মায়া জালের ভূত
আল-আমিন সাজ্জাদ
৮( শেষ পর্ব)
বাবুর বয়স ১ বছর হয়ে গেছে। মায়ের মানত ছিল শাহজালাল(রহঃ) মাজারে গিয়ে সিন্নি দিবেন। সব কিছু গুছিয়ে রওনা দিলাম সিলেটের দিকে। আমাদের ট্রেনটা প্রথম স্টেশন থেকে দ্বিতীয় স্টেশনে গিয়ে ভীড়ে। দ্বিতীয় স্টেশনে মায়ার দেখা মেলে। মায়া আমাকে দেখেই সামনে আসে। সাইডের সিটটা ফাঁকা ছিল সেজন্য ওখানেই বসতে বলি। আমার পাশে মেহজাবিনকে দেখে,
মায়া- আপনি বিয়ে করছেন নাকি।
আমি-হুম
মায়া- ওনি কি আমাদের…
ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই – হুম এটা আপনার ভাবি।
মায়া মেহজাবিনের সাথে পরিচয় হয়ে নেয়।
আব্বু আম্মুর সাথেও পরিচয় করিয়ে দেই।
মায়া-উইকেটও পড়ছে দেখছি। তা বাবুর নাম কি রাখছেন।
আমি-তাহসান
মায়া- ওহ, দেখতো একদম ভাবির মতোই হইছে। তা যাচ্ছেন কোথায়?
আমি- সিলেট শাহজালাল (রহঃ)মাজারে।
মায়া- মানত আছে না ঘুরতে।
আমি-বাবুর জন্য মানত আছে। আপনি কোথায় যাচ্ছেন।
মায়া-আমিও সিলেট যাচ্ছি। ওখানে আমার নানুর বাড়ি। তো আপনার ওই খালাতো বোনের কি খবর। এখনো কি জ্বালায় নাকি?
আমি তো মায়ার “” এখনো কি জ্বালায়”” কথাটা শুনে জিব্বায় কামড় দিয়ে বসি। খাইছেরে এবার কেউ সর্বনাশ ঠেকাইতে পারবো না। মেহজাবিনের দিকে তাকিয়ে দেখি বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
আমি-শেষ মেষ আপনার কথাই সত্যি হইছে তবে পুরোটা না। দুষ্টু মিষ্টি প্রেম হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে গেছে।
মায়া- যাক শুভকামনা।
ঘন্টা পাঁচেক পর পৌঁছে গেলাম সিলেট।
মায়া নেমে যাওয়ার সময় আঙুল দিয়ে তার নানুর বাড়ি দেখিয়ে বলল। কোন অসুবিধা হলে যেন সেখানে যাই।
আমি যে মায়াকে পছন্দ করতাম।একবার মুখ ফুটে বলতে চেয়েছিলাম মেহজাবিনকে। কিন্তু বকা খাওয়ার ভয়ে আর বলিনি।
যদিও এটা ছিল পাষ্ট
শুনলে দিতো বাঁশ।
মাজারে সিন্নি রান্না করে লোকদের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে সন্ধায় বাসায় দিকে রওনা দেই।
সবকিছু ঠিকঠাক চলতে থাকে। মাঝে মাঝে চকোলেট নিয়ে তুমুল ঝগড়া হয়। ওর সাথে ঝগড়া করতে আমারো বেশ দারুণ লাগে।
জোস্না রাতে মেহজাবিনকে নিয়ে চাঁদ দেখি। আর দুষ্টু মিষ্টি কবিতা শুনাই।
তুমি আমার সেই পরী
——————
তুমি আমার জোনাক জ্বলা রাত
তুমি আমার জোস্না মাখা চাঁদ।
তোমার পায়ের পরশেই শুরু হয় প্রভাত।
তোমার ছোঁয়াতেই সেরে উঠে শত আঘাত।
তোমার কপালের টিপ আমার সুখ।
তোমার চুমু আমার জ্বরের ঔষধ।
তোমার চোখের কালো কাজল।
আমাকে করে দেয় বদ্ধ পাগল।
তুমি তো আমার সেই পরী
যে হৃদয়ে জুড়ে পেয়েছো ঠাই।
এপাড় বলো ওপাড় বলো
শত জনমে তোমাকেই চাই।
অনেকগুলো দিন কেটে গেছে। তাহসানের বয়স ৫। এখনো সেই আগের মতই গার্ড দেয়। মাঝে মধ্যে যদি বলি আমি তাহসানকে স্কুলে নিয়ে যাই। একদমে একশবার না করে বসে, আর বলে।
-ভাবিদের সাথে আড্ডা মারার ধান্দা তাই না।
তার মানে সে আমাকে প্রচন্ড রকমে ভালোবাসে।