1. admin@ichchashakti.com : admin :
শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

মাদকের ভয়াল থাবা ও আমাদের করণীয়

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৭৪ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

পরিবার, সমাজ তথা দেশের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানুষ। মানুষ ই গড়ে তুলছে সভ্য সুন্দর ও উন্নত দেশ। সভ্য মানুষ ছাড়া সভ্য সমাজ বা দেশ কল্পনা করা যায় না। দেশের মানুষ যদি হয় সুশিক্ষিত , আদর্শবান ও কর্মঠ তাহলে একটা সভ্য সুন্দর ও উন্নত দেশ গড়ে তোলা সম্ভব। বিপরীতে নানাবিধ অসংগতিপূর্ণ আদর্শহীন অলস জনগোষ্ঠী জাতি তথা দেশের ক্যান্সার সমতুল্য। আমাদের ছোট ভূ-খন্ডে বসবাস করে বিশাল জনগোষ্ঠী, সে হিসেবে আমরা দ্রুতই উন্নত দেশে পরিনত হতে পারি। এজন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। দূর করতে দল, জাতি, বর্ণ ও ধর্মের ভেদাভেদ।

 

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যে সকল সমস্যা বিদ্যমান তার একটি অন্যতম সমস্যা হচ্ছে মাদকের ভয়াল থাবা। মাদক ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম শহর সবখানে।  মাদকাসক্তি এক ভয়াবহ মরণব্যাধি। দিন দিন মাদকের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। নিষিদ্ধ জগতে অস্ত্রের পর মাদকই সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। বর্তমানে দেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মাদকের কেনাবেচা হয় না। শহর কিংবা  গ্রাম সবখানেই এটি এখন সহজ প্রাপ্য ।

 

দেশে বহুল প্রচলিত মাদকদ্রব্যের মধ্যে গাজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, মদ,  আফিম, হেরোইন, কোকেন, প্যাথেডিন, বিভিন্ন ধরনের ঘুমের ওষুধ ইত্যাদি। এখন নাকি জুতায় লাগানো আঠাও মাদক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ভয়ানক এসব নেশা জাতীয় দ্রব্য সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে গেছে।

আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত ও মিয়ানমারের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবাধে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে আসছে মাদক। আমাদের দেশে মাদক উৎপাদন না হলেও ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ মাদকের বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এশিয়ার মাদক চোরাচালানের প্রধান অঞ্চলগুলোর কেন্দ্রে বাংলাদেশের অবস্থান। এজন্য  আন্তর্জাতিক মাদক কারবারিরাও বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে সহজে ব্যবহার করতে পারছেন। মাদক চোরাকারবারিরা নদীপথকেই মাদক পাচারের নিরাপদ মাধ্যম মনে করছেন। আমাদের দেশের শত শত নদ-নদীর প্রবাহ বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। আর এজন্যই মাদক চোরাকারবারিরা সমুদ্র উপকূল ও জলপথকে মাদক পাচারের উপযুক্ত পথ হিসেবে ব্যবহার করেন। জলপথ ছাড়াও স্থলপথ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে  মাদক পাচার রুট।

 

সহজপ্রাপ্য হওয়ায় বাংলাদেশের যুবসমাজের একটি বিশাল অংশ মাদকের করালগ্রাসে নিমজ্জিত। দিনদিন যুবসমাজের মাদকের প্রতি আসক্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে মাদকাসক্তের প্রায় ৮০ শতাংশই হচ্ছে শিশুকিশোর ও তরুণ-তরুণী। বিশাল সংখ্যক মাদকাসক্তের শিশু-কিশোর ও তরুণ- তরুণীরা সঙ্গদোষ ও বন্ধুবান্ধবদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে, কেউবা  কৌতূহলবশত হয়ে মাদক সেবনের মাধ্যমে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। প্রথমত সিগারেট সেবনের মাধ্যমে আস্তে আস্তে অন্যান্য মাদকের প্রতি আসক্তি বাড়ছে।

