বিশাল পৃথিবীর বুকে এতোকিছু থাকা সত্ত্বেও তোমার কাছে আমি শিশির কণার মতো একবিন্দু ভালোবাসা চেয়েছিলাম। আদতে সেই ভালোবাসা পেতে গিয়ে এখন আমি দণ্ডিত অপরাধী। তোমার শহর থেকে অনেক দূরের শহরে আমার বসবাস। বুকের ভিতর এক সমুদ্র কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি। তোমার কথা মনে হতেই বুক ভেসে যায় বিষাদের জলে। মন চাইলেই তোমার সাথে আর কথা বলতে পারিনা। মন চাইলেই তোমার আঙিনায় গভীর প্রণয়ে সাঁতরাতে পারিনা। তোমাকে ভুলতে গেলে আরো বেশি মনে পড়ে। একটা সময় তোমার পুষ্প ঠোঁটের হাসি প্রতিনিয়ত আমাকে গ্রাস করতো। অথচ তোমার সেই হাসির শব্দ এখন আমি ভুলে যাওয়ার পথে। শত চেষ্টা করেও এখন আর মনে করতে পারিনা তোমার সাথে থাকার দিনগুলো কতোটা রোমাঞ্চকর ছিলো।
যেই তোমার সাথে একদিন দেখা না হলে মনটা ছটফট করতো, সেই তুমি আজ আলোকবর্ষ দূরে। আমার পৃথিবীতে তুমিই একমাত্র নারী, যাকে ভালো না বেসে আমি থাকতে পারিনা। আমার মনের সবটা জুড়ে তোমার বসবাস। তোমাকে ছাড়া আর কারো ঠাই নেই আমার এই বুকে৷ শুধু তোমাকে পাওয়ার অপেক্ষায় বেঁচে আছি তোমার বুকে শেষ নিঃশ্বাসটা নিবো বলে। তোমার একবিন্দু ভালোবাসার সংমিশ্রণে স্বয়ং ঈশ্বরকে আমি অবলীলায় ছুঁতে পারি। থামাতে পারি কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডব। বাগানে ফুটে থাকা সমস্ত ফুলের সৌন্দর্য আমি তোমার মাঝে দেখতে পাই। তোমার প্রশস্ত বুক থেকে বগল বরাবর যেতেই শান্তির সুবাতাস শরীর জুড়ে আলতো পরশ মাখে। হেমন্তের পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধে তোমার চুলের খোঁপায় প্রজাপতি বেশে হারিয়ে যেতে মন চায় আঁকাবাঁকা পথে। শাড়ির আঁচল উড়িয়ে তুমি যখন নদীপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকো তখন আমি বিস্ময়ে চেয়ে থাকি তোমার সমস্ত উঠোন জুড়ে৷ পূর্ণিমা চাঁদের চেয়েও লক্ষ গুণে ভরপুর তোমার বাহ্যিক সৌন্দর্য। তোমার স্বতঃস্ফূর্ত মুখটি দেখলেই লজ্জায় অবনত হয় সবুজের সমারোহ।
রাত এলেই তোমার কথা ভাবতে ভাবতে অদৃশ্য এক মৌহ মায়ায় ডুবে যাই আমি। কোনো ভাবেই নিজেকে ফেরাতে পারিনা। ফেরাতে গেলেই আটকে যাই বিনি সুতার বাঁধনে৷ তোমার পাশে বসে গল্প করার মুহূর্তটা অমৃত সমান। কখনো ক্লান্ত অনুভব হয় না তোমার কাছে থাকতে পেরে। যখন তোমার ঠোঁটের স্পর্শ পেতে সামনে পা বাড়িয়েছি তখনি আটকে গেছি বাসনার মায়া জালে। কখনো চাইনি তোমাকে দূরে সরিয়ে দিতে। সবসময় চেয়েছি তুমি আমার পাশে থাকো। আমার হৃদয় ক্যানভাসে তোমার ছবি আঁকো। তুমি চাইলেই আমাকে ছিনিয়ে নিতে পারো। তুমি চাইলেই আমাকে তোমার সহযাত্রী বানাতে পারো। আমার ব্যাকুল মনটা সবসময় তোমার কাছেই পড়ে থাকে। কোনো ভাবেই তাকে ফিরিয়ে নিতে পারিনা। কখনো চাইনি আমার জীবন থেকে তোমাকে হারাতে৷ তবুও তুমি দূরে সরিয়ে দিয়েছো আমাকে৷ অতীতের সব স্মৃতি ভুলে গিয়ে অচেনা মানুষে পরিণত করেছো আমায়।
