মায়া জালের ভূত (পর্ব ২)
আল-আমিন সাজ্জাদ
২.
আমি কি সত্যি কারোর মায়ায় পড়ে গেছি। যদি পড়েও থাকি, কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব। দুইদিন আগে যে মারা গেছে, তার প্রতি এতো মায়া কেন কাজ করতেছে। আর তাছাড়া তাকে তো কখনো দেখিনি।
গায়ে কেমন যেন জ্বর জ্বর অনুভব হতে লাগল। চোঁখটা বন্ধ হতে শুরু করেছে। চোঁখ খুলে দেখি হাতে সেলাইন লাগানো আছে, আম্মু পাশে বসে আছে।
চোঁখ খুলতেই মায়ের মুখে কিছুটা হাসি দেখতে পেলাম।
আম্মু জিজ্ঞেস করল কি হইছিল তোমার। আমি কথাটা শুনে রীতিমতো ব্যবাচ্যাকা খেয়ে উঠলাম।
আম্মুকে বললাম হাতে এসব কি। এতো ঔষধ কেন।
আম্মু বলল দুইদিন তোমাকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। তিন দিনের দিন তোমাকে রুমের মধ্যে পাওয়া গেছে, আর আজকে পাঁচ দিন পর তোমার হুশ ফিরেছে।
তোমার কাপড়ে রঙ্গের আঁচ দেখা গেছে, মনে হচ্ছে তুমি হলি খেলেছ। শার্টের বুতামে পেঁচানো মেয়েদের চুল ছিল।
হঠাৎ আমার হাতের দিকে লক্ষ চলে যায়। বা হাতে একটা আংটি দেখতে পাচ্ছি। আমি তো আংটি পড়ি না, তাহলে হাতে আসলো কিভাবে। আম্মুকে বলতে যাবো, এমন সময় মনে হলো থাক পড়ে বলবো।
দিন পেরিয়ে সন্ধা নেমে এলো, বিছানা থেকে উঠতে চেষ্টা করলাম, সারা শরীর ব্যথা থাকার কারণে উঠা হলো না, আম্মু এসে খাবার খাইয়ে দিয়ে যায়। মরার মতো পড়ে রইলাম বিছানায়। আস্তে আস্তে নিদ্রা আমাকে গ্রাস করে নিলো।
রাত্রি দিপ্রহরে, স্বপ্নে মশগুল হয়ে পড়লাম। কলেজের ক্যান্টিন এ বসে আছি। পুরা জায়গাটা ছিল জনশূন্য। হাতে আংটি পড়ার অভ্যাসটা একদমি ছিল না আমার, তাই বাম হাতে পড়া আংটিটা বিরক্তিকর মনে হচ্ছিলো।
খুলে ফেলতেই পিছন থেকে বলে উঠল এটা কি করতেছো তুমি। এটা আমাদের বিয়ের আংটি। মেয়েটির হাতেও একই রকম আংটি দেখতে পেলাম। তুমি কি জানো না বিয়ের আংটি খুলতে নেই, অমঙ্গল হয়। আমি বললাম কিসের বিয়ে, মেয়েটি বলল তুমি কি ভূলে গেছো সব। কথাটা বলেই ধীরে ধীরে কাছে আমার, কপালে চুমু দিতেই সব মনে পড়ে যায়। গড়িয়ে গেছে অনেক দিন পেরিয়ে গেছে পাঁচটা বছর।
হঠাৎ ফোনের শব্দে ঘুমটা ভেঙে যায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি তিনটা বেজে গেছে। লাইটটা জ্বালাতেই রিতিমতো অবাক হয়ে যাই,। আমার অগোছালো ঘরটা একদম পরিপাটি করে গুছানো। সেই পারফিউমের ঘ্রাণ। টেবিলটাতে চায়ের কাপ, মনে হচ্ছে এই মাত্র কেউ এটা এনেছে, সদ্য ধৌয়া উঠতেছে।
পনেরো দিন পর অনেকটাই সুস্থতাবোধ করি। কলেজের দিকে রওনা শুরু হলো। কলেজে গিয়ে কয়েকটা বান্ধবীও জুটিয়ে ফেললাম। তিন্নি, তানিয়া, ফারহান, সাকিব। নাহ এবার মনে হয় একাকিত্বের রেশটা কাটলো। যদিও দেরিতে পেয়েছি তবুও। কলেজের এপাশ ওপাশ ঘুরতে লাগলাম নয়া বন্ধুদের সাথে। কোথাও মায়ার দেখা মিলল না। এপাশ ওপাশ তাকাতাকির ভাব দেখে তিন্নি বলেই ফেলল, কিছু খুঁজতেছিস। আমি বললাম নাহ্। চল আজকে কোথায় বসি। সাকিব বলল জাহিদ ভাইয়ের কফিশপে যাই। আমি বললাম কতদুরে ওটা, সাকিব বলল গেটের সামনে রাস্তার ধারে। সবাই মিলে চলে গেলাম। নতুন বন্ধু হওয়াতে খরচটা আমার পকেট থেকেই ঝেরে দিলাম।