 

মাদক সেবনের ফলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ক্ষতিসাধন হয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তির মস্তিষ্ক ও শ্বাসযন্ত্রের কার্যক্ষমতা দিন দিন হ্রাস পেতে থাকে। জীবন বিধ্বংসী ক্ষতিকারক মাদক দ্রব্য সেবনের ফলে যুবসমাজের সামাজিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ঘটছে। মাদক সেবন করতে গিয়ে একসময় এরা জড়িয়ে পড়ছে ছিনতাই, চাঁদাবাজি রাহাজানি সহ  নানাবিধ অপরাপকর্মে। মাদকের টাকা না দেওয়ায় বা পারিবারিক শাসন করতে গিয়ে ছেলেমেয়ের হাতে খুন হচ্ছে  মা-বাবা।

 

মাদকাসক্তের কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মাদকাসক্ত হওয়ার প্রধান কারণ হলো মাদকের সহজপ্রাপ্যতা। এ ছাড়াও পারিবারিক কলহ, বেকারত্ব, চাওয়া পাওয়ার মাঝে অসামঞ্জস্যতা, হতাশা ইত্যাদি কারণেও যুবসমাজ মাদকের প্রতি আসক্ত হচ্ছে। স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়েও মাদক পৌঁছে গেছে । মা-বাবা ও নিজেদের লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রুপ দিতে এসে স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা অর্জন করতে আসা ছেলেমেয়েরা জড়িয়ে পড়ছে মাদকের নেশায়। দিনকে দিন তা বেড়েই চলছে। গ্রাম কিংবা শহর সন্দেহভাজন এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চললেও, স্কুল- কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অভিযান চালানো হয় না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিরাপদে মাদক গ্রহণের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিণত হচ্ছে। বহিরাগতরা নিরাপদে মাদক সেবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোকে বেছে নেয়। ক্যাম্পাসে অবাধে মাদকের বিচরণ সাধারণ শিক্ষার্থীকে মাদক সেবনের প্রতি প্রভাবিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়  মাদকের বিস্তার রোধ করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বহিরাগতের ক্যাম্পাসে অবাধে বিচরণের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের নিয়েই মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মাদক কেনা-বেচা ও সেবনের আস্তানা গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বস্তি এলাকা। বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের রেলের আশেপাশে গড়ে ওঠা বস্তাগুলো। এসব এলাকায় ভবঘুরে, টোকাই মাধ্যমে ছড়াচ্ছে মাদকদ্রব্য। এসব এলাকার আশপাশে ঘরতে গিয়েও অনেক শিশু-কিশোর মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকের এই ভয়াল থাবা থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে হলে গড়ে তুলতে হবে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা। মাদকাসক্তের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে দেশে  মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে। মাদক চোরাচালানকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে মাদক ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মাদক প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠন এনজিও, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম বা অন্যান্য ধর্মের বিশিষ্টজন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব,  পিতামাতা, অভিভাবক, জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। শহর থেকে গ্রাম সবখানে দলমত, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমন্বয়ে মাদক নির্মূল কমিটি করতে হবে। ঝরে পড়াদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি, মাদকের চোরাকারবারি ও অনুপ্রবেশ কঠোরহস্তে বন্ধ করতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে সহযোগিতা ও আদর্শিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে জনগণকে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলবে বলে প্রত্যাশা করি। স্কুল- কলেজে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মাদকের ভয়াবহ  কুফল সম্পর্কে  শিক্ষাদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে মাদক ও মাদকের কুফল বিষয়ক সহপাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আসুন আমরা সুস্থ সুন্দর মাদকমুক্ত একটা সুন্দর দেশ গড়ে তুলতে সকলেই সচেষ্ট হই।

 

লেখক:

এসকে এম হেলাল উদ্দিন

কবি ও সাহিত্য সংগঠক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park