1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

ভিন্ন স্থানে গমন —- মোজাম্মেল হক 

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৫৩ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

ভিন্ন স্থানে গমন 

মোজাম্মেল হক      (দৃশ্য-১)

 

[ হ্যারল্ড রিচার্ড ও ফিলিপ এস কার্টিস নামক দুই বন্ধু স্কুলজীবন থেকেই স্বতন্ত্র ও স্বাধীনভাবে কাজ করার দিকে নজর দিয়েছে। পড়ালেখায় তাদের উভয়ের ছিল প্রশংসাজনক। কিন্তু লক্ষ্যের দিক দিয়ে তাঁরা দুজনেই ছিল ভিন্ন। একজনের ইচ্ছা নভোচারী হওয়া। আর অপরজনের ইচ্ছা প্রাণীদের নিয়ে কাজ করা। আজ তাঁরা উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। একজন পড়ালেখা করছে জ্যোর্তিবিজ্ঞান বিষয়ে। আর আরেকজন ঠিক তাঁর স্বপ্ন সম্পর্কিত বিষয় বা প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে পড়াশোনা করছে। তবে উভয়েই আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। একদিন হ্যারল্ড নিত্যদিনের মতোই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসায় ফিরে।

 

সে তাঁর কক্ষে যায়। কিন্তু কক্ষের দরজা খুলতেই প্রচন্ড গন্ধ পায় সে। মনে হচ্ছে যেন কেউ ঘরটিতে বহুমাত্রায় বডি স্প্রে করেছে। কিন্তু এ বাড়িতে সে ও তাঁর বাবা-মা বাদে কেউই থাকেনা। বডি স্প্রের কারণ জিজ্ঞেস করতে মা-বাবার কাছে গেলে সে সারা বাড়িতে মা-বাবাকে খুঁজে পায় না। তাঁর মনে প্রশ্ন হতে থাকে যে, তাহলে বাড়ির দরজাটায় তালা দেওয়া ছিল না কেন? বাবা-মা যদি বাইরে যান, তাহলে প্রতিবারই তালা দিয়ে যান। তাহলে এবার কেন সেই প্রত্যহ নিয়মের ব্যতিক্রম? এ সকল প্রশ্ন হ্যারল্ডের মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। আর তখনই তাঁর মনে পড়ে যে,

বয়সের কারণে হয়তো তাঁরা এ কাজটি করতে ভুলে যেতে পারেন। তাই সে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে এতে। কিন্তু তাঁর মনে তখনো সে প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল যে,

বাড়িতে কোনো বডি স্প্রে না থাকা সত্ত্বেও কে বডি স্প্রে করল? এটি ভাবতে ভাবতে সে রুমে চলে এসে তাঁর ছোটবেলায় পড়া স্মৃতিবিজড়িত সেই টেবিলের কাছে আসে। কিন্তু টেবিলের পিছনে কেউ যেন বিচরণ করছে।

 

এমনটা মনে হতেই সাথে সাথে পেছনের দিকে তাকায় হ্যারল্ড। আর তখনই ঘর অন্ধকার হয়ে যায়। কিছু দেখতে না পেয়ে কোনো একটি বস্তুর সাথে আঘাত লেগে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে হ্যারল্ড। পরে একজন ব্যক্তি পানি ছিটিয়ে দিলে তাঁর চেতনা ফিরে আসে। ]

 

হ্যারল্ড: আপনারা কে? আমি এখন কোথায় অবস্থান করছি?

লোক : কন্নিচিউয়া। ওয়াতাসিনোনামাএহা আকানে ডিরোসুকিও।

হ্যারল্ড: আপনি এসব কি উদ্ভট ভাষায় কথা বলছেন?

লোক : দাইজোবোউ। দাইজোবোউ।

হ্যারল্ড: কোন দুনিয়ায় আমি এসে পড়লাম যে, ভাষারই পার্থক্য করতে পারছি না। (উত্তেজিত হয়ে) তার মানে আমি অন্য কোনো অঞ্চলে চলে এসেছি। (মনে মনে বিড়বিড় করে) কিন্তু বিন্দুমাত্র টের পেলাম না যে, আমি ভিন্ন দেশে চলে এসেছি।

আমাকে ভিন্ন দেশে নিয়ে এলো কে? অপহরণের ঘটনা হওয়া তো আমি যেখানে থাকি সেখানে একেবারেই অসম্ভব। কারণ সেখানে পুলিশবাহিনী কঠোর নজরদারি করে এলাকাটি প্রতিদিন। তাহলে এই ঘটনাটা ঘটা কিভাবে সম্ভবপর হলো?

