক দিও।
দোকান থেকে দুইটা চকোলেট নিয়ে বাসায় ফিরি। চকোলেট পেয়ে ৫ মিনিট পরে মহারানীর ডাক পেলাম।
-ভাইয়া ডাইনিং এ আসো, খাবার খেয়ে নাও।
পরম আদর যত্ন করে খাওয়ালেন। খাওয়া শেষে রুমে গিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে এস এম এস এর অপেক্ষা করতে লাগলাম। মায়ার কোন খোঁজ পেলাম না। এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছি বলতেই পারবো না।
-নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, গলা চেপে ধরে আছো কেন।
-অন্য কারো দিকে তাকাইলে মেরেই ফেলবো। তুমি শুধু আমার। ভূলেও কারো কথা চিন্তা করা যাবে না।
বলেই খোলা চুলে পাশেই ঘুম পড়ল। বেশ চমৎকার লাগতেছিল। মনে হচ্ছিল চাঁদ খানা আমার কাছে এসে আলো ছড়াচ্ছে। ঘুম ভাঙ্গতেই আর কাউকে দেখতে পেলাম না, শুধু সেই পারফিউমের ঘ্রানটাই চারিদিকে ছড়াচ্ছিল।
সকালে রুমের দরজায় এসে আম্মু চেঁচামেচি শুরু করেছে। রুম খুলতেই হুর হুর করে আব্বু, আম্মু, মেহজাবিন ঢুকে খোঁজাখুজি করতে লাগল। মেহজাবিন বলে উঠল,
– খালা আমি এইখানেই দেখছি, সবুজ শাড়ী পড়া ছিল। তোমার পোলায় বিয়া করছে, আমাগো সবাইকে না জানিয়ে।
আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। কিরে আমার বউ আমি জানি না , ও দেখল কেমনে। এবার কি তাহলে বাস্তবে কোন অঘটন ঘটতে চলছে নাকি। আম্মুও বলতে লাগলেন।
– আমিও ওর হাতে আংটি দেখছি, শার্টে মেয়ে মানুষের চুল পেয়েছি।
আমি- তোমাদের কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে, আমি বিয়ে করতে যাবো কেন।
মেহজাবিন- আমি রাতে যখন ওয়াশরুমে যাই তখন তোমার রুমে সুন্দর একটা বউ দেখেছি।
আমি গায়ে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে গা পুঁড়ে যাচ্ছে। আম্মুকে কোন রকমে বুঝিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাই।
আজকের বিষয়টা আমাকে অনেক ভাবাচ্ছে। বাড়িতে কি তাহলে কোন কিছুর আছড় পড়েছে। নাকি সবার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমি কি ঠিক আছি নাকি অসুস্থ হয়ে গেছি। এসব কেমনে সম্ভব।
এবার আম্মুকে সব খুলে বলতে হবে। সকাল ৯টা ২০, এখনো কিছু খাওয়া হয়নি। তাই হোটেলে গিয়ে কিছু খেয়ে নেই। খাওয়া শেষে ফেজবুকটা খুলতেই মায়ার আইডিটা লাইনে দেখতে পাই। এস এম এসে দিয়ে বসি। মিনিট ৫ পরে উত্তর আসে। কি করে, দিনকাল কেমন যাচ্ছে। কলেজে আসবে কবে এসব জিজ্ঞেস করি। ঠিকঠাক মতো সব কিছুর উত্তর আসে।
চ্যাটিং করতে করতে গড়িয়ে যায় ৫টা দিন। মনে মনে সংসার সাজিয়ে ফেলেছি মোটামুটি। এখন শুধু অপেক্ষায় আছি, কলেজে আসলে মনের কথাগুলো বলে দিবো। কিভাবে বলবো, কেমন স্টাইলে কাছে যাবো। এসব চিন্তা করে গত দুই রাত ঘুমই হয় নাই আমার। আগামীকাল কলেজে যাবো।
মাগার ফেজবুকে ওই আইডি থেকে একটা মেসেজ এসে হাজির, লেখা আছে ভাইয়া ৫০০ টাকা হবে। আমি বললাম হ্যা হবে। কোথায় তুমি, লোকেশন দাও আসতেছি আমি। ওপার থেকে মেসেজ আসে ভাইয়া বিকাশ নাম্বার দিচ্ছি ওটাতে পাঠিয়ে দাও। আর হ্যা আমি কিন্তু রাহাত, এটা আমার ফেক আইডি, তুমি উপকার করলে বলেই তোমাকে বলে দিলাম।
ওর ওই কথাটা শুনে বুক ফাইটা কান্না চলে আসে। মনডায় চাইতেছে উঠানে গিয়া হাত পা ছাইরা দিয়া, গড়াগড়ি করতে করতে বাসার এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত যাই আর কান্না করি।
ওরে হারামজাদা এই ছিল তোর মনে। তরে টাকা খিলাইতাছি।
আমার আশা ভরসা, স্বপ্ন সব শেষ। নিজেকে বাংলা ছবির নায়ক বাপ্পারাজ দাবি করতে ইচ্ছা করছিল। মনডায় শুধু ওই গানটাই শুনতে চাইছিল বার বার “”ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়””
নিজের অজান্তে চার লাইন সাহিত্যও রচনা হয়ে গেল।
বোকা আমি, অবুঝ আমি
বুকে অনেক ক্ষত।
জীবনটা আমার কেটে গেল
কুইচা মুরগির মতো।