এখন আর আমার জন্য তোমার মন কাঁদে না। বিষাদের মেঘ ঢেকে যায় না তোমার মনের আকাশ। কতোটা সহজে আমাকে তুমি ভুলে গেছো। আজকাল ফোনে একটা মেসেজ পাঠাতেও ভুলে গেছো তুমি। হয়তো আমার নামটাও তুমি ভুলে গেছো। এটাও হয়তো ভুলে গেছো একদিন আমাদের রোজ দেখা সাক্ষাৎ হতো। মুখোমুখি বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা হতো। খুনসুটি করতে গিয়ে কতোবার না তোমার বকা শুনেছি। কখনো বা মারও খেয়েছি অপরাধের শাস্তিস্বরূপ। তোমার হাতে মার খাওয়াটাও আমি খুব উপভোগ করতাম। এখন তুমি অন্য পৃথিবীর নাগরিকত্ব পেয়েছো৷ সেখানেই গড়ে তুলেছো নিজের বিলাসবহুল অট্টালিকা। বিপরীতে আমি মধ্যবিত্ত হয়ে অভাব অনটনের মাঝে দিনাতিপাত করছি। তোমাকে কাছে না পাওয়াটা ত্রিভুবনে সবচেয়ে বেশি কষ্টের উপলব্ধি বলতে পারো। আমার কোনো আমিত্ব নেই। নেই বিলাসবহুল কোনো বাড়ি গাড়ি। নিতান্তই তুচ্ছ একটা মানুষ আমি। তোমাকে নিয়েই আমি স্বাবলম্বী হতে চেয়েছিলাম। নিজের অবস্থানটাও পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম। অথচ তুমি সেই সুযোগটা দিলে না। মাঝ পথেই আমাকে দূরে সরিয়ে দিলে। বুকে টেনে নিলে না এক চিলতে ভালোবাসা এবং অনুকম্পার বদৌলতে। তোমাকে কাছে না পাওয়ার অসুখে প্রতিনিয়ত আমি রোগগ্রস্থ হয়ে যাচ্ছি। অবনত হচ্ছে শরীরের দৈহিক বৃদ্ধি। ভোজন বিলাসের প্রতি চরম অনীহা। সারাক্ষণ তোমাকে হারানোর শোকে শোকাহত আমি।
আজকাল এভাবে বেঁচে থাকাটা আমার জন্য খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তুমি বুঝলে না কতো বেশি চেয়েছিলাম তোমাকে। তোমাকে পাওয়ার আশায় দ্বিতীয় কারো দিকে ভালোবাসার চোখে তাকাইনি কখনো। অথচ তোমাকে এসব বুঝাতে অক্ষম আমি৷ কখনো বুঝতে চাওনি আমার জীবনে তোমার কতোটা প্রয়োজন। মনের আসনে তোমাকে বসাতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু তুমি চাইলে অন্য পৃথিবী। আমাকে করলে অচেনা সারথি।এখনো বৃষ্টি হলে ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকি। তোমাকে কাছে পাওয়ার প্রগাঢ়তা তখন আরো বেড়ে যায়। মন চায় তোমার সান্নিধ্যে হারিয়ে যাই। ধবল বলাকার মতো উড়ে যাওয়ার সুখে তোমাকে দেখার তৃষ্ণা প্রবল ভাবে বেড়ে যায়। কোনোভাবেই তোমাকে এড়িয়ে চলতে পারিনা। প্রতিটি মুহূর্তে তোমাকে কাছে পাওয়ার আকুলতা বুকের ভিতর ঝড় তোলে। তুমি এটা জানা সত্ত্বেও আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করছো৷ তুমিতো জানো আমার সকল অনুভব তুমি। অথচ সেসবে তোমার কোনো গুরুত্ব নেই। তোমার বিরহ প্রতি মুহূর্তে আমাকে পদানত করে। কোনোভাবেই নিজেকে সামাল দিতে পারিনা। কেন যে তুমি এতো দূরে চলে গেলে ভাবনায় মেলাতে পারিনা। প্রতিদিন ভোর হতেই পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে। জলে ভেসে থাকা শাপলা লালুক নিস্তব্ধে হাসতে থাকে।
মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করতে ছুটে যায় ফুলের কাছে। শিকারী কুকুরের সাথে খেলা করতে করতে সময় চলে যায় বেখেয়ালি মনের অগোচরে। বিড়ালটাও রাগ করতে থাকে কোলে নিয়ে আদর না করলে। এতোসব আয়োজনেও আমার মন ভালো নেই। যেই তোমাকে ছাড়া এক নিমেষ বেঁচে থাকা কঠিন, সেখানে তোমার শূন্যতায় জরাগ্রস্ত হয়ে পড়ে আছি বন্দী কয়েদির মতো। এমন নিঃসঙ্গতা আমার ভালো লাগে না। সারাক্ষণ তোমার উপস্থিতি মন চায়। মনের ইচ্ছেগুলো আজ জট বেঁধেছে। চাঁদ ভুলে গেছে আমার আকাশে জোছনা ছড়াতে। জোনাকি পোকা হারিয়ে ফেলেছে তার মিটিমিটি আলো। দিগন্তে ডুবে যাওয়া সূর্যটাও আজকাল পায়তারা করতে থাকে। মেঘ শূন্য আকাশ এখন প্রখর রোদের হাতছানি দেয় জীবন্মৃত ফসলে। ছোট ছোট আমের গুটিগুলো সহসাই ঝরে যাচ্ছে এলোমেলো বাতাসে। শুকনো কাঁঠালিপাতার শব্দ বড্ড বেসুর হয়ে কানে বাজে। সত্যি বলছি এসবের কিচ্ছু আমার ভালো লাগে না। ভালো লাগে শুধু তোমার সান্নিধ্য। এতোটা দূরে আর থেকো না তুমি। ফিরে এসো অভিমান ভুলে চৈতন্যের খুব কাছাকাছি।
যেন চোখ বুঁজে তোমার উপস্থিতি টের পাই। এতো কষ্টের যন্ত্রণায় আর ভাসতে চাই না। আমি ভিজতে চাই তোমার ভালোবাসার নান্দনিক বৃষ্টিতে। কাছাকাছি থাকতে চাই অবুঝ শিশুর মতো তোমার আঙিনা জুড়ে। কখনো তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাই না। হারাতে চাই না অচেনা ভুবনে। আজকাল মনটা খুব অস্থির হয়ে পড়ে। কেমন যে বিষণ্ণ লাগে সবকিছু। শুধু তোমাকে ছাড়া ভালো থাকার কোনো উপায়ন্তর খুঁজে পাই না। তোমার সাড়া না পেলে বিষাদে ঢেকে যায় আমার অবনী। তবুও তুমি দূরে থাকো প্রাণের উর্বশী। তুমি ডাকলেই ছুটে যাবো তোমার বাহুবন্ধনে। নিমীলিত চিত্তে মিশে যাবো তোমার মাঝে। কখনো দূরে সরিয়ে দিওনা আমাকে। তোমাকে ছাড়া সবকিছু বৃথা লাগে। বেঁচে থাকার ইচ্ছে শক্তি হারিয়ে ফেলি। আমার সব গতিবিধি তুমি। বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র তুমি। তোমার কাছেই আমি যাপিত সুখের মূল সূত্র খুঁজে পাই। কখনো আমাকে তাড়িয়ে দিওনা তোমার মনের উঠোন থেকে। ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে আমি। তোমাকে কাছে না পাওয়ার মুহূর্তগুলো নরক যন্ত্রণার মতো মনে হয়। মনে হয় এই বুঝি আমি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছি।
কবিতার ভাষায় বলতে গেলে শেষ হবে না তোমাকে আমি কতোটা গভীর থেকে ভালোবেসেছি। যখন তোমার কথা খুব মনে পড়ে, তখন ব্যাকুল মন উড়ে যায় তোমার পশ্চিমের আকাশে।