 

[ এভাবেই উত্তেজিত হতে থাকে হ্যারল্ড। লোকটি তাঁর এ উত্তেজনা দেখে ভাবে যে, বোধহয় ছেলেটি নতুন ও অচেনা জায়গায় এসে ভীত কিংবা উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। ]

 

লোক : (হ্যারল্ডের পাশে বসে) ওয়াতাসি ওয়া গেনকিদেস?

হ্যারল্ড: কি বলছেন? আমি বুঝতে পারছি না। কিসব আজব কথা বলছেন! আমার মস্তকে কিছুই ঢুকছে না।

 

[ হ্যারল্ডের উত্তেজনার মাত্রা বেড়ে গেলে লোকটি বারান্দার দিকে অগ্রসর হয়। হ্যারল্ড কৌতূহলী হয়ে সেখানে যায়। সেখানে গিয়ে সে দেখতে পায় যে, এক সরু পথে পানির প্রবাহ, যেখানে কিনা কাচের ন্যায় স্বচ্ছ পানি প্রবাহিত হচ্ছে। হ্যারল্ড তখন দেখল যে, লোকটি একটি বাঁশের অর্ধেক কাটা অংশ পানির প্রবাহের উপর ফেললো। ফলে পানি বাঁশের অর্ধেক কাটা অংশের মধ্য দিয়ে যেতে লাগলো। আর তখনই লোকটি বাঁশের অর্ধেক কাটা অংশকে অন্যদিকে হেলিয়ে দিলে প্রবাহিত পানি সোজা গিয়ে একটি বাঁশের পাত্রে পড়ে জমা হলো। ]

 

হ্যারল্ড: আপনি এই প্রক্রিয়াটি কার নিকটে থেকে রপ্ত করেছেন?

লোক: দাইজোবোউ। দাইজোবোউ।

 

[ হ্যারল্ড লক্ষ করলো যে, লোকটি কেমন যেন লজ্জা পেতে লাগল। লজ্জায় একটি হাসি ও বাম হাত দিয়ে সোজা চুল নাড়তে লাগলো। হ্যারল্ড কখনো কাউকে লজ্জা পাওয়ার পর এরকম করতে দেখেনি। তাই সে এই ঘটনায় কিছুটা বিব্রত হলো। সে লোকটির আচরণে প্রথমে তো বুঝতেই পেরেছিল না যে, লোকটি লজ্জা পেয়েছে। সে ভেবেছিল যে, বোধহয় লোকটির মাথায় উকুন থাকতে পারে। কিংবা লোকটির উত্তেজিত হয়ে গিয়ে মাথার চুলগুলো আপনার কতকটা মনোরমভাবে পশম তুলনা করে আলতোভাবে নাড়ানাড়ি করছে। হ্যারল্ড লোকটিকে তখন শুধুই একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকল। কিন্তু লোকটি হ্যারল্ডের ভাষা বুঝতে পারছিল না। ]

 

হ্যারল্ড: আমার কথা শুনে আপনি কি লজ্জা পেয়েছেন?

লোক: হেই। সেনসেই নি কেইরেয়ই।

হ্যারল্ড: হ্যাঁ। সেনসিটিভ ইজ কেপ্ট নাও! কোন সংবেদনশীল এবং কিসের সংবেদনশীল? আর এই জিনিসটা আপনি কোথায় রেখেছেন? জিনিসটা বোধহয় নতুন কিছু নাকি? সংবেদনশীল বলতে তো আমি যতদূর জানি কলেবরের নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থান ছাড়া তো আর কিছুই নয়। তা আপনি সংবেদনশীল বলতে কি অনুভূতিকে বুঝিয়েছেন? আপনার কোনো অনুভূতিতে আমি আঘাত করিনি। আর এক মনুষ্যের অনুভূতি কেউ সিন্দুকে তালা দিয়ে রাখতে পারে না।

