মায়াজালের ভূত (৩য় পর্ব) --- আল-আমিন সাজ্জাদ
সকালে ঘুম থেকে উঠে, চলে গেলাম স্টেশনে, মিনিট দশেক পর ট্রেন ভীড়লো স্টেশনে, মিনিট পাঁচেক বসে থাকার পর কল আসলো।
-কিরে অন্তু কই তুই। মেহজাবিন কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। যাসনি কেন,
-কি বলো আমি তো স্টেশনেই বসে আছি, বলেই বামে তাকিয়ে দেখি নবাবজাদী ফুসকা খাচ্ছে আপন মনে। মনে মনে রাগ হলো, হারামজাদী তুমি বসে ফুসকা খাচ্ছো, আর আমাকে বসিয়ে রেখে আম্মুকে ফোন দিচ্ছো।
লস খাওয়ার ভয়ে আর গেলাম না তার কাছে, দোকানদারের দেনা পরিশোধ করতেই ডাক দিলাম।
মেহজাবিন ব্যাগটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল চলো।
অটোতে আসার সময় এক ভাইয়ের দেখা মেলল, বছর দুয়েক আগে দেখা হয়েছিল, তার পর আর দেখা হয়নি।
আমাকে দেখেই বলে ফেলল।
-কিরে অন্তু, কেমন আছস, আর বিয়ে করলি কবে। বড় ভাইদের ভুইলাই গেছস দেখছি। ফরজ কাজ সারলি জানালিও না।
আমি মেহজাবিনের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি, রাগে ধলা মুখ লাল হয়ে গেছে।
বড় ভাইকে থামিয়ে বললাম। ভাইয়া, এটা আমার খালাতো বোন।
-ও আচ্ছা, ঘুরতে গিয়েছিলে নাকি।
-নাহ ভাইয়া এই মাত্র আসলো, স্টেশন থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছি।
পুরো রাস্তায় একটা কথাও বলেনি, মনে মনে আমার বুঝা শেষ। আজকে মায়ের বকা ফিক্সড। কেউ ঠেকাতে পারবে না, যদিও আমার কোন দোষ নাই। আমি মেহজাবিনকে বলতে লাগলাম, আসতে তো কোন সমস্যা হয়নি। খালা কেমন আছে, খালুর শরীর ভাল তো, পরীক্ষা কেমন দিছোস। ও আল্লাহ্ কোনো উওর নাই। মনে হচ্ছে বয়রার সাথে কথা বলতেছি,এমন ভাবে তাকিয়ে আছে, মনে হচ্ছে আমার একটা কথাও শুনেনি।
বাড়িতে এসে মেহজাবিনকে ব্যাগটা দিয়ে বললাম তুমি যাও আমি আসতেছি, ও আল্লাহ মহারানীর জবান খুলে গেছে, চড়া গলায় বলে ফেললেন। কই যান, কোথাও যাওয়া লাগবে না। আগে ভিতরে আসেন।
হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন আন্ধার মহল। মায়ের কাছে কি যেন ভুতুর ভুতুর করল, আম্মু সুন্দর করে বলে দিলো তোমার খাওয়া বন্ধ আজকে, আজকে বাড়ি আসলে পিঠের ছাল থাকবে না।
কি আর করা, কথা গুলো সুন্দর করে হজম করে বেরিয়ে আসলাম। ইতি মধ্যে ফোনটা বেজে উঠল,
-হ্যাঁ বল
- দোস্ত ওই মরদেহটা যে গাছে পাওয়া গিয়েছিলো, সেখানে আরেকটা লাশ পাওয়া গেছে।
- কি বলিস, কার লাশ
-আমি সঠিক জানি না, তবে কে যেন বলছিলো, আমাদের নাইটগার্ডের। মনটা আবুল তাবুল ভাবতে লাগল।
-ওহ যাইহোক কালকে কলেজে গেলেই শুনতে পাবো আসল খবর। কালকে কি কলেজে যাবি।
-হ্যাঁ যাবো তুই আসিস।
-আচ্ছা
সকালে ঘুমটা মহারানীর দেওয়া পানির ছোঁয়াতেই ভাঙ্গছে। আম্মুর পারমিশন নিয়েয় সম্ভবত এ মিশন সাকসেসফুল করেছেন। পুরো এক বালতি পানি পুরো শরীরটা একবারে গোসলের কাজটা সেরে দিয়েছে।
রাগে মেজাজটা বিগড়ে উঠলো, ধমক দিতে গিয়েও দিতে পারেনি, কারণ বাড়ির খাবারটা বন্ধ হতে পারে সেই চিন্তায়।
হাসি ভরা মুখ নিয়ে বললাম, ভালোই করছেন, আপনি পানি না দিলে তো উঠতেই পারতাম না ধন্যবাদ।
-তাইলে আসার সময় আমার জন্যে একবক্স চকলেট নিয়ে আইসেন।
- কিহ কিসের চকলেট, আমার কাছে কোন টাকা পয়সা নাই, আনতে পারবো না , তুই আম্মুর কাছে গিয়ে চা।
