1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০২:২২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

মহাবিপদ — আল-আমিন সাজ্জাদ

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৯৬ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

অনেক দিন পর নাতি নাতনি গুলো এক সাথে বাড়িতে এসেছে । ছোট নাতনি আবদার করে বসে আজকে তাদের গল্প শোনাতে হবে। কি আর করা।
শুরু করে দিলাম নিজ অভিজ্ঞতার গল্প।

অনেকবার বানিজ্য করতে গিয়েছি। কিন্তু এরকম বাজে অভিজ্ঞতা আর দূর্দশায় কখনো পড়িনি।
ভেবেছিলাম আর কখনো বানিজ্য করতে যাবো না। কিন্তু মন আর মানতে চাচ্ছে না। আচ্ছা শেষবারের মতো বানিজ্যটা করেই আসি।
বাজার থেকে সুন্দর সুন্দর জিনিসপত্র কিনলাম।যেগুলোর চাহিদা বিদেশের মাটিতে অনেক । আরো ক’জন সওদাগর জুটিয়ে রওনা দিলাম বিদেশের পানে। যাচ্ছি আর যাচ্ছি। যেতে যেতে বিন্দরঘাস বন্দরে জাহাজ ভিড়ানো হলো। সেখানে নেমে কিছু জিনিসপত্র বিক্রি করলাম। আর পছন্দনীয় কিছু জিনিসপত্র ক্রয় করে আবার অন্য বন্দরের দিকে রওনা শুরু করলাম।

 

কয়েকটি বন্দরে জাহাজ ভিড়িয়ে কেনা বেচা করা হলো। তাতে ভালো পরিমান অর্থই লাভ হলো সকলের।

কদিন যাওয়ার পর হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় বিকট আওয়াজে সবার কান নিস্তব্ধ হয়ে গেল। ধুমকেতু পড়ে জাহাজ ভেঙে লান্ড ভন্ড হয়ে যায়। কে কোথায় আছে কারো কোন হদিস নাই। আমি ভাসতে লাগলাম। কপাল ভালো তাই জাহাজের ভাঙা এক টুকরো এসে কাছে ভীড়ে। সেটাকেই আঁকড়ে ধরে ভাসতে লাগলাম।  পানি এতটাই ঠান্ডা যে নিচের অংশটুকুর অনুভূতি হারিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে হাত পা  জমে বরফ হয়ে গেছে।

 

পাড়ে ভীড়ে ছেঁচড়িয়ে বালুরচরে উঠে,মুখের উপর কলার পাতা দিয়ে বাকি অংশ রোদে শুকাতে দিলাম। রোদের তাপে আবার আগের মতো হয়ে গেল। উঠে হাটতে শুরু করলাম। সামনে শুধু ধু ধু মাঠ দেখা যাচ্ছে। অনেকদূর যাওয়ার পর সামনে একটা রাজবাড়ি দেখতে পেলাম।সেখানে যেতেই কয়েকজন লোক এসে আমাকে প্রশ্ন করতে লাগল। আমি ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। তারা আমাকে অতি যত্নের সাথে ভিতরে নিয়ে গেলেন। বিভিন্ন রকমের খাবার এনে সামনে রাখলেন। তৃপ্তি সহকারে খাবারগুলো খেয়ে নিলাম।

 

মহলটার ভিতরে যেন সুন্দরীদের মেলা বসে আছে । এক একটা দেখতে পরীদের মতো। হাসিতে পুরো মহলটা মাতানো।

বেশ আরামেই দিন কাটাতে লাগলাম। এতোটাই আদর যত্ন করতে লাগল যে বাড়ির কথা ভুলেই গেছি।