 

[ হ্যারল্ড এমনভাবে আচরণ করছিল যে, লোকটি তাঁকে তখন শুধুই অপরাধী ভাবে। কারণ অপরাধ ব্যতীত এরকম আচরণ কেউ করেনা এবং কেউ বিনা কারণে এত উত্তেজিত হয়না। লোকটির অন্তরাত্নায় ঠিক এমন ধারণাই উদ্ভূত হচ্ছিল তখন। আর তার সাথে এক অজানা শঙ্কা করছিল সে। কারণ অপরাধী যদি তাঁকে মেরে ফেলে তাঁর সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। ঠিক এরকম চিন্তাই লোকটি করছিল এবং মনে মনে ভয় পাচ্ছিল। তাই সে ইতস্তত না করে দ্রুত এলাকার নিরাপত্তারক্ষীকে ফোন করলো। অপরাধী তখন শুধুই বাঁশের অর্ধেক কাটা অংশটি দেখছিল। তখনকার দিনে আমাদের বর্তমান দুনিয়ার মতো তেমন উন্নত প্রযুক্তি ছিল না। অর্থাৎ লোকটি যে সময়ে বিচরণ করছে সে সময়ে। লোকটির সময়ের বেশিরভাগ বাড়িতেই এক কোণায় তখন রাখা হতো ল্যান্ডফোন। তখন সামান্য সেলুলার ফোনও ছিল না কারোর কাছে। সেলুলার ফোন কি জিনিস তা-ই কেউ জানতো না। অর্থাৎ সেলুলার ফোন তখনকার দিনে সকল মনুষ্যের কাছে এক অপরিচিত জিনিস ছিল। কিন্তু ল্যান্ডফোন ছিল সকলের নিকট সহজলভ্য।

 

সকলের বাড়িতেই সেটি পাওয়া যেত। জরুরী কোনো কথার প্রয়োজন হলে সবাই ল্যান্ডফোনেই ফোন করতো এবং শ্রোতার ল্যান্ডফোনেই ফোন ধরতো। বর্তমান দিনের যে ফোনের ব্যবহার সচরাচর দেখতে পাওয়া যায়না। কারণ প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উন্নতি। যা এই দুনিয়ার জীবনটাকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় কাজগুলোকে সহজ করে দিয়েছে। লোকটি দ্রুত তাঁর ঘরের এক কোণে অর্থাৎ বাড়িটির উত্তর দিকের কোণার ল্যান্ডফোনের নিকটে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীকে ফোন দিয়ে সব ঘটনা বলে দিল। ফিরে এসে লোকটি দেখতে পেল যে, হ্যারল্ড বাঁশের অর্ধেক অংশ নিয়ে খেলা করছে। লোকটিকে দেখামাত্রই হ্যারল্ড তাঁর নিকটে আসার চেষ্টা করে। লোকটি এতে ভীষণ ঘাবড়ে যায় এবং ভাবে যে, বোধহয় তাঁকে এই বাঁশের অর্ধেক অংশের মাধ্যমে পঞ্চত্বপ্রাপ্তি দেওয়া হবে। অমূলক ভীতিতে জর্জরিত লোকটি দ্রুত সেখানে থেকে পালিয়ে যায়। হ্যারল্ড কিছু বুঝতে না পেরে লোকটির পেছনে দৌড়াতে শুরু করে। এদিকে তাঁরা দুজনে দৌড়াতে দৌড়াতে অনেকটা পথ অনায়াসেই পাড়ি দিয়ে দেয়। পথে নিরাপত্তারক্ষী লোকটিকে থামায়। হ্যারল্ডও সাথে সাথে থেমে যায়। অবাকদৃষ্টিতে সে নিরাপত্তারক্ষীকে দেখতে থাকে। ]

 

হ্যারল্ড: আপনি কে?

নিরাপত্তারক্ষী: (হ্যারল্ডের কথা বুঝতে পেরে) আপনি এই লোককে মারতে চেয়েছিলেন?

হ্যারল্ড: লোকটা আজব সব কথা বলছিল। আমি তাঁকে শুধুই বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park