কিছুক্ষণ পর পুলিশের গাড়ি কলেজের ভিতরে ডুকে পড়ল। আমরা ডুকে পড়লাম ভিতরে। প্রশাসনিক ভবনের কাছে গিয়ে গাড়িটি থামল। প্রিন্সিপাল স্যারকেও বাহিরে দেখতে পেলাম, তার চেহারায় উত্তেজনা বিরাজ করতেছে।
স্যার পুলিশকে নিয়ে খালের পাড়ে যাচ্ছে, আর বলতেছে যেখানে ধর্ষিত লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানেই যুবকের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে। পুলিশ ঝুলন্ত লাশটাকে নিচে নামিয়ে আনে, হাতের ভাঁজে এক টুকরো কাগজ মেলে। কাগজে লেখা “”আমি খুব অন্যায় করে ফেলেছি””
পুলিশ স্যারকে জিজ্ঞেস করে, এটাও কি আপনার কলেজের ছাত্র। স্যার, এটা আমাদের কলেজের ছাত্র নয়। তবে বহুবার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি।
লাশটা গাড়িতে তুলে,স্যারকে বলল, আমার সাথে দেখা কইরেন, মেয়েটির সাথে খুবই নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে। তার দেহে তিন পুরুষের আলামত পাওয়া গেছে। বলেই গাড়িটি থানার পথে রওনা হয়।
কথাগুলো শুনে স্যারের মুখটা একদম কালো বর্ণ ধারণ করে।
মানুষ কেমনে পারে এতোটা বাজে হতে। বলেই বের হয়ে গেলাম।
বাসটা রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে গেল, রাস্তা থেকে আমার বাসাটা আরো একটু ভিতরে, রিকশা না পাওয়ায় পায়ে হেঁটেই যেতে লাগলাম। খানিকটা পথ হাঁটতেই চলার গতি কিছুটা কমে যায়। কিছু একটার অস্তিত্ব অনুভব করতে লাগলাম। মনে হচ্ছে পিছন পিছন কোন মেয়ে হাঁটতেছে, নুপুরের শব্দে চারিদিক মুখরিত হয়ে গেছে। থমকে দাঁড়াই। আর আনমনে শব্দটা শুনতে থাকি। ভারী মিষ্টি লাগতেছে।
ধাক্কা মেরে বলতেছে, এখানে একা একা ভিজতেছো কেন, তাকিয়ে দেখি আব্বু পাশে দাঁড়িয়ে আছে ছাতা হাতে। আব্বুকে বললাম এই মাত্র কলেজ থেকে আসলাম, ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখি রাত ৮টা বেজে গেছে। আমিতো পাঁচ টায় কলেজ ত্যাগ করেছি, বাসে সময় লেগেছে ১০ মিনিট। বাকি তিন ঘন্টা এখানে কেমনে কাটল, মনে হচ্ছে এই মাত্রই আসছি।
আব্বুকে বললাম,বাসায় আসতে এতো লেট হলো কেন। আব্বু, অফিসে আজকে মিটিং ছিলো সেই জন্য।
ভিজে শরীর নিয়ে আব্বুর সাথে বাসায় চলে আসলাম। আম্মু আমাকে দেখেই লীলাকৃত্তন গাইতে শুরু করল, কতবার কল দিয়েছি, ফোন ধরস নাই কেনো। বাহিরে গেলে বাসায় আসার কথা মনে থাকে না। যখন বাবা মা হবি, তখন বুঝবি, কতটা চিন্তায় থাকতে হয়। এখন বুঝবি না। বলেই আম্মু কেঁদে ফেলল।
আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বললাম, আম্মু তোমার অন্তু এখন আর ছোট নেই বড় হয়ে গেছে।
আম্মু, এই কয়দিনে কত কি হয়ে গেলে, ভুলে গেছিস।
আম্মুকে শান্ত করে বললাম, আচ্ছা আর লেট হবে না। আর লেট হলেও তোমাকে কল করে জানিয়ে দিবো।
আম্মু চোখ মুছে বলল,খেতে আয়।
খাওয়া শেষে আম্মুর রুমে বসে টিভি দেখতেছি। আম্মু কথা বলতে বলতে এসে বলল, অন্তু কালকে স্টেশনে যেতে হবে তোকে, আমি বললাম কি জন্যে। তুমি কি নানু বাড়ি যাবে নাকি।
আম্মু, নাহ্ মেহজাবিন আসতেছে, ওরে আনতে যেতে হবে। তোর ছোট খালা ফোন করে ছিল। ওর স্কুল বন্ধ তাই কয়েকদিন আমাদের বাসাতেই থাকবে।