হঠাৎ করে একদিন রাজকন্যা বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে। সে নাকি আমাকে ছাড়তে চায় না। আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে।দেখতে অপরুপ সুন্দরী তার উপর আবার রাজকন্যা। সেজন্য দিকবিদিক না তাকিয়ে বিয়েতে রাজি হয়ে গেলাম।
ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করা হলো। সহিসালামতে বিয়েটাও হয়ে গেল। রাতে খাবার খেয়ে ঘুম দিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি। যেখানে ছিলাম, সেখানে আর আমি নেই। রাজবাড়িটা পাহারের উপর চলে গেছে।  চারিদিকে হিরা,মুক্তা, সোনা,রুপা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দেখেইতো মন কেঁদে উঠল। আমি কি রাজকন্যা বিয়ে করলাম। নাকি রাক্ষসকন্যা বিয়ে করলাম। আল্লাহ ভালো জানে।দূর্দশা চাপলে চারিদিক থেকেই চাপে। কপালের লিখন না যায় খন্ডন। দরজার কাছে যেতেই শুনতে পেলাম। আমি ঠ্যাং খামু।আমি ওর মাথা খামু। শুনেই তো নিজের গাল নিজেই থাপরাতে লাগলাম। আমার কে কি খাবে তা নিয়ে ভাগাভাগি করতেছে।

 

বেটি বলে কি না আমাকে ভালোবাসে। ভালোবাসা না ছাই।জানলে কি আর এভাবে বলির পাঠা হতাম। খাবিই যদি তাহলে ভালো করে খা। হাত পা ছিঁড়া ছিঁড়া খাওয়ার কি দরকার। আমার কান্নার  আওয়াজ ধীরে ধীরে করুণ হতে লাগল।

তারা নাকি বিবাহিত মানুষ ছাড়া খায় না। আবার পাগলও নাকি খায় না। আমি একটু মোটাসোটা গায়ে মাংস বেশি সেজন্য নাকি সকলের জিহ্বায় পানি এসেই থাকে।

রাতে বউয়ের সাথে ঘুমাতে পারিনা। চমকে চমকে উঠি। কে জানতো এই হারামজাদি রাক্ষসকন্যা। মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠে দেখি সবাই ঘুমিয়ে আছে। চিন্তা করলাম হীরা মুক্তা নিয়ে এখনই পালাবো। দরজার বাহিরে যেতেই সবাই এসে হাজির। হাত পা বেঁধে বস্তার মতো দরজার সামনেই ফেলে রাখলো। চোরের মতো বন্দীদশাতেই কেটে গেল পনেরো দিন।

 

আজকে নাকি খাবে। আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো একটা ঘরে। গিয়ে দেখি ডাইনোসরের দাঁত দিয়ে কি একটা যেন বানানো। একজন বলতে লাগল, ওরে এটার ভিতর দিয়ে ভাঙ্গিয়ে ছাতু বানিয়ে খাবো। আমি চিৎকার করতে লাগলাম। আর বলতে লাগলাম তরে খামু, ওরে খামু, তরে খামু,ওরে খামু। আমার কথা শুনে সবার মুখ চুট্টা হয়ে গেল।

 

-সারে সব্বনাশ, শালায় তো পাগল হয়ে গেছেরে। এখন কি করমু?
-থাক হুমুন্দিরে চিকিৎসা করে পরে খাওয়া যাবো নে।

কয়েকদিনের জন্য বাঁচলাম। পাগলামিটা বাড়িয়ে করতে লাগলাম। বউয়ের কাঁধে চড়ে নাচা, মাঝে মাঝে জিনিস ভাঙ্গা। এক বুড়োকে ধরে তো দাড়িই ছিঁড়ে ফেললাম। বেচারা ব্যথায় কোকাতে লাগল। সবাইকে নানা ভাবে অত্যাচার করতে থাকি।একদিন আমার হাত পা বেঁধে রোদে শুকাতে দিলো। মনে ভয় ডুকে গেল। এবার শুটকি বানিয়ে খাবে নাকি। সারাদিন রোদে শুকালো। শরীরের অবস্থাটা একদম খারাপ হয়ে গেছে।

 

