সন্ধ্যার আলো আধারিতে ঢাকা শহরের ব্যস্ত রাস্তা। ইঞ্জিনের গর্জন, হর্ণের চিৎকার, আর মানুষের তাড়া—এই সবকিছুর মাঝেও যেন থেমে থাকে মধ্যবিত্ত জীবন। এই জীবনের গতিপথ একেবারে সুনির্দিষ্ট; সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ, বেঁচে থাকার জন্য লড়াই, আর নিজের ইচ্ছাগুলোকে গলা টিপে মেরে ফেলা।
আনিস, এক তরুণ চাকরিজীবী, রোজ সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে ছোট্ট ভাড়া বাড়ির বারান্দায় দাঁড়ায়। সেদিনও দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু মনের মধ্যে ঝড় চলছিল। অফিসে বসের বকা, বাসার ভাড়া বাকি, মায়ের ওষুধের টাকা—সবকিছুই যেন তার মাথায় ঘুরছিল। আনিসের মধ্যবিত্ত জীবনের গল্পটা কোনো ব্যতিক্রম নয়; এটা যেন একটা চক্রের মতো।
তার স্ত্রী, সুমি, ঘরে বসে আনিসের জন্য চা বানাচ্ছিল। সুমির জীবনটাও ঠিক একইরকম। সকালে ঘুম থেকে উঠে সংসারের কাজ, দুপুরে সন্তানকে পড়ানো, আর রাতে অনন্ত অপেক্ষা। কিন্তু সুমি হাসতে জানে। তার হাসিটাই যেন আনিসের জীবনের সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়।
মধ্যবিত্ত জীবন মানে স্বপ্ন দেখার সাহস থাকলেও তা পূরণের সুযোগ না পাওয়া। আনিসের ইচ্ছা ছিল লেখক হবে। সে স্কুলে ছোট ছোট কবিতা লিখত। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা তাকে চাকরিজীবী বানিয়ে দিয়েছে। তার কবিতার খাতা এখন আলমারির নিচে ধুলো জমে পড়ে আছে।
সুমি জানে তার স্বামীর স্বপ্নের কথা। একদিন সে আনিসের কবিতার খাতা বের করে বলল,
“তোমার কবিতাগুলো সত্যিই সুন্দর। এগুলো সবাইকে দেখাও না কেন?”
আনিস হেসে বলল, “মধ্যবিত্তদের স্বপ্ন দেখার সময় কোথায়? কবিতা লিখে কি ভাড়া দেওয়া যায়?”
সুমি চুপ করে গেল। কিন্তু তার মনের মধ্যে ঠিকই একটা ইচ্ছা জাগল। সে গোপনে আনিসের কবিতা টাইপ করে পাঠিয়ে দিল একটা ছোট কাগজে। কিছুদিন পর আনিসের একটা কবিতা প্রকাশিত হলো। সেই দিন আনিসের চোখে জল ছিল।
মধ্যবিত্ত জীবনের গল্পগুলো এমনই। এখানে দুঃখের সঙ্গে লড়াই করে পাওয়া ছোট ছোট সুখগুলোই বেঁচে থাকার আশার বাতিঘর হয়ে ওঠে। জীবন হয়তো একঘেয়ে, কিন্তু তার ভেতরে থাকা স্বপ্ন আর ভালোবাসাই জীবনকে অর্থ দেয়।
মধ্যবিত্তের জীবন এক মধুর সংগ্রাম, যেখানে প্রতিটি ক্ষুদ্র অর্জনই একেকটা বিজয়ের গল্প।
—–লেখকঃ মোঃ নাছিম প্রাং