- আম্মুর কাছে চামু, ওই যে, ওইটা, দেখছেন কি (ঝাড়ু দেখিয়ে) ।
- আম্মুর আসকারা পেয়ে সাহস বেড়ে গেছে নাকি, যা এখান থেকে। ফকিন্নির মতো চাইতে তোর শরম করে না।
কথা শেষ হতে না হতেই আম্মুকে ডাকা শুরু করলো, ভাত বন্ধ হওয়ার ভয়ে হ্যাঁ বলে দিলাম।
নাস্তা করে কলেজের দিকে রওনা হলাম।
মিনিট বিশেক পরে পৌঁছে গেলাম কলেজে, গিয়ে দেখি এক একজন নায়ক নায়িকার বেশ ধরে আছে। হাতে গিফ্টের বক্স। কাঁধে ব্যাগ থাকলেও মনে হচ্ছে বই নেই। আরেক সোনায় তো ব্যাগ থেকে আয়না বের করে চেহারা দেখতে লাগলো। ফারহানকে জিজ্ঞেস করলাম।
কিরে তোদের এ অবস্থা কেনো, কোথাও যাবি নাকি।
ফারহান উওর দিলো, হুম, জন্মদিনের দাওয়াত আছে, আমাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানাইছে। তুইয়ো যাবি আমাদের সাথে।
আমি তো একদমে একশবার না করে দিলাম।
আমারে দাওয়াত দেয় নাই, আমি যাব না। এখনো কি ছোট আছি নাকি,বিনা দাওয়াত খাব। তোরা যা।
বলেই অন্য দিকে হাঁটা শুরু করলাম। ফারহান ডাক দিয়ে বলল, আরে শালা দাওয়াত টা আমাদের বাড়িতেই, ছোট কাকার মেয়ের জন্মদিন। আয় তরে আমি দাওয়াত দিলাম।
অন্তু- এ-- আগে বলবি না তাহলে, এবার যাওয়া যায়।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ফারহানদের বাসায় পৌঁছাই সবাই। যাওয়ার পরেইতো টাসকি খাইয়া গেলাম। জন্মদিনের কথা শুনে মনে করছিলাম ছোট মানুষের জন্মদিন। এখন তো দেখতেছি বড় গেদি মানুষ। হায় হায়রে আমি যে চকলেট নিছি তাহলে খাবো কেডায়। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম এটা কততম জন্মদিন। ওনি উত্তরে বললেন ১৯তম জন্মদিন।
কে জানতো আমার জন্য ধামাকা অফার অপেক্ষা করতেছে। কেক কাটার সময় জন্মদিনওয়ালীকে দেখে তো কপালের চোঁখ পেটে নেমে গেলো। এইডাতো দেখি মায়া, ফারহানকে জিজ্ঞেস করলাম এইটা তোর কাকাতো বোন।
ফারহান- হুম
আমি- আরে শালা আগে কইবিতো।
ফারহান-কি কমু তরে।
আমি- কিছু না।
সব শেষ করে চলে আসলাম বাড়িতে।
আসতে না আসতেই ফকিন্নিটা কাছে এসে হাজির,
-স্যার আমার চকলেট কই।
ব্যাগে রাখা চকলেটখানা তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ভিতরে চলে গেলাম। পিছন থেকে বলে উঠলেন।
-ধন্যবাদ জনাব, আপনি খুব ভালো মানুষ।
মনে মনে কইলাম, দিলেই ভালো আর না দিলেই ঝাড়ু দেখানো।
রুমটা কেমন যেন আবছা গোছানো লাগতেছিল। মনে হচ্ছে পুরো রুমটা কান্না করে কেউ এরকম করে রেখেছে।
যাই হোক লাইনতো পেয়ে গেছি, মাগার কানেক্ট হওয়া যায় কিভাবে সেইটা ভাবতে লাগলাম। মানে মায়ার বাসাতো চিনে আসলাম, এবার পারমানেন্ট ঢোকার চেষ্টা।
চিন্তা করতে করতেই চায়ের কাপ সামনে হাজির, মিষ্টি সুরে বলতে লাগলেন, নেন ক্লান্ত হয়ে গেছেন, এবার এটা খান।
প্রথমেই ভাবটা নিয়ে নিলাম, না চা খামু না। যা পরে একদিন খামুনি।
কথা শেষ হতে দেরি, আগুন জ্বলতে দেরি হলো না। সাথে সাথেই বলে উঠলেন। এটা কি খাবা, না জোর করে গরাসে ঢেলে দিবো।
নাটক,,,, সিনেমায় পরিনত হওয়ার আগেই কাপটা নিয়ে নিলাম। আর মেহজাবিনকে বললাম যাও খাইতেছি। বলতেই লক্ষী মেয়ের মতো চলে গেল।
মাথাটা হালকা ঝিমঝিম করতে ছিলো, সেইজন্য চায়ে মুখ লাগিয়ে দিলাম। বাহ্ দারুন চা বানায়তো। বলতেই হবে হাতে যাদু আছে|
Website: www.ichchashakti.com E-mail: ichchashaktipublication@gmail.com