সন্ধ্যায় একটা ঘরের মধ্যে ফেলে রাখা হলো। হাত পা নাড়াচাড়া করতে পারতেছি না। হুট করে একটা বাচ্চা রাক্ষস এসে চোখের পাতা খুলে বলতেছে আমি চোখ খাবো। আমার তো ওর কথা শুনেই বারোটা বেজে গেছে। কি বলে হারামজাদায়, ও নাকি চোখ খাবে। এবার আর বুঝি রক্ষা নাইরে। কথা বলবো সে শক্তিটাও পাচ্ছি না । অনেক চেষ্টার পর একটু শক্তি পেলাম। আমি বাচ্চার দিকে তাকিয়ে -ওই হারামজাদা তুই আমার চোখ খাবি, আয়। আমি তোর মুন্ডু খামু। বলেই বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম। বাচ্চাটা ভয়ে চিৎকার মেরে অজ্ঞান হয়ে যায।

 

চিৎকারের আওয়াজ শুনে তো সবাই এসে হাজির।একজন এসেই তো ঠাস করে চড় মেরে বসে।এক চড় খেয়ে সাত দিন বেহুশ ছিলাম। হুশ ফিরেই দেখি তিনজন লোহার শিক গরম করতেছে। দুইজন কাঠ কয়লার ব্যবস্থা করতেছে। একজন লোহার কড়াইতে তেল গরম করতেছে। এসব দেখে আমার আর কিছু বুঝার বাকি রইলো না। শালারা এখন চিকেনফ্রাই করে খাবেরে ।

 

আবারো পাগলের মতো করতে লাগলাম।  তিনদিন পর একটা রাক্ষসীর বাচ্চা হলো। সবাই খুশিতে আত্মহারা। নাচ গান হৈ-হুল্লোড় করতে লাগল।  এসে গেল বাহিরে বের হওয়ার সুযোগ। সবাই যখন হয়রান অস্থির হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তখন দিলাম বাহিরের দিকে দৌড়।বাহিরে এসেই দেখি উড়ন্ত ঘোড়া বাঁধা রয়েছে। এক লাফে উপরে উঠেই দিলাম কষে বারি। বারির আঘাতে ঘোড়াতো ফরফর করে উড়তে লাগল। উড়তে উড়তে একটা উপত্যকায় এসে সাগরের কিনারা ঘেঁষে দিলাম লাফ। পানিতে পড়ে ভাসতে থাকলাম। ভাসতে ভাসতে কিনারায় পৌঁছে দেখি বিশাল বড় বন। বনের ভিতরে ডুকে এলোমেলো ঘুরতে লাগলাম।

 

অনেকদূর যাওয়ার পর কিছু মানুষের দেখা মিললো। আমাকে দেখেই তো সবাই খুশি। কাছে যেতেই আদর করতে লাগল। রাতে থাকতেও দিলো। কে জানতো এ শালারাও মানুষ খায়। রাতে সবাই  মিলে পরামর্শ করতে লাগল। এটাকে দিয়ে পোলাও রান্না করে খাবি নাকি খিচুরি রান্না করে খাবি।ওদের কথা শুনে।আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। সবাই যখন গভীর ঘুমে তখন আবার দৌড় শুরু করলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে বনের শেষ প্রান্তে চলে আসলাম।এসে দেখি কিছু দূরে একটা জাহাজ দেখা যাচ্ছে। আমি ইশারা দিয়ে সাহায্য চাইলাম।

 

জাহাজটি তীরে এসে আমাকে উঠিয়ে নিলো।

জাহাজের মালামাল দেখে বুঝতে পারলাম এটা সওদাগরদের জাহাজ। সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম তাদের কাছে। আমার কথা শুনে সবাই অবাক।
টানা একচল্লিশ দিন চলার পর জাহাজ আমাদের বন্দরে ভীড়ে। সহি সালামতে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে যায়।

আমি খুশি হয়ে তিন দিনের খাবারের ব্যবস্থা করে সকলকে বিদায় করে দেই।

তারপর আর বানিজ্য করা হয়নি।

★ মহাবিপদ
★ আল-আমিন সাজ্জাদ

 

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park